বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফার কর্মসূচি ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ-সহিংসতা ২৩ জনের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে।
রোববার (৪ আগস্ট) বিকেল ৩টা পর্যন্ত স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও হাসপাতালের দায়িত্বরতদের সূত্রে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এর মধ্যে ফেনী ৫ জন। ৩ জন করে নিহত হয়েছেন- রংপুর, ভোলা, কিশোরগঞ্জ, মাগুরায়। ২ জন করে প্রাণ হারিয়েছে মুন্সিগঞ্জ, বগুড়া, রংপুর ও পাবনায়। এছাড়া সিরাজগঞ্জ, কুমিল্লার দেবিদ্বার, জয়পুরহাট ও বরিশালে নিহত হয়েছেন ১ জন করে।
ফেনীতে সহিংসতায় নিহত ৫
ফেনীতে অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থকদের সঙ্গে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে ৫ আন্দোলনকারী নিহত হয়েছেন। রোববার (৪ আগস্ট) দুপুর ২টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী মহিপাল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের নাম ও পরিচয় জানা যায়নি। ফেনী ২৫০ শয্যা জেলারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আসিফ ইকবাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রংপুরে নিহত ৩
রংপুরে দুপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রংপুর পায়রা চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- মাসুম, খায়রুল ইসলাম খসরু ও পরশুরাম থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রসিকের ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হারাধন রায়। এর আগে বেলা ১১টার দিকে শহরজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় দুপক্ষই অবস্থান নেয়।
ভোলায় নিহত ৩
ভোলার নতুন বাজারে আইনশৃঙ্খলনা রক্ষাকারী বাহিনী গুলিতে তিনজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে জসিম উদ্দিন (৭০) নামে একজন ছাতা শ্রমিকের পরিচয় জানা গেলেও দুইজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। তাদের বয়স ২০ থেকে ২২ বছর বলে জানা গেছে। রোববার দুপুর ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে।
মাগুরায় ছাত্রদল নেতাসহ নিহত ৩:
মাগুরায় দফায় দফায় আন্দোলনকারীদের সাথে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে গুলিতে মেহেদী হাসান রাব্বি নামে একজন নিহত হয়েছেন। এছাড়াও পুলিশ সাংবাদিকসহ অন্তত ২৫ জন আহত হবার খবর পাওয়া গেছে। নিহত রাব্বি মাগুরা জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি বলে জানা গেছে। এছাড়াও, সংঘর্ষে সুমন শেখ, ফরহাদ নামের ২ যুবক মারা গেছেন বলেও নিশ্চিত করেছেন চিকিৎসকরা।
মুন্সিগঞ্জে নিহত ২
মুন্সিগঞ্জ শহরের সুপার মার্কেট এলাকায় জড়ো হন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এ সময়, একইস্থানে অবস্থান নেয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। দেখা দেয় উত্তেজনা। দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় গোলাগুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে। একপর্যায়ে সংঘর্ষে দু’জন মারা যান। তাদের পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পরে টিয়ারশেল ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
পাবনায় নিহত ২:
পাবনা শহরের চাতিকমোড় এলাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ করে। এ সময় বিরোধী পক্ষের সাথে চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। একপর্যায়ে গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে। এতে আহত হয় অন্তত ৩০ জন। আর মারা যায় দু’জন। প্রাণহানির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাবনা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক এসএম রুমি।
বগুড়ায় নিহত ২:
বগুড়া সদর ও দুপচাঁচিয়া উপজেলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। দুজনই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা এক দফা দাবির আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বগুড়ার সদরের বড়গোলা এলাকায় বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় পুলিশের সাথে তাদের সংঘর্ষ হয়। পুলিশের গুলিতে আহত হয় আনুমানিক ৩০ বছর বয়সী অজ্ঞাত এক যুবক। পরে তাকে উদ্ধার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
এছাড়া দুপচাঁচিয়া উপজেলায় মনিরুল ইসলাম নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। দুপুর ১২টার দিকে মারা যান। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলার সিভিল সার্জন শফিউল আজম। এছাড়া, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আজ আহত হয়ে ১১ জন ভর্তি রয়েছে এবং বিভিন্ন হাসপাতালে ২০ থেকে ২৫ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন।
সিরাজগঞ্জে নিহত ১
সিরাজগঞ্জেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সাথে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় এক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। প্রাথমিকভাবে তার নাম আবদুল লতিফ বলে জানা গেছে। তার বাড়ি শহরের গয়লা এলাকায়। রোববার বেলা আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে নিহত হন তিনি। দু’পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানের সময় লতিফ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে পড়ে যান। তখন ক্ষিপ্ত কর্মীরা তাকে পিটিয়ে হত্যা করে।
সূত্র: যমুনা টিভি ও কালবেলা