আট ম্যাচের পাঁচটিতে রান তাড়া করতে গিয়ে সবকটিতেই হেরেছে খুলনা টাইগার্স। বিপিএলের চলমান আসরে রান তাড়া করে জিততে না পাওয়ার জুজু অবশেষে কাটিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজরা।
সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে ১৫৩ রানের লক্ষ্য তাড়া পাওয়া জয়ে সবচেয়ে বেশি অবদান অবশ্য মিরাজেরই। বল হাতে মাত্র একটি উইকেট নিলেও ব্যাটিংয়ে সেটা পুষিয়ে দিয়েছেন খুলনার অধিনায়ক। আক্রমণাত্বক ব্যাটিংয়ে খেলেছেন ৭০ রানের ইনিংস।
মিরাজের এমন ব্যাটিংয়ে সিলেটের বিপক্ষে ৬ উইকেটের জয় পেয়েছে খুলনা। সেই সঙ্গে প্লে-অফের দৌড়ে আরও খানিকটা এগিয়ে গেলেন মিরাজ-নাইমরা।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম পর্বের শেষ ম্যাচে আগে ব্যাট করতে নেমে খুলনাকে ১৫৩ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দেয় সিলেট। যার জবাব দিতে নেমে রীতিমত উড়ন্ত সূচনাই পায় মেহেদী মিরাজের দল। সেরা চারে থাকার লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে পঞ্চম ওভারেই পঞ্চাশ ছুঁয়ে ফেলে দলটি, কোনো উইকেট না হারিয়েই।
গত কয়েকটা ম্যাচে ওয়ান ডাউনে নেমে মোটামুটি সফলতা পেলেও আজ রীতিমত ওপেন করতে নেমেছেন অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। তাতে অবশ্য বেশ সফলই বলতে হবে তাকে।
নাইম শেখ খানিকটা দেখেশুনে খেললেও পুরোদমে আক্রমণাত্বক ব্যাটিং করেছেন অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। রিস টপলি, রুয়েল মিয়া, নিহাদ উজ জামান এবং সুমন খানদের ওপর সমানভাবে চড়াও হন তিনি। যার ফলে পাওয়ার প্লেতে কোনো উইকেট না হারিয়েই ৫৯ রান তুলে ফেলে খুলনা।
এদিন ওপেনিংয়ে ফিরে শুরু থেকেই আক্রমণাত্বক ব্যাটিং করছিলেন মিরাজ। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে অবশ্য আউট হতে পারতেন তিনি। তবে অনেকটা দৌড়ে গিয়ে ক্যাচ লুফে নিতে পারেননি আরিফুল হক। জীবন পেয়ে দারুণ এক হাফ সেঞ্চুরি করেছেন ডানহাতি এই ওপেনার। সামিউল্লাহ শেনওয়ারির বলে স্কয়ার অব দ্য উইকেট দিয়ে চার মেরে ২৯ বলেই পঞ্চাশ ছুঁয়েছেন মিরাজ।
আগের ম্যাচে ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে ৭৭ রানের ইনিংস খেললেও দলকে জেতাতে পারেননি নাইম শেখ। সেই ম্যাচের মতো এদিনও শুরুটা করেছিলেন দেখেশুনে। পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার পর জড়তা কাটিয়ে হাতখুলে খেলতে গিয়েই নিজের উইকেট বিলিয়ে দিয়েছেন বাঁহাতি এই ওপেনার।
নিহাদ উজ জামানের শর্ট ডেলিভারিতে ব্যাকফুটে গিয়ে ডিপ মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা মারতে চেয়েছিলেন নাইম। তবে টাইমিংয়ে গড়বড় হওয়ায় কাদিম অ্যালাইনকে ক্যাচ দিয়েছেন ২০ রান করা নাইম।
তার বিদায়ে ক্রিজে এসে ব্যাট হাতে সুবিধা করতে পারলেন না আফিফ হোসেনও। দারুণ ছন্দে থাকলেও সামিউল্লাহ শেনওয়ারিকে উইকেট দিয়ে গেছেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। আফগান লেগ স্পিনারের শর্ট ডেলিভারিতে স্কয়ার লেগ দিয়ে ছক্কা মারতে গিয়ে জাকের আলী অনিককে ক্যাচ দিয়েছেন মাত্র ৩ রান করা আফিফ।
এরপরও সিলেটের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন মিরাজ। তবে ৭০ রানের ইনিংস খেলা এই ডানহাতি ব্যাটারকে ফিরিয়ে সিলেটকে খানিকটা স্বস্তি দেন নিহাদ উজ জামান। এই বাঁহাতি স্পিনারের বলে টিপু সুলতানের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন খুলনার অধিনায়ক। তার ৫০ বলের ইনিংসে ছিল ৮টি চারের সঙ্গে দুটি ছয়ের মার।
এরপর শুধু অঙ্কনকে হারিয়েই উইলিয়াম বোসিস্ত ও আলেক্স রসের ব্যাটে চড়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় খুলনা। রস ২৩ বলে ২০ করলেও মাত্র ১১ বলে একটি করে চার-ছয়ে ১৯ রানে অপরাজিত থাকেন বোসিস্ত। যাতে এক বল হাতে রেখেই ৬ উইকেটের জয় নিশ্চিত করে খুলনা।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই রনি তালুকদারকে হারিয়ে ফেলে সিলেট। খুলনার অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজের শিকার হয়ে এদিন রানের খাতা খুলতে ব্যর্থ হন সিলেটের ওপেনার।
তবে দ্বিতীয় উইকেটে হাল ধরেন আরেক ওপেনার জর্জ মুনসে ও জাকির হাসান। দুজনের ৭৪ রানের জুটি ভাঙে ৮ম ওভারে, মুনসে বিদায় নিলে। সাজঘরে ফেরার আগে ৩২ বলে ৫৮ রান করেন এই স্কটিশ ক্রিকেটার, ৬টি চার ও ৪টি ছক্কার সহায়তায়।
এরপর একাই লড়াই চালিয়ে যান জাকির। যদিও সতীর্থদের সঙ্গ পাননি এই বাঁহাতি। সিলেটও নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে। ৩২ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪৪ রান করে জাকির বিদায় নিলে থমকে যায় রানের গতি।
মুনসে ও জাকিরের পর দুই অঙ্কে যেতে পেরেছেন শুধু সুমন খান। শেষদিকে নেমে ৫ বলে ১২ রানের ক্যামিও খেলেন এই পেসার। শেষপর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে সিলেটের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৫২ রান।
খুলনার পক্ষে হাসান মাহমুদ, আবু হায়দার রনি ও সালমান ইরশাদ দুটি করে উইকেট শিকার করেন। একটি করে উইকেট পান মেহেদী হাসান মিরাজ, আমের জামাল ও নাসুম আহমেদ।