তাঁর বাড়ি সিলেটে হলেও নগরের ভোটারই ছিলেন না। অথচ তিনি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, এ ঘোষণাটাই ছিল একটা বড় চমক। তাই বিষয়টি আলোদা আলোচনার জন্ম দেয় সিলেটে। অনেকে বিষয়টিকে পাত্তাও দেননি সেভাবে, উড়িয়ে দিয়েছেন। তবে সবাইকে চমকে রেখেই তিনি দলীয় প্রার্থীতা নিজের করে নিয়েছেন। আসন্ন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীই হচ্ছেন নৌকার মাঝি।
সিলেট সিটি করপোরেশনে মেয়রপদে নৌকা প্রতীকের প্রত্যাশী ছিলেন ১০ জন। তিনি ছাড়া বাকি নয় জন হচ্ছেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, সিসিক কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্মসম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক এটিএমএ হাসান জেবুল, আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের ছেলে ডা. আরমান আহমদ শিপলু, মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা প্রিন্স সদরুজ্জামান চৌধুরী ও ক্রীড়া সংগঠক মাহিউদ্দিন আহমদ সেলিম। তাদের তুলনায় সিটি করপোরেশনে নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় নবীন ছিলেন আনোয়ারুজ্জামান। এবারই প্রথম মনোনয়ন চেয়েছিলেন তিনি। আর প্রথমবারেই বাজিমাত করে ফেললেন। আগামী ২১ জুন সিলেটে নৌকার মাঝি হয়ে বৈঠাটা ধরবেন।
মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সবাই অতীতেও আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। তাদের তুলনায় সিটি করপোরেশনে নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় নবীন ছিলেন আনোয়ারুজ্জামান। এবারই প্রথম মনোনয়ন চেয়েছিলেন তিনি। আর প্রথমবারেই বাজিমাত করে ফেললেন। আগামী ২১ জুন সিলেটে নৌকার মাঝি হয়ে বৈঠাটা ধরবেন তিনিই।
সিটি নির্বাচনে প্রথমবার আলোচনায় এলেও আনোরুজ্জামান নামটা কিন্তু নতুন নয়। অনেক আগে থেকেই সিলেটের রাজনীতিতে তার পদচারণা ছিল। যুক্তরাজ্য প্রবাসী এই রাজনীতিবিদ লন্ডনে থাকলেও সিলেটের রাজনীতিতে তার একটা অশরীরী প্রভাব লক্ষ্য করা যেত সবসময়। এছাড়া ‘আনোয়ারুজ্জামান গ্রুপ’ নামে তার একটি বলয়ের অস্তিত্বও সিলেটে রয়েছে।
সেটা দেখা গেছে ২০১৪ ও ২০১৯ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। আনোয়ারুজ্জামানের গ্রামের বাড়ি সিলেট জেলার বিশ্বনাথে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ আসনের উপজেলায় এটি। ২০০৯ সালের সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী শফিকুর রহমান চৌধুরী। তবে পরের দুটি নির্বাচনে দল থেকে আর মনোনয়ন চেয়েও পাননি তিনি। আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয় মহাজোটের দল জাতীয় পার্টিকে। তবে শফিকুর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে মনোনয়নের প্রতিযোগিতায় শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছিলেন তিনি।
দল মনোনয়ন না দেওয়ায় আনোয়ারুজ্জামানও সেই আসনে আর প্রার্থী হতে পারেননি। তবে মাস দুয়েক আগে তিনি হঠাৎ সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন বলে ঘোষণা দেন। আওয়ামী লীগের হাই কমান্ড থেকে তিনি এই নির্দেশনা পেয়েছেন বলেও দাবি করেছিলেন।
তবে আনোয়ারুজ্জামানের এমন দাবি হেসে উড়িয়ে দিয়েছেন অনেকে। অনেকেই বিষয়টি আমলেও নেননি। তবে ব্যতিক্রম চিত্রও লক্ষ্য করা গেছে। তিনি সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন, এমন ঘোষণার পর অনেক ছাত্র নেতাদের তার ছায়াতলে আসতে দেখা গেছে।
আনোয়ারুজ্জামানকে মেয়র হিসেবে দেখতে চেয় দাবি জানিয়ে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজের চৌহাট্টা এলাকায় টানানো ব্যানারটি এখনও ঝুলছে। এছাড়া আজ নৌকার প্রার্থী হিসেবে তার নাম ঘোষণার পর উচ্ছাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলামকে।
তবে মেয়র প্রার্থী হিসেবে তার নাম ঘোষণার আগে থেকেই তার দাবি ছিল, তিনিই হচ্ছেন নৌকার মাঝি। তারপর সিলেটে যেদিন নামলেন, সেদিন সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মীকেই দেখা যায়নি ওসমানী বিমানবন্দরে। তবে ব্যতিক্রম ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।
দলীয় নেতাকর্মীদের পূর্ণ সমর্থন না পেলেও সিলেটে সিটি নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন ঠিকই জিতে নিয়েছেন তিনি। এবার সিলেটে নগর জয়ের লক্ষ্য লন্ডনী আনোয়ারুজ্জামানের।