পাঁচ হাজার টাকায় মাসে চার হাজার টাকা অর্থাৎ ৮০ শতাংশ সুদ দেওয়ার শর্তে ঋণ নিয়েছিলেন রানী বেগমের স্বামী। সুদ হিসাবে গত দুই বছরে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন তিনি। এর আগে গত বছর জন্ম নেওয়া তার এক দিন বয়সী নবজাতককে বিক্রি করে সুদ উসুল করেন কারবারি। সেই নবজাতককে উদ্ধার করেছে পুলিশ। শিশুটিকে কিনে নেওয়া এক নারীকেও আটক করা হয় এ সময়।
আজ রবিবার নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) নাজমুল হাসান সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর থানার দক্ষিণপাশা গ্রামে অভিযান চালিয়ে বাচ্চাটি উদ্ধার করা হয়।
জানা গেছে, শিশুটির মা রানী বেগম সপরিবারে ফতুল্লা থানার আলীগঞ্জে পিডব্লিউডি কলোনিতে থাকেন। তিনি পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালি থানার হান্নান চৌকিদারের স্ত্রী। ভাগ্যের সন্ধানে আসেন নারায়ণগঞ্জে। ঋণ শোধ না হলে মারধরের ভয়ে নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে পালান নির্মাণশ্রমিক হান্নান।
কলোনির সুদের কারবারি মো. আজাদের বাড়িতে ভাড়া থাকেন রানী বেগম। আজাদের ছোট মেয়ে লাকি বেগমের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছিলেন হান্নান। তার কাছ থেকে লাকি বেগম ও তার স্বামী হজরত আলী ঋণ বাবদ কাগজে সই রাখেন। সেই কাগজের ভয় দেখিয়ে রানী-হান্নানের মুখ বন্ধ রাখেন বলে তারা পুলিশের কাছে যাননি।
সম্প্রতি ফতুল্লা থানায় বেশ কিছু অভিযোগ জমা পড়ে লাকি বেগম ও তার স্বামী হজরত আলীর বিরুদ্ধে। এরপরই তারা এলাকা ছেড়ে পালান।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত নামে পুলিশ। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর থানার দক্ষিণপাশা গ্রামে অভিযান চালিয়ে বাচ্চাটি উদ্ধার করি। এ সময় রানু বেগমকে আটক করি।’
আটক রানু বেগম মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানার দক্ষিণপাশার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর মিয়ার স্ত্রী।
রানু বেগমের এক মেয়ে ও এক প্রতিবন্ধী ছেলে রয়েছে। তিনি একটি ছেলে দত্তক বা কেনার আগ্রহ জানিয়েছিলেন পরিচিতজনদের। রানু জানান, বছর খানেক আগে ৬০ হাজার টাকা দিয়ে বাচ্চাটি কেনেন তিনি। নাম রাখেন ইউসুফ।
রানী বেগম জানান, দুই বছর আগে লাকী বেগমের কাছ থেকে তিনি পাঁচ হাজার টাকা ঋণ নেন। দুই বছরে ওই টাকার বিপরীতে তাকে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা দেন। এক বছর আগে সুদের টাকা পরিশোধের জন্য তার এক দিনের সন্তানকে বিক্রি করে পুরো টাকা নেন লাকী বেগম। এরপরও গত ১৪ এপ্রিল লাকী বেগম সুদসহ ১ লাখ ৩ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে তাদের মারধর করা হবে বলে হুমকি দেন। এ ঘটনায় তিনি ফতুল্লা থানার শরণাপন্ন হন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত পাঁচ বছর ধরে এ ধরনের সুদের কারবার চালাচ্ছে লাকির পরিবার। তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তার বাবা মো. আজাদ ও স্বামী হজরত আলী। আজাদের দাবি, তিনি সোহরাওয়ার্দী স্মৃতি মিলনায়তনের পাহারাদার আর মেয়ের জামাই হজরত আলী প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে পরিচ্ছন্নতাকর্মী।
সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজের সুবাদে আজাদ ও আলী দরিদ্রদের তটস্থ রাখতেন। বিশেষ করে তাদের কাছ থেকে সুদে টাকা নিয়ে অনেকে সর্বস্বান্ত হয়েছে।ঢাকাটাইমস