বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড়টি ভয়ংকর রূপ ধারণ করে ২২ থেকে ২৪ অক্টোবরের মধ্যে উপকূলে আঘাত হানতে পারে। আবহাওয়াবিদদের ধারণা, ক্ষয়ক্ষতির দিক দিয়ে এই ঝড়টি সিডরের মতোই ভয়াবহ হতে পারে।
শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল গ্লোবাল ফোরকাস্ট সিস্টেম (জিএফএস) জানিয়েছে, সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টি আন্দামান-নিকোবার দীপপুঞ্জ থেকে পশ্চিম দিকে ভারতের ওড়িশা ও অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের মাঝামাঝি উপকূলের দিকে অগ্রসর হলে অপেক্ষাকৃত দুর্বল হয়ে উপকূলে আঘাত হানবে। কিন্তু এটি যদি আন্দামান-নিকোবার দ্বীপপুঞ্জ থেকে উত্তর দিকে বাংলাদেশের বরিশাল ও খুলনা বিভাগের উপকূলীয় এলাকায় এগিয়ে যায় এবং স্থলভাবে আঘাত হানে, তবে সেটি অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হিসেবে আঘাত হানবে। অর্থাৎ ঘূর্ণিঝড়টির শক্তি নির্ভর করবে এটি বাংলাদেশ নাকি ভারতের উপকূলে আঘাত করছে তার ওপর।
কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক গবেষক মোস্তফা কামাল জানান, অক্টোবরের ১৮ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে একটি সুপার সাইক্লোন সৃষ্টির আশঙ্কার কথা নির্দেশ করছে আমেরিকার আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল গ্লোবাল ফোরকাস্ট সিস্টেম বা সংক্ষেপে জিএফএস।
তিনি বলেন, ঘুর্ণিঝড়টির গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণ করে মনে হচ্ছে ঘূর্ণিঝড় আম্পান স্থলভাগের যেসব এলাকায় আঘাত হেনেছিল, সিত্রাং প্রায় একই এলাকায় আঘাত হানতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টির কারণে সমুদ্র পৃষ্ঠের বায়ুচাপ ৯৪১ মিলিবার পর্যন্ত নেমে যেতে পারে; সেই সঙ্গে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২১০ থেকে ২৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠতে পারে। এই গতিবেগে উপকূলে আঘাত হানলে ২০০৭ সালের সিডরের চেয়ে কম ক্ষয়ক্ষতি হবে না।
এই আবহাওয়া গবেষক আরও জানান, অক্টোবরের ২৫ তারিখ অমাবস্যা। ফলে সম্ভাব্য এই ঘূর্ণিঝড়টি যদি অক্টোবরের ২২ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যে স্থলভাগে আঘাত করে, তবে যে স্থানে আঘাত করবে সেই স্থানের উপকূলীয় এলাকা লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রায় শতভাগ। এটি যে স্থানে আঘাত করবে সেই স্থানের উপকূলীয় এলাকায় ১৫ থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসও হতে পারে।
সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টি প্রসঙ্গে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেন, জিএফএস বলেছে, ১৭ অক্টোবর একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হবে। যেটা পরবর্তী সময়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়ে ঝড়ে রূপ নেবে। ওই ঝড় ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ হয়ে পশ্চিমবঙ্গ ও আমাদের সুন্দরবনের কিছু অংশে আঘাত হানতে পারে।
তিনি বলেন, আমাদের আবহাওয়াবিদরা বলেছেন, এটি আরও পর্যবেক্ষণ করতে হবে। বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ ও লঘুচাপ এখনও সৃষ্টি হয়নি। এ বিষয়ে আমরা সতর্ক আছি। উপকূলে বার্তা পৌঁছে গেছে, প্রস্তুত রাখা হয়েছে আশ্রয়ণ কেন্দ্র।