Monday , 1 July 2024
শিরোনাম

সেই এনবিআর কর্মকর্তার স্ত্রী ও শ্বশুর-শাশুড়ির নামেও অঢেল সম্পদ

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ১ম সচিব (কর) কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল তার স্ত্রী, শ্বশুর ও তার স্বজনদের ১৯টি ব্যাংক ও ১টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হিসাবে জমা থাকা অর্থের পরিমাণ ৬ কোটি ৯৬ লাখ ৫০ হাজার ৯০৮ টাকা। এছাড়া শ্বশুর আহমেদ আলীর নামে রাজধানীর রমনা এলাকায় গত বছর অক্টোবরে একটি ফ্ল্যাট কেনা হয়, যার মূল্য দেখানো হয় ৯৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া শাশুড়ি মমতাজ বেগমের নামে ২০২২ সালে খিলগাঁওয়ে ১০ কাঠার একটি প্লট কেনা হয়। দলিল মূল্য ৫২ লাখ টাকা।

যদিও ফয়সাল ও তার পরিবারের সদস্যের নামে থাকা ব্যাংক হিসাব ও সঞ্চয়পত্রের বিবরণও আদালতে জমা দিয়েছে দুদক। এতে দেখা যায়, ফয়সাল, তার স্ত্রী ও শ্বশুরের নামে ৫০ লাখ টাকা করে সঞ্চয়পত্র রয়েছে। এর বাইরে তার স্বজনদের নামেও সঞ্চয়পত্র রয়েছে। দুদক বলেছে, তাদের নামে থাকা সঞ্চয়পত্রের মোট অর্থের পরিমাণ ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।

এর আগে স্ত্রীসহ তার নামে-বেনামে থাকা সব স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক (জব্দ) ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজের (অবরুদ্ধ) আদেশ দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (২৮ জুন) দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত এ আদেশ দেন।

দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালসহ ১৪ জনের ৮৭টি ব্যাংক হিসাবে থাকা ছয় কোটি ৯৬ লাখ টাকা ফ্রিজ করেছেন আদালত। পাশাপাশি ফয়সালসহ সাতজনের নামে থাকা ১৫টি সঞ্চয়পত্রে থাকা দুই কোটি ৫৫ লাখ টাকা অবরুদ্ধ করা হয়েছে।

সংস্থাটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ফয়সাল ও তার স্ত্রীর নামে থাকা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জে ৫ কাঠার দুটি প্লট, শ্বশুরের নামে থাকা ঢাকার রমনা এলাকায় একটি ফ্ল্যাট, খিলগাঁওয়ে শাশুড়ির নামে ১০ কাঠা প্লট জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া ফয়সাল ও তার আত্মীয়স্বজনের নামে থাকা ১৯টি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৮৭টি হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। আদালতের আদেশে বলা হয়, এই জব্দের আদেশ কার্যকর থাকা অবস্থায় এসব সম্পদ হস্তান্তর বা বিনিময় করা যাবে না।

আদালতে জমা দেয়া দুদকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের জুনে রাজধানীর ভাটারা এলাকায় ফয়সালের নামে পাঁচ কাঠার একটি প্লট কেনা হয়। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে তার নামে আলাদা চারটি দলিলে জমি কেনা হয়। এসব সম্পদের দলিল মূল্য দেখানো হয় ৪০ লাখ টাকার বেশি। গত বছর রাজধানীর ভাটারা এলাকায় ফয়সালের স্ত্রী আফসানা জেসমিনের নামে কেনা হয় পাঁচ কাঠার প্লট। প্লট কেনার অর্থ (৭৫ লাখ টাকা) পরিশোধ করা হয়েছে মাহমুদা হাসানের নামে থাকা একটি ব্যাংক হিসাব থেকে। এর চার বছর আগে স্ত্রীর নামে একই এলাকায় আরও পাঁচ কাঠার একটি প্লট কেনা হয়। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জেও স্ত্রীর নামে জমি রয়েছে। এসব সম্পদের দলিল মূল্য দেখানো হয়েছে ৪২ লাখ টাকা।

আদালতের আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আদালতকে জানিয়েছেন, কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে বদলি–বাণিজ্য ও আয়করদাতাদের ভয় দেখিয়ে অর্থ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে এক হাজার কোটি টাকা অর্থ আত্মসাৎসহ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আছে। তার ও পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অপরাধলব্ধ আয়ের প্রকৃতি, উৎস, অবস্থান, মালিকানা গোপন করে মানি লন্ডারিং অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ অনুসন্ধান চলছে।

দুদকের পিপি মোশারফ হোসেন কাজল গণমাধ্যমকে বলেন, এনবিআরের প্রথম সচিব কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক বনে গেছেন। এ বিষয়ে দুদক অনুসন্ধান করছে। প্রাথমিকভাবে দুদকের অনুসন্ধান দল ঢাকায় তার ফ্ল্যাট, প্লট, সঞ্চয়পত্রসহ ১৬ কোটি টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের খোঁজ পেয়েছে। এসব সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধ করার জন্য বৃহস্পতিবার দুদকের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করেছেন।

অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক মো. মোস্তাফিজ আদালতকে লিখিতভাবে জানান, এনবিআর কর্মকর্তা আবু মাহমুদ ফয়সাল সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঘুষ লেনদেন করেছেন। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত আয়ের উৎস গোপনের জন্য নিজের নামসহ তার আত্মীয়স্বজনের নামে ৭০০টির বেশি হিসাব খোলেন। উদ্দেশ্য হচ্ছে, অপরাধলব্ধ আয়ের উৎস গোপন করা।

Check Also

মেট্রোরেলের টিকিটে ভ্যাট বসছে কাল

মেট্রোরেলের টিকিটে আগামীকাল সোমবার (১ জুলাই) থেকে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x