কাজী আশিকুর রহমান :ঢাকার আশুলিয়ায় সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কার করতে গিয়ে তিন শ্রমিক নিহতের ঘটনায় রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। এই দুর্ঘটনাকে অনেকেই পরিকল্পিত হত্যা বলে দাবি করেছেন। শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনায় দোষীদের শাস্তি, গ্রেপ্তার ও নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন।
নিহত শ্রমিকেরা হলেন- ব্রাক্বাণড়িয়ার নাসিরনগর গ্রামের শহীদের ছেলে পরিচ্ছন্নতাকর্মী মিঠু (১৮), রংপুরের গঙ্গাচড়ার ফেরদৌস আলীর ছেলে পোশাক শ্রমিক রাকিব (২২) ও খুলনার বাটিয়াপড়ার নূর ইসলাম শিকদারের ছেলে পোশাক শ্রমিক মোহাম্মদ আলী (২৬)। এরমধ্যে রাকিব ও মোহাম্মদ আলী আল রহমান নিট ফ্যাশন্স (বিডি) লিমিটেড নামে একটি পোশাক কারখানায় অপারেটর হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। তারা আশুলিয়ায় ভাড়া বাসায় থাকতেন।
জানা গেছে, বুধবার বিকেল তিনটার দিকে আশুলিয়ার ইয়ারপুরের শিমুলতলায় অবস্থিত আল রহমান নিট ফ্যাশন্স (বিডি) লিমিটেড নামের পোশাক কারখানার সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কার করতে নামেন একজন পরিচ্ছন্ন শ্রমিক। কয়েকঘণ্টা তিনি নিখোঁজ থাকার পর জোরপূর্বক গার্মেন্টেসের আরও দুই শ্রমিককে সেপটিক ট্যাংকে নামানো হয়। এরপর তারাও ফিরে আসেননি। এ ঘটনায় গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ ফায়ার সর্ভিসকে খবর দিতে গড়িমসি করেন। অবশেষে রাত ১০টার দিকে একে একে তিনজনের লাশ উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।
তিন শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনাকে প্রাথমিকভাবে কারখানা কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনা বললেও বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকদের দাবি এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
বৃহস্পতিবার আশুলিয়ার শিমুলতলায় শ্রমিক নিহতের ঘটনায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন। এ সময় বিভিন্ন শ্রমিক নেতারা বলেন, মালিকের উদাসীনতার কারণে একজন পরিচ্ছন্ন কর্মী ও কারখানায় কর্মরত দুইজন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। তারা কিভাবে সেপটিক ট্যাংকের ভিতরে গেল এটা তাদের প্রশ্ন?
শ্রমিক নেতা সারোয়ার বলেন, শ্রমিকদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে সেপটিক ট্যাংকে নামিয়ে তাদের হত্যা করেছে আল রহমান নিট ফ্যাশন্স (বিডি) লিমিটেড। অপরাধীদের এখনও গ্রেপ্তার করা হয়নি। ভুক্তভোগী অসহায় পরিবারকে ক্ষতিপুরণ না দিলে তাদের ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টের সাভার, আশুলিয়া, ধামরাই শিল্পঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক জীবন আহমেদ বলেন, এই দুর্ঘটনাকে আমরা অন্য চোখে দেখছি। একজন পরিচ্ছন্ন শ্রমিক সেপটিক ট্যাংকে নেমে ফিরে না আসার পরে কেন যোর করে ওই দুই অপরেটরকে নামানো হলো তা রহস্যজনক। ঘটনাটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড হতে পারে। এ ব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্ত করে পুলিশ দোষীদের শাস্তির আওতায় আনবে এটাই সকলের দাবি।
নিহত শ্রমিকদের উদ্ধারকারী দলের ফায়ার ফাইটার মিজানুর রহমান বলেন, একজন পরিচ্ছন্ন শ্রমিক নিখোঁজ বা নিহতের খবর শুনে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে যাই। যাওয়ার প্রাক্কালে আমরা গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষকে বলি যে, সেপটিক ট্যাংকে যাতে আর কেউ না নামে। এরপরেও তারা না বুঝেই আরও দুইজনকে সেপটিক ট্যাংকে নামিয়েছেন।
এ রিপোর্ট লেখার সময় আশুলিয়া থানায় যোগাযোগ করা হলে থানার ডিউটি অফিসার ও সেরেস্তায় এ সংক্রান্ত কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
আশুলিয়া থানার এসআই সুব্রত রায় জানান, ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত তিন শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করে পোস্টমর্টেম করা হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন আছে। তবে, নিহতদের পক্ষ থেকে কেউ থানায় মামলা করতে আসেনি।