কুষ্টিয়া শহরের পুলিশ লাইন সংলগ্ন গীর্জানাথ মজুমদার লেনের একটি ভবনের নিচতলা থেকে নূরজাহান পারভিন মিনু (৪২) নামে এক গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করেছে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ। তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার ও ইলেকট্রনিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নজরুল ইসলামের স্ত্রী।
এ শিক্ষকের বিরুদ্ধে মাদক গ্রহণ ও স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ এনেছে নিহতের পরিবার।
তবে এ ঘটনায় মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না করলেও কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ একটি অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড করেছেন।
মঙ্গলবার (২৪ মে) সকালে দরজার ছিটকিনি ভেঙে মিনুর পরিবারের সদস্যরা সিলিং ফ্যানে প্যাঁচানো ওড়না এবং ঘরের মেঝেতে লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন। মডেল থানা পুলিশ সুরতহাল প্রস্তুত করে মরদেহ কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
নিহত নূর জাহান পারভিন মিনু মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার মিনাপাড়া গ্রামের মৃত জোবাইর হোসেনের মেয়ে। তিনি ১৬ বছরের দাম্পত্য জীবনে এক মেয়ে ও ছেলের মা ছিলেন। স্বামী-সন্তানদের সঙ্গে মিনু কুষ্টিয়া শহরের পুলিশ লাইনস স্কুলের পেছনে কমলাপুর এলাকায় নিজ বাড়িতেই বসবাস করতেন।
নিহতের আপন বড় ভাই জাহাঙ্গীর হোসেন মিলনের (৪৫) অভিযোগ, ‘বোনের বিয়ের পর থেকে তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ চলে আসছে। মিনুকে প্রায়ই মারধর করতেন মাদকাসক্ত স্বামী নজরুল। কিন্তু ওদের বাচ্চা দুটির মুখের দিকে চেয়ে নির্যাতন সহ্য করেই সংসার করতেন মিনু। সর্বশেষ এই মৃত্যুর ঘটনাটিও বিদ্যমান দাম্পত্য কলহের জেরেই ঘটল। ওকে মেরে ফেলে ঝুলিয়ে রাখুক বা মিনু নিজেই আত্মহত্যা করুক তা তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে। এ ঘটনায় আমরা আইনগত কী পদক্ষেপ নেব সে বিষয়ে এখনো পারিবারিকভাবে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কথাবার্তা চলছে’।
মিনুর স্বামী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) কম্পিউটার ও ইলেকট্রনিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নজরুল ইসলাম দাবি করেন, ‘দেখুন পারিবারিক ও দাম্পত্য জীবনে কমবেশি কলহ-বিবাদ, মানসিক সুখ-দুঃখ সবারই থাকে; আমাদেরও ছিল, কিন্তু পরক্ষণেই আবার ঠিক হয়ে গেছে। আমাদের দুই সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার দায়িত্বও ছিল দুজনের ওপর।’
তবে মাদকাসক্তি ও স্ত্রী মিনুকে শারীরিক নির্যাতনের কথা নাকচ করে দিয়ে এ শিক্ষক দাবি করেন, ‘এগুলো একদল লোক নানাভাবে জল ঘোলা করতে চাচ্ছে তা ছাড়া কিছু নয়’।
নূরজাহান পারভিন মিনুর লাশ উদ্ধারের পর কুষ্টিয়া মডেল থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মৃতের ভাই-বোনসহ পরিবার ও নিকটাত্মীয়দের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যমতে, মিনু বিয়ের পর থেকে দাম্পত্য জীবনে অসুখী ছিলেন ও অশান্তিতে জীবন-যাপন করতেন, সে কারণে মৃত্যুটি অস্বাভাবিক মনে হয়েছে। মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছি।‘
কুষ্টিয়া মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) সাব্বিরুল আলম জানান, ‘মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নজরুল ইসলামের স্ত্রী মিনুর অস্বাভাবিক মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে পুলিশ। মৃত্যুর সঠিক কারণ বা কীভাবে মৃত্যু হয়েছে তা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসলে জানা যাবে। এ বিষয়ে ওই গৃহবধূর পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ কোনো অভিযোগ নিয়ে থানায় আসেনি। তবে পুলিশ একটি অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড করেছে’।সূত্র-দেশ রূপান্তর