স্থায়ী ক্যাম্পাসের নির্মাণকাজ শুরু না করা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। চলতি ডিসেম্বরেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবেদনের প্রেক্ষিতে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হবে বলে জানা গেছে।
ইউজিসি বলছে, স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়ার পর কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর ক্ষেত্রে সময় বাড়ানোর আবেদন করে। আবেদনগুলো পর্যালোচনা করে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়কে ৬ মাস থেকে এক বছর সময় দেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। তবে যেগুলো জমি কেনা ছাড়া কোনো কাজই শুরু করেনি তাদের ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থানে থাকবে ইউজিসি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইউজিসি সদস্য (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, আইন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠার ১২ বছরের মধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটল কমিশন ব্যবস্থা নিতে পারবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ইউজিসি অনেকবার সময় দিয়েছে। তাদের আর সময় দেওয়া হবে না। তবে যারা স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার কাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছে তাদের ক্ষেত্রে সময় বাড়ানোর বিষয়টি ইতিবাচক ভাবে দেখা হচ্ছে।
ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ১০৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৩৩টি বিশ্ববিদ্যালয় আগে থেকেই স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আর ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়কে গত এপ্রিল মাসে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে আল্টিমেটাম দেওয়া হয়। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আল্টিমেটাম পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ১২টি বিশ্ববিদ্যালয় পুরোপুরি অথবা আংশিকভাবে স্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করেছে। আংশিক কার্যক্রম পরিচালনা করা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য কিছুটা বাড়তি সময় দেওয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে ইউজিসি।
আবেদনকৃত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিকে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে ৬ মাস থেকে এক বছর সময় দেওয়া হতে পারে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের লিফটসহ কিছু সরঞ্জাম বিদেশ থেকে আনতে হবে। সেই বিষয়টি তারা ইউজিসিকে অবহিত করেছে। ইউজিসি তাদের সময় বাড়ানোর বিষয়ে ইতিবাচক। এছাড়া আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয় বিদ্যুৎ লাইনের সংযোগ পাচ্ছে না বলে ইউজিসিকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সময় বাড়ানোর ক্ষেত্রেও ইতিবাচক ইউজিসি।
অন্যদিকে ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটিসহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় জমি ক্রয় ছাড়া কোনো কাজই শুরু করেনি। জমি ক্রয় করলেও সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে স্থানান্তর হয়নি কিংবা মালিকানা নিয়ে সমস্যা রয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ছাড়া দিতে নারাজ ইউজিসি। কেননা সময় বাড়ানো হলেও এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারবে না বলেই ধরা হচ্ছে। শিগগিরই ইউজিসি চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে কমিশনের সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে সেটি চূড়ান্ত করা হবে।
এ প্রসঙ্গে ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পরিচালক মো. ওমর ফারুখ বলেন, যে ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছিল; তাদের মধ্যে অধিকাংশই স্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করেছে। এটি আমাদের জন্য বড় পাওয়া। ১০টি বিশ্ববিদ্যালয় সময় বাড়ানোর বিষয়ে আবেদন করেছে। যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আবেদন করেছে তাদের বিষয়ে কমিশনের সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে আমরা চাই না কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হোক। সেজন্য যারা স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করেছে, তবে কিছু কাজ বাকি তাদের বিষয়ে আমরা ইতিবাচক। তবে সবার ক্ষেত্রে এই নমনীয়তা দেখানো হবে না।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সময় বাড়ানোর আবেদন করা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো, দি পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, প্রাইম এশিয়া, আশা ইউনিভার্সিটি। এছাড়া গ্রীন ইউনিভার্সিটি ডিসেম্বরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারবে কিনা সে বিষয়টি এখনো জানায়নি।
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ২০২৩ সালে স্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম শুরু করবে বলে কমিশনকে জানিয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে স্টেট ইউনিভার্সিটি তাদের সব কার্যক্রম স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করবে বলে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে। স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ ২০২৫, ২০২৭ সালের মধ্যে প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, ২০২৩ সালের মধ্যে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এবং ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া ২০২৬ সালের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাবে বলে ইউজিসিকে অবহিত করেছে।
এর আগে গত এপ্রিল মাসে সাময়িক সনদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও স্থায়ী ক্যাম্পাসে সম্পূর্ণ কার্যক্রম স্থানান্তর হয়নি—এমন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে চিঠি পাঠিয়েছিল ইউজিসি। কমিশনের চিঠিতে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পূর্ণ শিক্ষা কার্যক্রম স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করার নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্দেশনা প্রতিপালনে ব্যর্থ হলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০-এর ৩৫(৭) ধারা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানায় ইউজিসি।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ‘‘২০১০-এর ৩৫(৭) ধারায় বলা হয়েছে, ‘‘কোনো কারণে কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা দেখা দিলে কিংবা স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত ও শিক্ষার্থীদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার স্বার্থে চ্যান্সেলর কমিশন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সুপারিশক্রমে প্রয়োজনীয় আদেশ ও নির্দেশ দিতে পারবেন। এ বিষয়ে চ্যান্সেলরের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।’’
সার্বিক বিষয়ে ইউজিসি সদস্য (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, আমরা বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিঠি পেয়েছি। চিঠির বিষয়ে শিগগিরই কমিশন সভা করবে। সভায় সব বিষয় পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমরা চাই না কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হোক। এছাড়া শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের বিষয়টিও জড়িত রয়েছে। সবকিছু মিলিয়েই সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন।
কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য অতিরিক্ত সময় পাবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত আল্টিমেটাম পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে খোঁজ নিচ্ছি। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কাজই প্রায় শেষ। অল্প কিছু কাজের জন্য তারা স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারছে না। স্বাভাবিকভাবেই এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কিছুটা বাড়তি সময় পেতে যাচ্ছে। তবে যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার তেমন কোনো অগ্রগতি নেই তাদের বিষয়ে আমাদের মনোভাব কঠোর।
প্রসঙ্গত, গত এপ্রিল মাসে ২২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়। সেগুলো হলো— দ্য পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, গ্রীন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, দ্য মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি, রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস ও আশা ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।সূত্রঃদ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস