বিশেষ প্রতিনিধি: মানিকগঞ্জ (৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪)
গত কোরবানির ঈদের রাতে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জেরে মানিকগঞ্জ পৌর শহরের বেউথা এলাকায় বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে জেলা আদালতের স্বনামধন্য আইনজীবী মুরাদ হোসেন ও তার পুরো পরিবারের ওপর পৈশাচিক কায়দায় হামলা করে পৌর শ্রমিকলীগের নেতা হাশমত সহ শ্রমিক লীগের বেশ কয়েকজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী, এসময় হামলার পাশাপাশি লুটপাট চালানো হয় ঐ আইনজীবীর বাড়িতে।
হামলা এবং লুটপাটের পেছনে ইন্ধন দেন পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাশেম আলী আর এতে অংশ নেয় কিশোর গ্যাং লিডার আশিকসহ প্রায় ৩০/৪০ জনের সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী।
ঐদিন হামলার ঘটনায় আইনজীবীর পরিবারের বৃদ্ধা এবং নারী ও শিশুসহ মোট ৭ জন সদস্য গুরুতর আহত হন। হামলার পরে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন। ৭ জনের মধ্যে আইনজীবী মুরাদ হোসেন এর দুই ভাতিজার শরীরের বিভিন্ন অংশ ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মারাত্মক জখম থাকায় তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে প্রেরণ করা হয়।
ঈদের রাতে পৌর এলাকার ভেতরে এমন একটি ন্যক্কারজনক সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার সংবাদ পেলে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা তৎক্ষণাৎ ঘটনা স্থলে ছুটে যান এবং পরদিন বেশ কয়েকটি জাতীয় এবং স্থানীয় গণমাধ্যমে গুরুত্বের সাথে খবরটি প্রকাশ করা হয়। ঘটনার পড় মানিকগঞ্জ সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয় পরিবারটির পক্ষ থেকে। এমন পৈশাচিক হামলার ঘটনায় হতবিহব্বল প্রতিবেশীরা সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেন। এমন ঘটনার নিন্দা জানিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করে জেলা আইনজীবী সমিতি।
তবে এতকিছুর পরেও সন্ত্রাসীরা সে সময় তাদের দলীয় এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে থেকে যান ধরা ছোঁয়ার বাহিরে। তারা এতটাই ক্ষমতার অপব্যবহার করে সে সময় যা বর্ণনাতীত।
অভিযোগটির শতভাগ সত্যতা থাকার পরেও সে সময় পুলিশ মামলা গ্রহণে গড়িমসি করতে থাকে। তবে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী এবং আইনজীবীসহ পৌর শহরের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের চাপে মামলাটি আমলে নেয় হলে আসামীরা তাদের রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে উচ্চ আদালতে থেকে জামিন পেয়ে এলাকায় ফিরে মামলা তুলে নিতে নানা ভাবে হুমকি ও হয়রানি শুরু করে।
তবে গত ৫ই আগস্ট স্বৈর শাসক শেখ হাসিনার পতনের মধ্যদিয়ে সারাদেশের গণমানুষের বিজয় নিশ্চিত হলে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় আওয়ামী ক্যাডার হাশেম/হাশমত বাহিনী ও ছাত্রলীগ নেতা আশিকের নেতৃত্বাধীন কিশোর গ্যাং সদস্যরা।
এদিকে গত ৩রা সেপ্টেম্বর আসামিদের হাইকোর্ট এর জামিনের মেয়াদ শেষ হলেও তারা নিম্ন আদালতে হারিজ হয় নি। এতেকরে তাদের বিরুদ্ধে অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট জারি হলেও তাদের মধ্যে কেউ এখন পর্যন্ত আটক হয় নি।
মামলাটির বিষয়ে মানিকগঞ্জ সদর থানার ভার প্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, আসামিদের জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় তাদের আটকের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।