শহিদুল ইসলাম, স্টাফ রিপোর্টার: স্বাধীনতার ৫১ বছরে অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন। পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় সম্মান। কিন্তু এতদিনেও কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের বাসিন্দা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও আওয়ামীলীগ নেতা মরহুম ইউনুছ আলীর নাম চূড়ান্ত মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় উঠেনি। মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানে নানান স্বীকৃতি পেলেও পাননি মুক্তিযোদ্ধার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। এতে তার পরিবার, সতীর্থ ও অনেক মুক্তিযোদ্ধা ক্ষোভ জানিয়ে দ্রুত চুড়ান্ত তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির দাবি জানিয়েছেন।১৯৭১ সালে ইউনুছ আলী ছিলেন তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা। সাংগঠনিক দক্ষতা ও নেতৃত্ব দানের সক্ষমতায় সে সময় তিনি সম্পাদক নির্বাচিত হন। ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের পর তার নেতৃত্বে ছাত্র জনতার আন্দোলন সংগ্রামে উত্তাল হয়ে ওঠে ফুলবাড়ী। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি থানা সংগ্ৰাম পরিষদ গঠন করেন। তিনি নির্বাচিত হন সাধারণ সম্পাদক। সংগ্ৰাম পরিষদের নেতৃত্বে চালু হয় বেসামরিক প্রশাসন। এ প্রশাসন স্থানীয় মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা, মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প স্থাপন,ছাত্র-যুবকদের বাছাই করে ভারতে প্রশিক্ষনে পাঠানো, মুক্তিযোদ্ধাদের রসদ সরবরাহসহ নানাবিধ কাজ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস ফুলবাড়ীকে হানাদার মুক্ত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০০৪ সালে প্রাক্তন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল সম্মাননা স্মারক প্রদান করে। এছাড়াও এ অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বীর প্রতীক বদরুজ্জামান মিয়া সম্পাদিত মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি গ্ৰন্হ, তাজুল মোহাম্মদ সম্পাদিত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের খোঁজে কুড়িগ্রাম গ্ৰন্থে তার অবদানের স্বীকৃতি তুলে ধরা হয়। ১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তাঁকে রাজনৈতিক রোষানলে পড়ে বার জেলে যেতে হয়। একারণে তিনি পারিবারিক ও অর্থনৈতিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। তার মৃত্যুর পর স্ত্রী এবং সন্তানরা অসহায় হয়ে পড়েন। মুক্তিযুদ্ধের এই সংগঠকের রাষ্ট্রীয় সম্মানের স্বীকৃতির জন্য ২০১৫ সালে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতির জন্য আবেদন করেন তাঁর পরিবার।২০১৭ সালের ২৯ এপ্রিল উপজেলা পর্যায়ে যাচাই বাছাইয়ে তার নামটি “ক” শ্রেণীতে তালিকা ভুক্ত হয়। সাক্ষাৎকার হলেও আজ পর্যন্ত অজানা কারণে মুক্তিযোদ্ধার চূড়ান্ত তালিকায় তাঁর নামটি অন্তর্ভুক্ত হয়নি।শুধু ইউনুস আলী নন তৎকালীন পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগকারী সরকারি চাকরিজীবী মরহুম সিরাজুল হক আনছারী ও থানা সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম সদস্য সহ আরো কয়েকজন রয়েছেন অবহেলিত ক শ্রেণীর তালিকায় নাম উঠলেও চূড়ান্ত তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত হতে পারেননি এখনো।
বীর মুক্তিযোদ্ধা খমির উদ্দিন, শাহজাহান আলী , আব্দুল মতিন, রুস্তম আলী জানান আমরা বীর প্রতীক বদরুজ্জামান স্যার ও বাঘা ইউনুস সাহেবের নেতৃত্বে যুদ্ধ করে এ দেশ স্বাধীন করেছি ,আমরা যুদ্ধ অংশগ্রহণ করে মুক্তিযোদ্ধা হয়েছি কিন্তু আমাদের নেতা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ইউনুস আলী ওরেফে বাঘা ইউনুস সাহেবের নাম আজ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধার চূড়ান্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। আমরা বিজয়ের মাসে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় এবং সরকারকে অনুরোধ জানাবো উনার নামটি দ্রুত মুক্তিযোদ্ধার তালিকার অন্তর্ভুক্ত করা হোক।
সংগ্রাম পরিষদের তৎকালীন দপ্তর সম্পাদক, আমির আলী মিয়া জানান, ফুলবাড়ীকে মুক্তাঞ্চল রাখার জন্য ইউনুস আলী ভাই যে ভূমিকা পালন করেছেন তা ভোলার মত নয়, কিন্তু দুঃখের বিষয় আজ পর্যন্ত তার নামটি মুক্তিযোদ্ধার চূড়ান্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। তাই চূড়ান্ত তালিকায় নামটি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আমি সরকারের কাছে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।
কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট সভাপতি অধ্যক্ষ মোঃ রাশেদুজ্জামান বাবু জানান,২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট কুড়িগ্রাম জেলা শাখার উদ্যোগে কুড়িগ্রাম জেলার নয়টি উপজেলা নিয়ে ৩৩ জন গুনি মানুষকে দেশ ও জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় সম্মাননা দেয়া হয় তার মধ্যে ফুলবাড়ী উপজেলা থেকে বাঘা ইউনুস সাহেব কে মনোনীত করা হয়। তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে বিশেষ ভূমিকা রাখায় উনাকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং সম্মাননা দেয়া হয় ।অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বরেণ্য রাজনীতিবিদ মরহুম আব্দুল জলিল সাহেব কিন্তু দুঃখের সাথে আমরা জানতে পারি আজও ওনার স্বীকৃতি মেলেনি। সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে ওনাকে স্বীকৃতি প্রদানের জোর দাবি জানাচ্ছি।
ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুমন দাস জানান, মরহুম ইউনুস আলী আবেদন থাকলে আমরা ফাইলপত্র দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব এবং ঊর্ধ্বতনও কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা চাইবো।