সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘সড়কে নিরাপত্তা ত্রুটির কারণে দুর্ঘটনায় প্রতি বছর তিন হাজার ৫০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয় সরকারের। এটি বড় উদ্বেগের বিষয়। আমাদের উন্নয়ন দর্শন অনেক বড় এবং দূরদর্শী কিন্তু উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন অনেক দুর্বল।’
আজ বুধবার (১৪ জুন) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিশ্বব্যাংক এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের যৌথ আয়োজনে ‘বাংলাদেশ সড়ক নিরাপত্তা’ শীর্ষক প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শুধুমাত্র বাস্তবায়ন দুর্বলতার কারণে প্রকল্পগুলোর ব্যয় ও সময় দুটোই বাড়ে। এটি অনেক বড় সমস্যা।’
বিশ্বব্যাংক প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সেতু নিয়ে আমাদের ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। তারা ইচ্ছা করলে বিনিয়োগ করতে পারত। ওই সময় আমাদের দেশের কিছু বাঘা বাঘা লোক এতে জড়িত ছিল। এখন বিশ্বব্যাংকই আমাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। বাজেটে সহায়তা করছে।’
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনার আমলে যোগাযোগে যে পরিবর্তন হয়েছে তা ইতিহাসে বিরল। একদিনে শত ব্রিজ উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। এ প্রকল্পের বেশিরভাগই দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এতে মোট ব্যয় পাঁচ হাজার কোটি টাকা।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রথম কাজ হল যে মানুষের জন্য আমরা উন্নয়ন করছি তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পরিবেশ রক্ষা করা। মানুষ যাতে সড়ক দিয়ে নিরাপদে তাদের স্বজনের কাছে ফিরে যেতে পারে সেটি নিশ্চিত করা।’
এ সময় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরিফা খান বলেন, ‘এ প্রকল্পটি সবার জন্য প্রয়োজনীয়। স্বাধীনতার পর থেকে বিশ্বব্যাংক ৩৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে। গত তিন মাসেই দিয়েছে সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার। এ প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ এজন্য যে যাতে আমরা নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারি।’
অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের অনেক স্বপ্ন। কিন্তু প্রতি বছর এদেশে সড়কে হাজার হাজার মানুষ মারা যায়। সড়ক দুর্ঘটনার ৫০ শতাংশই মোটরসাইকেলের।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে শিশুদের মৃত্যুর চতুর্থ প্রধান কারণ সড়ক দুর্ঘটনা। শুধু তাই নয় তরুণরা দুর্ঘটনার কারণে দারুণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সড়ক দুর্ঘটনা, ব্যক্তিগত ভাবে আহত হয়ে থাকা, পারিবারিক ট্র্যাজেডি- এগুলো একটি দেশের প্রবৃদ্ধি এবং মানব উন্নয়নকে দুর্বল করে। বাংলাদেশের জন্য সড়ক নিরাপত্তার উন্নতি একটি প্রধান উন্নয়ন অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।’
সড়ক নিরাপত্তার প্রকল্পটি দ্রুতগতির বাস নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করা, ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা ব্যবহারকারীদের যত্রযত্র রাস্তা পারাপার কমাতে ট্রাফিক পুলিশ এবং হাইওয়ে টহলের ক্ষমতা আধুনিকীকরণে সহায়তা করবে।
এ প্রকল্পের আওতায় গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য রাস্তায় সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে, বৈদ্যুতিক বার্তা ব্যবস্থা তৈরি হবে। এতে মহাসড়কে টহল যানবাহন এবং ক্র্যাশ সাইট পরিষ্কারের সরঞ্জামের ব্যবস্থা থাকবে। সারাদেশে সড়ক নিরাপত্তা কার্যকরভাবে পরিচালনার জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতেও এটি সরকারকে সহায়তা করবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সড়ক ও জনপথ বিভাগ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ পুলিশ ও স্বাস্থ্য সেবা অধিদপ্তর একযোগে কাজ করবে।