আবুল কালাম আজাদ (রাজশাহী):- রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রাণকেন্দ্র জেলার তানোর উপজেলায় প্রতি বছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে সরিষার চাষ। গত বছরের চেয়ে এবছর দ্বি-গুনেরও বেশী জমিতে চাষ করা হয়েছে সরিষার। এ বছর বিপুল সংখ্যক জমিতে সরিষা চাষের ফলে, সরিষার হলুদ চাদরে অপরূপ শোভা চড়াচ্ছে উপজেলার বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ।
গত কয়েক বছর আগে কৃষকরা সরিষা চাষের পরিবর্তে আলু, গমসহ অন্যান্য ফসল চাষের প্রতি বেশী আগ্রহী হয়ে সরিষা চাষ প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন কৃষকরা। কিন্তু আলুতে আগের মত লাভবান হতে না পারায় কৃষকরা আলু ও গম চাষের পাশাপাশি সরিষা চাষেও বেশ আগ্রহী।
বর্তমানে অন্য ফসলের তুলনায় অল্প খরচে বেশী লাভ হওয়ায় কৃষকরা ঝুকছেন সরিষা চাষে বলছেন এলাকার কৃষকরা। কৃষকরা বলছেন কীটনাশকসহ চাষের খবচ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রান্তিক কৃষকরা অল্প পুঁজি খাটিয়ে সরিষা চাষেই বেশী লাভবান হচ্ছেন বলে কৃষকরা সরিষা চাষে বেশ আগ্রহী। ফলে গত কয়েক বছর ধরে প্রতি বছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে সরিষা চাষ।
তানোর উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, তানোর উপজেলায় গত বছর ২ হাজার ৮’শ হেস্টর (১ হেস্টর সমান সাড়ে ৭ বিঘা) জমিতে সরিষার চাষ হয়েছিলো। তার আগের বছর মাত্র ১৪’ শহেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছিলো।
কিন্তু চলতি মৌসুমে ৬ হাজার ২’শ ১০ হেস্টর জমিতে সরিষার চাষ করা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় এবছর ৩ হাজার ৪’শ ১০ হেস্টর বেশী জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে।
সরিষা চাষে প্রতি বিঘায় কৃষকের খচর হয়েছিলো ৫ হাজার টাকা থেকে ৬ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় ফলন হযেছিলো ৬ মন থেকে ৭ মন। প্রতি মন সরিষা বাজারে বিক্রি হয়েছিলো সাড়ে ৩ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত। গত বছর সরিষা চাষে বিঘা প্রতি কৃষকের লাভ হয়েছিলো ১১হাজার টাকা থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত।
তানোর উপজেলার মাঠ জুড়ে এখন হলুদের সমারোহ, যেদিকে চোখ যাই, সেদিকেই সরিষার ফুলের হলুদ চাদরে মাঠ জুড়ে অপরুপ শোভা ছড়াচ্ছে। আর এই সরিষার হলুদ ফুলের গন্ধে মৌ মৌ করে মধু সংগ্রহ করতে উড়ছে মৌমাছির দল।
তানোর উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, এবার সরিষা চাষের পাশাপাশি আলুরও চাষ হয়েছে অনেক বেশী জমিতে। ফলে, আলু ও সরিষার পরিচর্যার পাশাপাশি কৃষকরা ভালো ফলন ও লাভের আশায় মনের আনন্দে জমিতে সেচের কাজ করছেন।
তানোর সদর গ্রামের কৃষক মুন্জুর রহমানের পুত্র রাসিদুল ইসলাম সাগর বলেন, এ বছর দেড় বিঘা জমিতে সরিষা ও ৮ বিঘা জমিতে আলু’র চাষ করছেন। সরিষা চাষে সব মিলিয়ে তার খরচ পড়বে ৫ হাজার টাকা থেকে ৬ হাজার টাকা।
তিনি বলেন, বর্তমানে সরিষার ফুল ফুঁটতে শুরু করেছে, আশা করছি ভালো ফলন এবং দাম পেলে লাভ ভালোই হবে। তিনি বলেন, আলু’র গাছ বের হয়েছে এখন চলছে পরিচর্যার কাজ।
তবে, তিনি কৃষি অফিস থেকে কোনো ধরনের সুবিধা ও সহযোগীতা না পাওয়ায ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকারী মুল্যের চেয়ে বেশী দামে সার ও কিটনাশক কিনতে হয়েছে, তার অভিযোগ সময়মত সরকারী মুল্যে সার না পাওয়ায় আরো ২ বিঘা জমিতে আবাদ করতে পারেননি বলেও জানান শিক্ষিত যুবক ও উদীয়মান এই কৃষক।
একাধীক কৃষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, সময় মত সরকারী মুল্যে সার না পাওয়ায় বেশী দামে সার কিনে তারা চাষাবাদ করছেন। ফলে তাদের উৎপাদন খরচ বাড়ছে বলে জানান ধানতৈড় গ্রামের আদর্শ কৃষক আশরাফুল আলমসহ একাধীক কৃষক।
তানোর সদর গ্রামের আদর্শ কৃষক আব্দুল লতিফ বলেন, অন্য ফসলের তুলনায় কম খচর ও কম পরিশ্রমে সরিষা চাষে বেশী লাভ, তাই তিনি অন্য ফসলের পাশাপাশি এবছর ২ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছেন। কিন্তু সরকারী কোনো সহযোগীতা পাচ্ছেন না জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
তানোর উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল্লাহ বলেন, সরিষা চাষে ঝুকি কম,অল্প খরচে বেশী লাভ, ফলে কৃষকরা সরিষা চাষে আগ্রহী উঠছেন। তিনি বলেন, এবছর আবহওয়া অনুকূলে সরিষার বাম্পার ফলন হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে বাজারে বারি ১৪ ও বারি ১৮ সরিষা বীজের চাহিদা তুলনামূলকভাবে বেশি বলেও জানান তিনি।