মানবদেহে হৃদযন্ত্র এমন এক প্রত্যঙ্গ যার ওপর পুরো শরীরে রক্ত ও অক্সিজেন সংবহনের দায়িত্ব অর্পিত রয়েছে। কাজেই একে সুস্থ-সবল রাখা আমাদের অন্যতম দায়িত্ব। বিশেষজ্ঞরা বলেন, হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্য ভালো তো রোগমুক্ত দীর্ঘায়ু লাভের সম্ভাবনা। এর জন্যে স্বাস্থ্যকর খাবার ও নিয়মিত ব্যায়াম অপরিহার্য।
এই প্রত্যঙ্গের জন্য ক্ষতিকর অনেক খাবার ও কাজকর্ম রয়েছে যা আমরা নিয়মিত করে থাকি। তবে এখানে ক্ষতিকর এমন কিছু কারণ তুলে ধরা হলো যা জেনে বিস্মিত হবেন। এগুলোও যে হৃদরোগের কারণ হতে পারে তা মাথায় আসার কথা নয়। এসব কাজে হৃদযন্ত্রের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে, হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি হয়।
১. সারাদিন বসে থাকা
সাধারণত চাকরিজীবীদের এমনটা হয়। অনেকের চাকরির ধরনটাই এমনই যে পুরো কর্মঘণ্টা তাদের চেয়ারে বসে কাটাতে হয়। আর যারা আলসেমীর কারণে শুধু শুয়ে বসে সময় কাটান তাদের জন্যেও অশনিসংকেত। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন (এএইচএ) এর এক গবেষণায় বলা হয়, যারা দিনে পাঁচ ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় বসে সময় কাটান তারা অন্যদের তুলনায় বেশি হৃদরোগের ঝুঁকিতে থাকেন। আরো বলা হয়, এ থেকে বাঁচতে প্রতিঘণ্টা পর পর ৫ মিনিটের জন্যে একটু হাঁটাহাঁটি করে নিতে হবে।
২. দাঁতে ফ্লস না করা
দাঁতের অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় হৃদরোগ দেখা দিতে পারে। দাঁতের ক্ষয় বা গাম ইনফ্লামেশনের মতো সমস্যা যাদের রয়েছে, তাদের শুধু হৃদরোগই নয় কিডনিতেও নানাবিধ অসুবিধা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জার্নাল অব পেরিওডন্টাল রিসার্চের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত ফ্লসের মাধ্যমে দাঁত পরিষ্কার রাখেন তাদের হৃদরোগ অনেক কম দেখা দেয়। যে ব্যাকটেরিয়া ক্ষয়রোগের মতো ঘটনা ঘটায়, তারা হৃদরোগের জন্যেও অনেকাংশে দায়ী থাকে। ফ্লসিংয়ের মাধ্যমে এসব ব্যাকটেরিয়া মুখ থেকে বেরিয়ে যায়।
৩. একাকীত্ব
হ্যাঁ, একাকীত্ব কেবল মানসিক সমস্যাই নয়, শারীরিক রোগের জন্যেও দায়ী থাকে। বলা হয়, একাকী মানুষগুলোর হৃদরোগ অন্যদের তুলনায় বেশি দেখা দেয়। জীবন থেকে মানসিক চাপ যত দূর হয়, আয়ু তত বাড়তে থাকে।
৪. অস্বাস্থ্যকর সম্পর্ক
হৃদযন্ত্রের নানা অসুবিধা দেখা দেওয়ার একটি কারণ বিষময় অসুখী জীবনযাপন, বিশেষ করে এ ধরনের সম্পর্কে জড়িয়ে থাকা। স্ট্রেসের মাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। পরিণামে হৃদয়ের যন্ত্রণাও বাড়ে। অসুখী দম্পতিদের উভয়েরই এমন সমস্যা হওয়া মোটেও আশ্চর্যজনক বিষয় নয়।
৫. একাধারে মাত্রাতিরিক্ত ব্যায়াম
ব্যায়ামে জীবনটা অনেক দিক থেকেই সুস্থ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় হয়ে ওঠে। আবার অতিরিক্ত ব্যায়াম ক্ষতিকর বৈকি। বিশেষ করে, যারা নিয়মিত ব্যায়ামে অভ্যস্ত নন, তারা হঠাৎ করেই বেশি বেশি ঘাম ঝরানোর চেষ্টা করলে তা হৃৎপিণ্ডের ওপর ক্ষতিকর চাপ সৃষ্টি করে। মাত্রাতিরিক্ত ব্যায়ামে এমনকি হার্ট অ্যাটাকেরও সম্ভাবনা থেকে যায়।
৬. খাবারে বেশি লবণযোগ
অনেকেরই এই বদভ্যাস রয়েছে। লবণ ঠিকঠাক থাকলেও আরো কিছুটা ছিটিয়ে না নিলেই নয়। এতে কেবল উচ্চ রক্তচাপই নয়, হৃদযন্ত্রেও বাজে প্রভাব পড়ে। এছাড়া প্রক্রিয়াজাত এবং জাঙ্ক খাবারও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। খাবারে ৫ গ্রামের বেশি পরিমাণ লবণ নিলে হৃদরোগের ঝুঁকিতে পড়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া কঠিন।
সূত্র: ইন্ডিয়া টাইমস