Saturday , 20 April 2024
শিরোনাম

হেনোলাক্সের ব্যবসা বন্ধ হলেও বাড়ি, ফ্যাক্টরি বেড়েছে নুরুলের

বহুল আলোচিত জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে নিজের গায়ে আগুন দিয়ে গাজী আনিসের মৃত্যুর ঘটনায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলার অভিযোগের ভিত্তিতে আমিন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নুরুল আমিন ও পরিচালক ফাতেমা আমিনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব।

র‍্যাব বলছে, গ্রেপ্তার নুরুল আমিন ১৯৮১-১৯৯৬ সাল পর্যন্ত গোপীবাগ ঢাকা এলাকায় কাদের হোমিও হল নামে হোমিও হলে ১৫ বছর চাকরী করেন। ঐ সময়ে তার একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠার কথা মাথায় আসলে ১৯৯১ সালে হেনোলাক্স কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে ব্যবসা শুরু করেন। পরবর্তীতে বাজারে হেনোলাক্সের চাহিদা কমে গেলে ২০০৯ সালে আমিন হারবাল নামে আরেকটি কোম্পানি খোলে সে। এর ভেতর ২০১৬ সালে হেনোলাক্সের ব্যবসা বন্ধ করে দেন। ব্যবসা না চললেও গ্রেপ্তারদের কাকরাইলে একটি ফ্ল্যাট, পুরানো পল্টনে স্কাই ভিউ হেনোলাক্স সেন্টার নামে একটি ১০ তলা ভবন, পিংক সিটিতে ১টি ডুপ্লেক্স বাড়ি, মেরাজনগর কদমতলীতে হেনোলাক্স নামে ৪ তলা ভবন, মোহাম্মদবাগ কদমতলী এলাকায় হেনোলাক্স ফ্যাক্টরি রয়েছে।

মঙ্গলবার (৫ জুলাই) রাতে র‍্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‍্যাব-৩ এর অভিযানে রাজধানীর উত্তরা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি নুরুল আমিন (৫৫) এবং ফাতেমা আমিনকে (৪৫) গ্রেপ্তার করা হয়।

বুধবার দুপুরে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন রাজধানীর কাওরান বাজারে মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গত সোমবার (৪ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নিজের শরীরে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন মো. আনিসুর রহমান গাজী। পরে তকে উদ্ধার করে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তার অবস্থার অবনতি হলে ওই ইন্সটিটিউটের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়। সেখানে মঙ্গলবার সকাল সোয়া ৬টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

ওই ঘটনায় ভিকটিমের ভাই বাদী হয়ে রাজধানীর শাহবাগ থানায় একটি আত্মহত্যা প্ররোচনার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নম্বর ৯। এরই প্রেক্ষিতে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে তাদের গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব।

মামলা ও অন্যান্য সূত্রে র‍্যাব জানায়, ২০১৭ সালে আমিন গ্রুপের কর্ণধার মো. নুরুল আমিন এবং তার স্ত্রী ফাতেমা আমিনের সঙ্গে ভিকটিমের পরিচয় হয়। ধীরে ধীরে তাদের সাথে ভিকটিমের সখ্যতা এবং আন্তরিকতা গড়ে ওঠে। সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব কর্মকর্তা খন্দকার মঈন জানান, গ্রেপ্তাররা ২০১৮ সালে চিকিৎসার জন্য পার্শ্ববর্তী একটি দেশে গেলে সেখানে স্থানীয় একটি আবাসিক হোটেলে একইসাথে অবস্থানকালে গ্রেপ্তাররা ভিকটিমকে হেনোলাক্স কোম্পানিতে বিনিয়োগের জন্য প্ররোচিত করে। ভিকটিম প্রথমে অসম্মতি জ্ঞাপন করলেও পরবর্তীতে রাজি হয় এবং প্রাথমিকভাবে এক কোটি টাকা বিনিয়োগ করে।

তিনি বলেন, পরবর্তীতে তাদের প্ররোচণায় ভিকটিম আরও ২৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে। অধিকাংশ টাকাই ভিকটিম ঋণ হিসেবে আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধবের কাছ থেকে ধার নিয়েছিল। বিনিয়োগ করার সময় পরস্পরের প্রতি সম্মান এবং বিশ্বাসের কারণে তাদের মধ্যে কোন চুক্তিনামা করা হয়নি।

র‍্যাব মুখপাত্র বলেন, বিনিয়োগ পরবর্তী চূড়ান্ত রেজিস্ট্রি চুক্তিপত্র সম্পাদন করার জন্য ভিকটিম বারবার গ্রেপ্তার আসামিদেরকে অনুরোধ করেন। কিন্তু তারা গড়িমসি করতে থাকে। এক পর্যায়ে গ্রেপ্তারা প্রতিমাসে যে লভ্যাংশ প্রদান করতো সেটাও বন্ধ করে দেয় এবং কয়েকবার গ্রেপ্তার আসামিরা লোকজন দ্বারা ভিকটিমকে হেনস্তা ও ভয়ভীতি প্রদর্শন চেষ্টা করে।

র‍্যাব জানায়, বর্তমানে লভ্যাংশসহ ভিকটিমের ন্যায্য পাওনা তিন কোটি টাকার বেশি বলে জানা যায়। উক্ত টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ভিকটিম গ্রেপ্তার আসামিদের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়ার আদালতে দুটি মামলা দায়ের করেন।

এছাড়াও, ঐ টাকা ফিরে পাওয়ার জন্য গত ২৯ মে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। গত ৩১ মে ভিকটিম তার ফেসবুক আইডি থেকে পাওনা টাকা আদায় সংক্রান্তে মামলা দায়ের বিষয়টি পোষ্ট করেন এবং বন্ধু-বান্ধব ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছে সহায়তা চান।

মামলার এজাহার সূত্রে র‍্যাব জানায়, ঘটনার দিন গ্রেপ্তার আসামিদের ভিকটিমের পাওনা টাকা পরিশোধের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু ভিকটিম ঐ দিন বিকেলে তাদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করলে গ্রেপ্তাররা ভিকটিমকে টাকা দেয়নি। ভিকটিম তাদের আচরনে হতাশ হয়ে রাগে ক্ষোভে অভিমান করে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। জানা যায়, ভিকটিম কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পান্টি গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি ঠিকাদারী ব্যবসার পাশাপাশি একটি টেলিকম কোম্পানিতে চাকরি করতেন। পরবর্তীতে চাকরি ছেড়ে কুষ্টিয়ায় গাড়ির ব্যবসা শুরু করেন। ভিকটিম সাহিত্য চর্চা করতেন এবং তার বেশ কয়েকটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে।

কমান্ডার খন্দকার মঈন বলেন, গ্রেপ্তার নুরুল আমিন ১৯৮১-১৯৯৬ সাল পর্যন্ত গোপীবাগ ঢাকা এলাকায় কাদের হোমিও হল নামে হোমিও হলে ১৫ বছর চাকরি করেন। ঐ সময়ে তার একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠার কথা মাথায় আসলে ১৯৯১ সালে হেনোলাক্স কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে ব্যবসা শুরু করেন।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, পরবর্তীতে কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে আমিন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি নামে নামকরন করে। ঐ কোম্পানীর অধীনে হেনোলাক্স কসমেটিকস যেমন হেনোলাক্স কমপ্লেকশান ক্রীম, হেনোলাক্স স্পট ক্রীম, হেনোলাক্স মেছতা আউট ক্রীম ও হেনোলাক্স হেয়ার অয়েল ও পল্ট্রি ফার্মের ব্যবসা করে। পরবর্তীতে বাজারে হেনোলাক্সের চাহিদা কমে গেলে ২০০৯ সালে সে আমিন হারবাল কোম্পানি নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে ব্যবসা শুরু করেন এবং ২০১৬ সালে হেনোলাক্সের ব্যবসা বন্ধ করে দেন।

কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেপ্তারদের কাকরাইলে একটি ফ্ল্যাট, পুরানো পল্টনে স্কাই ভিউ হেনোলাক্স সেন্টার নামে একটি ১০ তলা ভবন, পিংক সিটিতে ১টি ডুপ্লেক্স বাড়ি, মেরাজনগর কদমতলীতে হেনোলাক্স নামে ৪ তলা ভবন, মোহাম্মদবাগ কদমতলী এলাকায় হেনোলাক্স ফ্যাক্টরি রয়েছে। বর্তমানে ঐ ফ্যাক্টরিতে খান ফুড প্রোডাক্টস, বন্যা ফুড প্রোডাক্টস ও জে কে এগ্রো ফুড নামে তিনটি ভিন্ন প্রতিষ্ঠান ভাড়ায় তাদের উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছে।

গ্রেপ্তার ফাতেমা আমিন সম্পর্কে র‍্যাব মুখপাত্র বলেন, ফাতেমা একটি বেসরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ থেকে ডিএইচএমএস সম্পন্ন করে তার স্বামীর আমিন হোমিও হলে প্রথমে ১ বছর হোমিও চিকিৎসা করেন। তিনি তার স্বামীর প্রতিষ্ঠিত আমিন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি তার স্বামীর আমিন হারবাল কোম্পানির দেখাশোনা করেন বলেও জানান র‍্যাবের এই কর্মকর্তা।

Check Also

অনিবন্ধিত অনলাইন পোর্টাল বন্ধ করে দেয়া হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী

তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত জানিয়েছেন, দেশে প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যমের অনলাইন, অনলাইনের জন্য নিবন্ধিত …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x