Friday , 29 March 2024
শিরোনাম

১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দানের ভার কেবল বাংলাদেশের ওপর চাপিয়েছে বিশ্ব : গার্ডিয়ানকে শাহরিয়ার

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের নিশ্চয়তা দিতে মিয়ানমারের জান্তাকে চাপ দেওয়ার জন্য সর্বাত্মক সমর্থন না দেওয়ায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনা করে বলেছেন, বিশ্ব রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনে ‘মোটেও কিছু করেনি’।
ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য গার্ডিয়ান বুধবার প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলমকে উদ্ধৃত করে বলেছে, মিয়ানমারের নির্যাতিত রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্ব ‘মোটেও কিছু’ করেনি।
কামিল আহমেদের লেখা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিমন্ত্রী বলেছেন যে, বাংলাদেশ বৈশ্বিক সহায়তা ছাড়াই ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে।
আলম বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রতি বছর হ্রাস পেয়েছে এবং মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ থেকে পালিয়ে ৭০০,০০০ এরও বেশি লোক বাংলাদেশে আসার পর থেকে বিগত পাঁচ বছরে প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে কোনো বাস্তব অগ্রগতি হয়নি।
তিনি আরো বলেন, পূর্ববর্তী সময়ে নিরাপত্তা অভিযানের কারণে ইতোমধ্যে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ৩০০,০০০ লোকের সঙ্গে এসে তারা ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে যোগ দেয়।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের সামরিক জান্তার ওপর যথেষ্ট চাপ দেয়া হয়নি। তিনি জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যা মামলা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে জোরপূর্বক দেশ ছাড়তে বাধ্য করা সংক্রান্ত মামলায় ব্যাপকতর আন্তর্জাতিক সমর্থনের আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রতিবেদনে আলমকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ‘রাজনৈতিক এবং প্রত্যাবাসন সমাধানে বিশ্ব একেবারে কিছুই করছে না।’ প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘তারা এখনও তাদের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করেনি। সাম্প্রতিককালেও তারা মিয়ানমারে বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে। ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মিয়ানমারে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের চেয়ে বেশি ছিল। আপনি জানেন, এটা কতটা বেমানান?’
তিনি (আলম) মিয়ানমারের সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তাদের ভ্রমণ এবং অর্থের ওপর প্রস্তাবিত নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, এসব ব্যক্তি খুব কমই ভ্রমণ করে থাকে।
আলম বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের মানবিক আবেদন এ বছর প্রয়োজনীয় অর্থের মাত্র এক তৃতীয়াংশ পেয়েছে। বিশ্বব্যাপী ব্যয় বৃদ্ধির কারণে আগামী বছর আরও কম অর্থ দেয়া হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা ব্যক্ত করছেন।
১৯৮২ সালে বেশিরভাগ মুসলিম রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়া হয়েছিল এবং তারা সহিংস সামরিক অভিযানের পাশাপাশি আন্দোলন করা, ধর্ম পালন করা, স্বাস্থ্যসেবা লাভ এবং শিক্ষা লাভের ক্ষেত্রে ব্যাপক নিয়ন্ত্রণের শিকার হয়েছে।
১৯৭৮ এবং ১৯৯১ সালে সামরিক দমন থেকে পালিয়ে আসা হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসন করা হয়েছিল, শুধুমাত্র এ জন্য যে বাংলাদেশকে আবার তাদের বিপুল সংখ্যক ফিরে আসা দেখতে হবে। কারণ মিয়ানমারে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি।
আলম বলেন, “আমি মনে করি এই [অতীতের] চুক্তিগুলির মধ্যে কয়েকটি ত্রুটিপূর্ণ ছিল। কিন্তু এবার, বাংলাদেশ সরকার একটি মর্যাদাপূর্ণ এবং টেকসই প্রত্যাবর্তনের জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাদের কিছু মৌলিক অধিকার দেয়া না হলে, এই লোকেরা কখনই ফিরে যেতে রাজি হবে না”।
তিনি বলেন, খুব কম সংখ্যায় রোহিঙ্গাদেরকে ফেরত দেয়ার জন্য মিয়ানমারের সাথে আলোচনা চলছে। তিনি আশা করছেন যে, এ প্রয়াস ভবিষ্যতে আরও বড় সংখ্যায় রোহিঙ্গাদেরকে ফেরৎ পাঠানোর ভিত্তি স্থাপন করতে পারে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কিছু লোককে পুনর্বাসনের প্রস্তাব দিয়েছে। তবে বাংলাদেশের উপর বোঝা উল্লেখযোগ্যভাবে লাঘব করার জন্য আরও কয়েকটি দেশের অনুরূপ প্রস্তাব দিতে হবে।
২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশ দুবার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের চেষ্টা করেছে কিন্তু কেউই ফিরতে রাজি হয়নি। মৌলিক পরিষেবা লাভের সুযোগ এবং ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকির বিষয়ে মানবিক গোষ্ঠীগুলির উদ্বেগ সত্ত্বেও সরকার ৩০,০০০ এরও বেশি রোহিঙ্গাকে বঙ্গোপসাগরের একটি দ্বীপ শিবির ভাসান চরে স্থানান্তরিত করেছে।বাসস

Check Also

যত জঙ্গি ধরেছি, তাদের কেউ মাদ্রাসার ছাত্র নন: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

জঙ্গিবিরোধী অভিযানে যত জঙ্গি ধরেছি, তার মধ্যে কেউই মাদ্রাসার ছাত্র নন বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x