নাহিদুল ইসলাম হৃদয়- বিশেষ প্রতিবেদক
মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের শুরুতেই ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে মানিকগঞ্জের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের নিয়ে শুরু হয় সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তুতি। দীর্ঘ নয় মাসের এই বীরত্ত্বগাথা মুক্তিসংগ্রামে মানিকগঞ্জে ছোট-বড় ৪২টি যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধে শহিদ হন ৫৪ এবং আহত হন ১৭জন বীরমুক্তিযোদ্ধা। এছাড়াও, হত্যা করা হয় সাড়ে সাত হাজার নিরীহ মানুষকে।
১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে মানিকগঞ্জ জেলা পাকিস্তান হানাদার মুক্ত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র আক্রমণের ফলে মানিকগঞ্জের মাটি ছেড়ে পালিয়ে যায় পাকিস্তানি সেনা ও তাদের দোসররা।
ঐদিকে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন থানা থেকে আগেই সরে এসে মহকুমা শহরে অবস্থান নিয়েছিল পাকিস্তান হানাদাররা। সে সময়কার মানিকগঞ্জ সিএন্ডবি’র ডাকবাংলো ছিল তাদের সদরদপ্তর। সেখান থেকেই হানাদার ও তাদের দোসররা নিধনযজ্ঞ চালাত। তাঁদের মূল ব্যারাক ছিল বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন বর্তমান পিটিআইয়ের মূল ভবনে।
এদিকে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করার জন্য মানিকগঞ্জে অ্যাডভোকেট খন্দকার মাজহারুল হক চান মিয়াকে চেয়ারম্যান করে ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল হালিম চৌধুরি, মো. মোসলেম উদ্দিন খান হাবু মিয়া, খন্দকার দেলোয়ার হোসেন, সৈয়দ আনোয়ার আলী চৌধুরি, মীর আবুল খায়ের ঘটু ও মফিজুল ইসলাম খান কামালসহ সাত সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছিল।
সে সময় বিপ্লবী কমান্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২৫ মার্চ রাতেই মানিকগঞ্জ ট্রেজারিতে রক্ষিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য শপথ গ্রহণ করা হয়। এর একদিন পর, ২৬ মার্চ ক্যাপ্টেন হালিম চৌধুরীর বাড়ির পাশে আলুর গুদামের পিছনে অস্ত্র প্রশিক্ষণ শুরু হলে এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে হেলিকপ্টারযোগে মানিকগঞ্জ শহরের বিপুলসংখ্যক পাকিস্তানি সেনা প্রবেশ করে।
প্রথমে পাকিস্তানিদের প্রতিহত করার চিন্তা করলেও কৌশলগত কারণে মুক্তিযোদ্ধারা জেলার হরিরামপুর উপজেলার চরাঞ্চলে আশ্রয় নেন এবং অস্ত্র প্রশিক্ষণ শুরু করেন। অপরদিকে, ভারত থেকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফিরেই পাকিস্তানি সেনাদের প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করেন মুক্তিযোদ্ধারা।
মানিকগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধারা ১৭ জুলাই ঘিওর থানা আক্রমণ করেন। সে সময় অস্ত্র ও গোলাবারুদ তাদের হস্তগত হয়।
মানিকগঞ্জে সবচেয়ে বড় যুদ্ধ বলে খ্যাত গোলাইডাঙ্গা যুদ্ধ। এ যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর এক কর্নেলসহ ৮১ নিহত হয়। অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ জেলা হানাদার মুক্ত হয়।
২২ নভেম্বর ঘিওরের তেরশ্রী গ্রামে হামলা করে ৪২ জনকে হত্যা করে পাকিস্তানি সেনারা। মানিকগঞ্জে বিভিন্ন যুদ্ধে ৫৪ জন মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হন। পঙ্গু হন নয় মুক্তিসেনা। বীরত্বের স্বীকৃতি হিসেবে চার জনকে খেতাব দেওয়া হয়।
খেতাবপ্রাপ্তরা হলেন স্কোয়াড্রন লিডার (অব) বদরুল আলম (বীর প্রতীক), ইব্রাহীম খান (বীর প্রতীক), শহিদ মাহফুজুর রহমান (বীর প্রতীক) ও মোহাম্মদ আতাহার আলী খান (বীর প্রতীক) ।
তবে বিগত বছর গুলিতে ১৩ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ পাক হানাদার দিবস ও ১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস কেন্দ্র করে মানিকগঞ্জে মাসব্যাপী বিজয় মেলা অনুষ্ঠিত হলেও এবার তেমন আয়োজন হচ্ছে না।
১৩ ডিসেম্বর প্রথম প্রহরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অল্প কয়েকজন বীরমুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে মশাল জ্বালিয়ে দিবসটি পালনের সূচনা করতে দেখা গেছে।