বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের চাপ ও আমদানি প্রবণতা কমাতে চিনি, পেঁয়াজ, ফুল, বিদেশি ফল, গাড়িসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় ও বিলাসী ১৩৫টি পণ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ হয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সোমবার রাতে এই নির্দেশনা জানিয়ে প্রজ্ঞাপণ জারি করে । ওই দিন থেকেই নতুন এই শুল্ক কার্যকর হয়েছে।
নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপের ফলে এখন থেকে নির্ধারিত পণ্যের ওপর বাড়তি ৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক দিতে হবে। বিদেশি সুগন্ধি, প্রসাধনী বা রূপসজ্জা পণ্য, গাড়ি, গাড়ির টায়ার এবং বিদেশি আসবাবপত্রের ওপর সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বসবে। আর চিনির ওপর শুল্ক বসবে ৩০ শতাংশ।
এর ফলে এসব পণ্য আমদানি আরও ব্যয়বহুল হবে এবং ক্রেতাদের এসব পণ্য ক্রয়ে আরও বেশি অর্থ গুনতে হবে। কারণ আমদানিকারকদের এসব পণ্য আমদানি করতে বিদ্যমান কাস্টমস ট্যারিফ, মূসক, কর ছাড়াও অতিরিক্ত এই নিয়ন্ত্রণ শুল্ক দিতে হবে।
বর্তমানে বিদেশি ফলের ওপর ৫৮ থেকে ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত আমদানি শুল্ক দিতে হয়। সেখান নিয়ন্ত্রণ শুল্ক দিতে হয় তিন শতাংশ পর্যন্ত। নতুন নিয়মে এই শুল্ক তিন শতাংশের পরিবর্তে ২০ শতাংশ দিতে হবে।
প্রসাধনী, গাড়ির সরঞ্জাম, সুগন্ধির ওপর এখনও ১০৪ থেকে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক দিতে হয়। নিয়ন্ত্রণ শুল্কে এসব পণ্যের দাম আরও বাড়বে।
এ দিকে কর্মকর্তারা বলছেন, করোনাভাইরাসের কারণে দেশে যে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে উঠতে এবং বৈদেশিক মুদ্রার সংকট সামলাতে তারা এই নিয়ন্ত্রণ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
মূল্য বৃদ্ধির ফলে ক্রেতারা এসব পণ্য ব্যবহারে বা আমদানিতে নিরুৎসাহিত হবেন বলে কর্মকর্তাদের ধারণা।
কিন্তু দেশেই ফুল, ফল উৎপাদন বা আসবাবপত্র তৈরি হওয়ায় তা বাজারের ওপর প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করছেন তারা।
এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মুখপাত্র সৈয়দ এ মোমেন বলেন, ‘অর্থনৈতিক পুনর্গঠন, বিলাসবহুল পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা ও আমদানি হ্রাস করার উদ্দেশ্যে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোসহ পৃথিবীর সব দেশই বিলাসবহুল পণ্যের আমদানি কমাচ্ছে। পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের জন্য সুরক্ষার ব্যবস্থা নিচ্ছে।’
‘এই লক্ষ্যে আমরা মনে করছি, বিদেশি ফল, ফুল, ফার্নিচার, কসমেটিকসে জাতীয় ১৩৫টি পণ্যের ওপর আমদানি করতে বিদ্যমান যে শুল্ক আছে (শূন্য থেকে ৩ শতাংশ পর্যন্ত), এর পরিবর্তে আমরা ২০ শতাংশ পর্যন্ত রেগুলেটরি ডিউটি (নিয়ন্ত্রণ শুল্ক) আরোপ করেছি।’
বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় এনবিআরের বড় একটি লক্ষ্য বলে তিনি জানান।
যেসব পণ্যের আমদানির ওপর নিয়ন্ত্রণ শুল্ক বসানো হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে— আপেল, আঙ্গুর, কলা, আম, কমলাসহ বিদেশি ফল, ফুল, দাঁত সুরক্ষার সরঞ্জাম, প্রসাধনী, আসবাবপত্র ও সুগন্ধি ২০ শতাংশ, অপরিশোধিত সরিষা তেল ১০ শতাংশ, চিনি ৩০ শতাংশ, পেঁয়াজ ৫ শতাংশ, আঠা ১৫ শতাংশ, গাড়ি ৩০ শতাংশ এবং নাইট্রোজেন, অক্সিজেন ও ফার্স্ট এইড বক্স ১০ শতাংশ।
বাংলাদেশের শুল্ক আইন ১৯৬৯ অনুযায়ী, সংসদের অনুমোদন ছাড়াই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রণ শুল্ক আরোপ করতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশে ৩ হাজার ৪০৮টি পণ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ শুল্ক রয়েছে।