বাংলাদেশের ৯৭ শতাংশ মানুষ সপ্তাহে অন্তত একবার প্রক্রিয়াজাত প্যাকেট খাবার গ্রহণ করে। ৬২ শতাংশ প্রক্রিয়াজাত প্যাকেট খাবারে অধিক (উচ্চ) মাত্রায় লবণ রয়েছে। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
‘প্রক্রিয়াজাত প্যাকেটকৃত খাবারে লবণ নিয়ন্ত্রণ’ জানতে এ গবেষণা করা হয় সম্প্রতি। রোববার ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে এ গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন হাসপাতালের রেজিস্ট্রার (ক্লিনিকাল রিসার্চ) ডা. শেখ মো. মাহবুবুস সোবহান। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এবং রিসলভ টু সেইভ লাইভসের (আরটিএসএল) সহযোগিতায় এ সভার আয়োজন করা হয়। হাসপাতালের চিফ কনসালটেন্ট কার্ডিওলজিস্ট অধ্যাপক ফজিলা-তুন-নেসা মালিক সভায় সভাপতিত্ব করেন।
ডা. শেখ মো. মাহবুবুস সোবহান বলেন, দেশের বাজারে বিদ্যমান প্রক্রিয়াজাত খাদ্যে লবণের উপস্থিতি নির্ণয়ে ২০২১ সালের জুন থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত আট বিভাগীয় শহর থেকে এক হাজার ৩৯৭ ধরনের প্রক্রিয়াজাত প্যাকেট খাবারের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে ১০৫ ধরনের প্রক্রিয়াজাত প্যাকেট খাবার ল্যাবে পরীক্ষা করে দেখা গেছে, সেখানে ৬২ শতাংশ প্রক্রিয়াজাত প্যাকেট খাবারে অধিক (উচ্চ) মাত্রায় লবণ রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ দশমিক ২ শতাংশ খাবারে অত্যাধিক এবং ২৬ দশমিক ৭ শতাংশ খাবারে বেশি লবণের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ৩৮ দশমিক ১ শতাংশ প্রক্রিয়াজাত প্যাকেট খাবারে সঠিক মাত্রায় লবণ রয়েছে।
তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী, একজন ব্যক্তির সুস্থ থাকতে দৈনিক ৫ গ্রাম লবণ গ্রহণের প্রয়োজন। তবে বাংলাদেশে একজন ব্যক্তি গড়ে ৯ গ্রাম লবণ গ্রহণ করে। এটি উদ্বেগের বিষয়।
সভায় মান নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠানের (বিএসটিআই) উপপরিচালক এনামুল হক বলেন- উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, বাজারে থাকা খাবারের প্যাকেটগুলোতে যে লেবেল থাকে, সেখানে সঠিক তথ্য দেওয়া থাকে না। অনেক কোম্পানি খাদ্যপণ্যের উপাদানের সঠিক মাত্রা লুকিয়ে বাজারজাত করে। এতে ভোক্তারা প্রতারিত হন। নগরায়নের জীবনে প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলা কষ্টকর। তাই এই অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ থেকে বাঁচতে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক নাজমা শাহীন বলেন, প্রক্রিয়াজাত প্যাকেট খাবারে অতিরিক্ত লবণ থাকে। তারপরও সাধারণ মানুষ এটি গ্রহণ করছে। এর মূল কারণ সচেতনতার অভাব। তাই ভোক্তাদের সচেতন করতে হবে। এজন্য প্রক্রিয়াজাত প্যাকেট খাবারের ‘ফ্রন্ট অব প্যাক লেবেলিং’ অর্থাৎ সামনের দিকে পণ্যের খাদ্য উপাদানের তথ্য থাকতে হবে। এ জন্য সংশ্লিষ্টদের জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।
জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, খাদ্যে লবণ ব্যবহারের পরিমাণ নিয়ে এই মুহূর্তে কোনো আইন নেই। তাই সাধারণ মানুষকে অতিরিক্ত লবণ গ্রহণের ক্ষতিকর দিক জানাতে হবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এগুলো থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।
অধ্যাপক ফজিলা-তুন-নেসা মালিক বলেন, প্রক্রিয়াজাত প্যাকেট খাবারে লবণের সঠিক ব্যবহারের জন্য সরকারকে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। যেমন সর্বোচ্চ কী পরিমাণ লবণ ব্যবহার করা যাবে, সেটি নির্ধারণ করে দেওয়া। প্যাকেটের সামনে লেবেল ঠিক করে দেওয়া। খাবারে অতিরিক্ত লবণ ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচার চালানো। একই সঙ্গে লবণ খাওয়ার ভুল ধারণা বাদ দিতে হবে।