মাত্র সাড়ে ছয় ও সাত মাসে পবিত্র কোরআন মুখস্থ করে হাফেজা হয়েছেন কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার ‘দারুল উলুম আমিনা’ নামে এক মহিলা মাদরাসার তিন ছাত্রী।
ওই তিন ছাত্রী হলেন- জান্নাতুন্নুর নিলা (৯)।কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার জাঙ্গালিয়া এলাকার সৌদি প্রবাসী সিদ্দীক আহমদের মেয়ে। সামিয়া বুশরা (১০)। জেলার হোসেনপুর উপজেলার গোবিন্দপুর এলাকার সৌদি প্রবাসী আব্দুল্লাহর মেয়ে। মারিয়া ইসলাম (১৩)। একই উপজেলার উত্তর গোবিন্দপুর এলাকার হাফেজ নূরুল ইসলামের মেয়ে।
মাদরাসার সূত্রে জানা গেছে, সামিয়া বুশরার কোরআন হেফজ করতে সময় লেগেছে মাত্র সাড়ে ছয় মাস। জান্নাতুন্নুর নিলা ও মারিয়া ইসলামের কোরআন হেফজ করতে সময় লেগেছে মাত্র সাত মাস।
‘আমাদের মাদরাসার ইতিহাসে সাড়ে ছয় ও সাত মাসে শুধু এই তিনজন শিক্ষার্থীই কোরআন হেফজ করেছে, এখনো অন্য কেউ তা করতে পারেনি।’
মাদরাসা সূত্র জানায়, এমনও ঘটেছে যে বুশরা একদিনে দু্ই পাড়া ও মারিয়া এক পাড়া সবক দিয়েছেন।
হোসেনপুরের দারুল উলুম আমিনা মহিলা মাদরাসার প্রিন্সিপাল মুফতি মাহমুদ হাসান জানান, ওই তিন শিক্ষার্থী তাদের মেধা ও কঠোর পরিশ্রমে তা সম্ভব করেছে। স্বাভাবিকভাবে অন্যদের তিন/চার বছর বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরও বেশি সময় লেগে যায়, সেখানে বুশরা, নিলা ও মারিয়া অল্প সময়ে পুরো কোরআন মুখস্থ করেছে। আমাদের মাদরাসার ইতিহাসে সাড়ে ছয় ও সাত মাসে শুধু এই তিনজন শিক্ষার্থীই কোরআন হেফজ করেছে, এখনো অন্য কেউ তা করতে পারেনি।
তিনি আরও জানান, ২০১৪ সালে আমি এই মাদরাসাটি নিজে প্রতিষ্ঠা করেছি। ২০১৯ সাল থেকে হেফজ বিভাগ চালু করেছি। বর্তমানে মাদরাসায় হেফজ, নূরানী ও কিতাব বিভাগ চালু রয়েছে। সব মিলিয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০০ জন। ১১ জন মহিলা শিক্ষক ও আটজন পুরুষ শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন। এছাড়াও মাদরাসায় চারজন কর্মচারী কাজ করছেন।
তিনি আরও বলেন. মাদরাসায় অনেক শিক্ষার্থী থাকলেও ভালোভাবে পড়াশোনা করার সুবিধার্থে আমরা হেফজ বিভাগে মাত্র ১৬ জন শিক্ষার্থী নিয়ে থাকি।
দারুল উলুম আমিনা মহিলা মাদরাসার আরও কিছু শিক্ষার্থী স্বল্প সময়ে কোরআন হিফজ সম্পন্ন করেছেন। এদের মধ্যে হাফিজা নুদরা কারীমা ১৪ মাসে, হাফিজা মারিয়াম সুমাইয়া ১৫ মাসে এবং হাফিজা সাকিবা আমাতুন্নুর আড়াই বছরে হিফজ শেষ করে।
তিনি জানান, যারা পবিত্র কোরআন মুখস্ত করেছে আমি তাদের সার্বিক সফলতা কামনা করছি। আল্লাহ তায়ালা তাদের দ্বীনের জন্য কবুল করুন।
মারিয়া ইসলামের বাবা হাফেজ নূরুল ইসলাম বলেন, আমার দুই ছেলে ও পাঁচ মেয়ে। দুই ছেলেই হাফেজ। তবে পাঁচ মেয়ের মধ্যে কেউ হাফেজ না। তাই সবার ছোট মারিয়া ইসলামকে হাফেজা বানানোর ইচ্ছে ছিলো পরিবারের। এত তাড়াতাড়ি সে পুরো কোরআন মুখস্ত করে ফেলবে তা কখনো ভাবিনি।
তিনি বলেন, আল্লাহর রহমতে এতো কম সময়েই সে কোরআন মুখস্থ করতে পেরেছে। তাই আমরা সবাই আনন্দিত। আমার বড় ছেলে হাফেজ মাছুম বিল্লাহ স্কলারশিপ নিয়ে মিশরের কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। মারিয়া যাতে কোরআন ও হাদিসের খেদমত করার পাশাপাশি দেশ ও জাতির খেদমতে নিজেকে উৎসর্গ করে সেই দোয়া করি।
সামিয়া বুশরার মা রিনা আক্তার বলেন, আমার মেয়ে কম সময়ে কোরআন মুখস্থ করেছে এতে আমরা আনন্দিত। তারও ইচ্ছে ছিল কম সময়ে কোরআন মুখস্থ করবে, চেষ্টায় সে সফল হয়েছে। আমার দুই মেয়ে ও এক ছেলে। বুশরা মেজো। বড় মেয়ে দওরা হাদীসে পড়ে ও ছোট ছেলে হেফজ বিভাগে পড়ে। বুশরা যাতে জীবনে সফল হতে পারে তাই সবার কাছে দোয়া চাই।