২৫ আগষ্ট ২০২২ সকাল দশটা, আমার ছুটা বুয়া হালিমা ঘরে ঢুকতে ঢুকতেই বলে, “খালা যার যায় সেই বুঝে সে কি হারালো। মুহূর্তে মেয়েটা নাই হয়ে গেল”। ওর কথা শুনেই বুঝতে পারি গতকালের ঘটনার কথা বলছে। ঢাকা শহরের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত নামকরা একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নবম শ্রেনীর এক শিক্ষার্থীর ২২ আগষ্ট ২০২২ মঙ্গলবার আত্মহত্যা করেছে। নিজেদের বসবাস করা বাসস্থান এর ১২ তলা ভবনের ছাদ থেকে সে লাফিয়ে পড়ে। ছাদে উঠার পর লাফ দেয়ার আগে ওকে অনেকেই দেখে, সবাই নিষেধ করে। কিন্তু সে এক পর্যায়ে ঠিক লাফ দেয়৷
একটু পিছনে যাই, সময়টা ২০০২ সাল। আমার বড় সন্তানকে নিয়ে একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাই প্রথম শ্রেনীর ভর্তি পরীক্ষা দিতে। পরীক্ষা বলতে উনারা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে সাক্ষাত করে একটা ফরম দেন। ফরম পূরণ করে জমা দেয়া হয়। পরে লটারির মাধ্যমে যারা ভর্তির সুযোগ পায় তাদের ভর্তি করায়। যদিও এই লটারি সিস্টেমকে ব্যক্তিগত ভাবে আমি মোটেই বিশ্বাস করি না। লটারি হলে সেটা পাবলিকের সামনেই হবে। বলে রাখা ভালো সব শিক্ষার্থীদেরকে উনারা ফর্ম দেননা। সাক্ষাতে যে মৌখিক জিজ্ঞাসা হয় তার উপরে নির্ভর করে, শারীরিক পরীক্ষা নিয়ে তারপর যাদেরকে উনাদের নিয়মে পাশ বলা চলে তাদেরকে ফর্ম দেন৷ যথারীতি আমি আর আমার হাসবেন্ড মেয়েকে নিয়ে উপস্থিত। মেয়েকে কয়েকটা প্রশ্ন করে, সে জবাব দেয়। মেয়ে একটা মিশনারী স্কুলে প্লে ক্লাস পড়ে। কিন্ডারগার্ডেনে ওকে নার্সারি ক্লাসে ভর্তি করাতে নিলে তারা বলে, ও তো নার্সারির সব পড়াই পারে, ওকে কেজি ক্লাসে দিন। আমরা তাই করি। তার মানে বয়স ও ক্লাস অনুপাতে সে ২০০৩ সালে ক্লাস ওয়ানে পড়ার কথা। নার্সারি ক্লাস না পড়ার কারণে তাকে ২০০২ সালেই প্রথম শ্রেনীর ভর্তি যুদ্ধে নামতে হয়।
ভর্তি সাক্ষাতকারে সে মৌখিক সবই পারে। উনাদের নিয়ম অনুয়ায়ী দাঁত দেখা হয়, মেয়ের দাঁত তখনও পড়েনি। মাথার উপর দিয়ে কান ধরতে বলে, সে সেটাও পারে। যিনি সাক্ষাতকার নিচ্ছেন তিনি বারবার মেয়ের পা থেকে মাথা দেখছেন। মেয়েকে নিয়ে পাশের রুমে গেলেন, পাশের রুমের উনিও মেয়ের পা থেকে মাথা দেখেন। এই দেখার কারণ হল মেয়ের লম্বাটা। অনেক ভেবে তিনি ফর্ম দিলেন৷ ফার্ম হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আমি উনাকে বললাম, যতবার মেয়ের পা থেকে মাথা দেখেছেন তার মাঝে একবার যদি অর্জিনাল চোখ দিয়ে আমাদের দিকে তাকাতেন, বুঝতেন ও কোন পরিবারের সন্তান। ঘটনা খুলে বলি, আমি লম্বায় পাঁচ ফিট সাড়ে ছয় ইঞ্চি, আর আমার হাজবেন্ড লম্বায় পাঁচ ফিট সাড়ে আট ইঞ্চি। আমাদের সন্তান কি দুইফিট হবে? (সব আল্লাহর দান)।
আমার সন্তান ভর্তির সুযোগ পায় নি, আমার কোন আফসোস ও নেই। এই ঢাকা শহরের আরেকটা নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ছিলেন আমার ননাসের স্বামী। অনেকে আমাকে বলেছে আমার মেয়ের জন্যে উনাকে বলতাম উনি যেন সেই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করে দেন। আমি তা করিনি, আমি সন সময় মেয়েদের বলেছি নিজের যোগ্যতায় যেখানে ভর্তির সুযোগ পাবে সেখানেই পড়বে। বরং আমি অন্যদের বাচ্চাদের জন্যে সুপারিশ করি, স্কুল কলেজে অনেক বাচ্চাকে সুপারিশ করে ভর্তি করিয়েছি৷ কিন্তু নিজের সন্তানের জন্যে কারো কাছে যাই নি।
ষষ্ঠ শ্রেনীতে সবাই আবার ভর্তি যুদ্ধে নামে কিন্তু আমি নামিনি। একই ভাবে ছোট মেয়ের ক্ষেত্রে আমি আর ওই ধরণের প্রতিষ্ঠানের গেইটেও যাইনি। আমার একটাই কথা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এর অবদান অনেক কিন্তু আসল হল শিক্ষার্থী আর ওর মেধা। একই বোর্ডে একই প্রশ্নপত্রে সব শিক্ষার্থীই বোর্ড পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে। তবে কেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব অন্যরকম হবে?
বড় মেয়ে যখন ৮ম শ্রেনীতে, তখন একজন ইংরেজি শিক্ষকের কাছে যাই ওকে প্রাইভেট পড়াতে। স্যার জানান এই ব্যাচ পুরোটা তথাকথিত নামকরা স্কুলের। ও একা ওদের সাথে…। আমি বললাম, স্যার আমি মেয়েকে ৮ম শ্রেনী উপযোগী শিক্ষা দিতে এনেছি, ওরাও ৮ম শ্রেনীর সমস্যা হবে না। তবে যখন ওদের রচনা বা প্যারাগ্রাফ লিখতে দিবেন ওকে ওর সিলেবাস থেকে দিবেন। স্যার শুনে খুবই খুশি হলেন। মেয়েকে পড়তে দিয়ে আমি বাইরে বসে বসে পত্রিকার লেখা লিখতাম। ওই তথাকথিত প্রতিষ্ঠানের অভিভাবকরা যখন শুনতেন আমি অন্য স্কুলের উনারা আমার দিকে চিড়িয়াখানার জন্তু দেখার মত তাকাতেন। আমি পাত্তাই দিতাম না।
সব প্রাইভেট বা কোচিংয়ের শিক্ষক এক নয়। আপনাদের উচিৎ সব শিক্ষার্থীদের সাথে একই আচরণ করা। আপনারা ক্লাসে নামকরা প্রতিষ্ঠানের উদাহরণ দেন, আপনারা কি জানেন না এই শিক্ষার্থীদের কে বা কারা তৈরি করেছে? দেশের বা শহরের প্রতিটা প্রাথমিক বিদ্যালয় ওদের তৈরি করে। এরপর ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে সে সব শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভালো ফলাফল দেখিয়ে তাহারা নামকরা প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি পায় আর আপনারা অন্য শিক্ষার্থীদের সামনে তাচ্ছিল্য ভাষায় কথা বলেন৷ যে কোন প্রাইভেট বা কোচিংয়ের শিক্ষক বলতে পারেন কোন যুক্তিতে আমি এসব বললাম। মনে রাখবেন আমি প্রমাণ ছাড়া কাজ করিনা। নিজের পেশাগত কারণে হোক আর একজন অভিভাবক হিসাবে হোক আমি প্রায় প্রায় কোচিং সেন্টারের সামনে বা ক্লাসের পাশে সামনে বসে থাকি।
অমন নামকরা প্রতিষ্ঠান হোক বা প্রাইভেট বা কোচিংয়ের শিক্ষক হোক না কেন। শতজনের প্রশ্নের এমন প্রশ্নের জবাব দিতে আমি প্রস্তুত। কারণ সত্যের জোর হল আসল জোর। নামকরা (ছেলেদের) এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাংলার স্যারের কাছে আমার মেয়ে সহ ১০ জনের একটা ব্যাচ নিয়ে পড়াতে যাই। ওরা সবাই একই স্কুলের। স্যারের সাথে আমাদের সময় মিলেনা বলে রাত নয়টা থেকে দশটা উনার বাসায় পড়াতে যাই আমরা। স্যারকে শুধু বলেছিলাম, স্যার ওদেরকে আপনি ব্যায়করণ টা বুঝিয়ে দিন। গতানুগতিক পড়া লাগবে না। স্যার তাই করেন। স্যারের কাছে পড়ে আমার মেয়ে বলেছিল, মা স্যারের তো বয়স হয়েছে। উনার রক্তে রক্তে ব্যাকরণ, স্যার চলে গেলে কে এমন করে শিক্ষাবে। স্যারের উচিৎ উনার উত্তরাধিকার কাউকে তৈরি করে দিয়ে যাওয়া। শিক্ষক বলে কাদের তা বুঝাতেই এই ঘটনা বলা।
এবার আসি অন্য এক বিষয়ে। এসএসসি টেস্ট পরীক্ষায় মেয়ের প্রশ্নের জবাব লেখার মান তেমন ভালো না। একজন স্যারের কাছে দুইটা পরীক্ষা দেওয়া হয়। উনি বললেন, ও সবই পারে কিন্তু সাজাতে গিয়ে সমস্যা করে। অত:পর স্যার নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক শিক্ষার্থীর পরীক্ষার দুটো খাতা ওকে দেখায়। ও সেগুলো দেখে, বুঝে, পরের পরীক্ষায় সে অনেক ভালো করে। এবং এসএসসি পরীক্ষায় ও ভালো করে। আপনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নাকি প্রাইভেট কোচিং সেন্টারের শিক্ষক সেটা বড় কথা নয়, আসল কথা হল আপনি একজন শিক্ষক। আপনার কাছে ওরা শিখতে এসেছে।
আমি প্রায় প্রয়োজনে বা দায়িত্বে হোক বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, প্রাইভেট ও কোচিং সেন্টারে যাই। শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের সাথে কথা বলি, ওদের ওনাদের কথা শুনি। সেদিন বাসায় এসে হাজবেন্ডকে বলি, জানো কোন জায়গায় যদি নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৩/৪ জন অভিভাবক থাকেন আর অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২/৩ জন অভিভাবক থাকেন। নামকরারা মনে করে তাহারা হাতি আর অন্যরা পিঁপড়ে। অনেক অভিভাবক বলেন, আপনাকে অনেক জায়গায় দেখি। আমি বলি হ্যাঁ দেখেন কখনও অভিভাবক হিসাবে কখনও পেশাগত কারণে।
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার অবস্থা কোন দিকে যাচ্ছে, বা কি অবস্থায় আছে তা প্রায় সকলেরই জানা। কেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ার পরও প্রায় সব বিষয় বাইরে পড়তে হচ্ছে? এমন ও অনেক আছে এক একটা বিষয় দুজন স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়ে, কিন্তু কেন? ২০০৮ সালের জাতীয় শিক্ষানীতি হাতে পেয়ে আমরা খুশিতে গদগদ হয়েছিলাম। আজ ২০২২ সাথে এসে এই শিক্ষা ব্যবস্থাকে কতবার যে ঢুবাতে হল কতবার যে ভাসাতে হল তা আমাদের গুনীজনেরাই ভালো জানেন। অত:পর শুনলাম সম্ভবত ২০২৪ সাল থেকে মাধ্যমিকে বিজ্ঞান, মানবিক ও বানিজ্যিক বিভাগ থাকবে না। কলেজে গিয়ে ভাগ হবে। বলতে হয় যাহা লাউ তাহাই কদু। আবার এটাও বলা যায় মন্দের ভালো। যে যুদ্ধ ৮ম শ্রেনীর ফাইনাল পরীক্ষায় হত সে যুদ্ধ দু বছর কমে এসএসসির পরে হবে।
সবাই চায় তার সন্তান ভালো করুক, তার সন্তান প্রথম দ্বিতীয় হোক। কিন্তু আমি তা কখনও চাই নি। আমি চেয়েছি আমার সন্তান তার মেধাকে বিকশিত করে কাজে লাগাক। বিজ্ঞান বিভাগে থাকলে উচ্চশিক্ষার জন্যে সে যে কোন পথ বেছে নিতে পারে বলে, প্রায় অনেকেই চায় তার সন্তানকে বিজ্ঞান বিভাগে পড়াতে। কিন্তু আসন সংখ্যা বলে একটা কথা তো আছে। বিগত দিনে দেখে এসেছি দেখছি ৮ম শ্রেনীতে উঠলেই তথাকথিত নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মুখের হাসি চলে যায়। ওষুধ ছাড়াই চিনি রোগ কমে যায়। এর একটাই কারণ সন্তানকে বিজ্ঞান বিভাগ পেতেই হবে। কারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞান বিভাগের আসন সীমিত। অনেক অভিভাবক নিজেই বলেন, এবার আমাদের যুদ্ধের বছর। শুনি আর হাসি আমি।
আগেই বলেছি আমি সন্তানদের প্রথম বা দ্বিতীয় হতে বলিনা। পড়ার চাপ নেই এটা বলা যাবে না। উচ্চশিক্ষার জন্যে ভালো কোথাও ভর্তি হতে হলে তাকে ভালো করতে হবে। ছোট মেয়ে এবার একাদশে পড়ে। ও এসে বলে, মা মেয়েরা প্রেম করার সময় কই পায় বুঝিনা। কলেজ, কোচিং করে বাসায় এসে মনে হয় নিজের নাম ভুলে যাই। আর ওরা দেখি মোবাইল টিপে আর টিপে। আমি মেয়েদের সাথে বন্ধুর মত আচরণ করি বলে ওরা আমায় সব বলে। ক্লাসের কোন মেয়ে কোচিং এর কোন মেয়ের বয়ফ্রেন্ড কে কার সাথে কে কফি খেতে যায় সবই বলে। আমি গল্প করি ওদের সাথে।
আমাদের গতিপথ বদলে দেয়ার আরেক যন্ত্র হল মোবাইল। অনেক অভিভাবক বুঝে বা না বুঝে সন্তানের হাতে তুলে দেন একটা স্মার্ট মোবাইল। সেদিন এক শিক্ষক বললেন, “এই এক মোবাইলে রয়েছে ধর্মীয় বাণী আবার এই একই মোবাইলে রয়েছে প্রাপ্তবয়স্কদের উপযোগী দেখার কিছু। মোবাইল হাতে নিয়ে চিন্তা কর তুমি কোন দিকে যাবে।”
করোনা আমাদের এই যন্ত্রের সাথে আরো অঙ্গাঙ্গী করে তুলেছে। শিক্ষা-কার্যক্রম চালিয়ে নিয়ে অনলাইন ক্লাস শিক্ষার্থীদের মোবাইল এর কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। ছোট মেয়ে এসে বলে, ওর সব বান্ধবীদের স্মার্ট মোবাইল আছে, শুধু ওর নেই। স্মার্ট মোবাইল এখন না থাকা মানেই……..। আপনি সন্তানের হাতে একটা স্মার্ট মোবাইল ধরিয়ে দিয়ে চিন্তাহীন ভাবে আছেন, আপনার কি জানা উচিত না সে মোবাইল দিয়ে কি করে। শিক্ষা ব্যাবস্থা আপনার সন্তানের ঘাড়ে ভারী বোঝা তুলে দিতে পারে সহজেই, সেই বোঝা বহনের ক্ষমতা আপনার সন্তানের কতটুকু আছে তা আপনাকেই দেখতে হবে।
পাঠ্যবই হিসাবে সব ক্লাসের শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হয় ডজন ডজন বই৷ অনেক প্রতিষ্ঠান এগুলো খুলেও দেখে না। বাইরের শিক্ষকদের লেখা মোটা মোটা বই শুধু ব্যাগের ওজন বাড়ায় না ওর মেরুদণ্ডকেও বাঁকা করে দিচ্ছে যা আপনি বুঝেন না। আর মহামূল্যবান নোটবুক তো আছেই। নোটবুক আমিও কিনি সেটা ততটুকু ব্যবহারের জন্যে যতটুকু তার শরীরে ও মস্তিষ্কের নিতে পারবে।
শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করার বিষয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক বলেছেন, “পরপর দুই পরীক্ষায় খারাপ করায় অভিভাবক ডাকবেন বলেছেন।” এই ডাকা কথাটা কোন সূরে বের হয়েছিল আপনার বা আপনাদের মুখ দিয়ে। ও ক্লাসের প্রথম হওয়া শিক্ষার্থী ওকে তো আপনার অনেক ভালো বুঝার কথা। আসলে গড়া জিনিসের কদর অন্যরকম। টুপ করে পাওয়া ফলের মর্যাদা কয়জন দিতে পারে। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের মুখের একটা বাক্য, “অভিভাবক ডাকবেন” নিশ্চই ডাকবেন, কারণ এক একটা প্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার বাচ্চা, আপনার হাজার হাজার শিক্ষার্থী বা সন্তান। কিন্তু ওই অভিভাবকের হয়ত এটাই একমাত্র বুকের ধন। নিজের দায় এড়াতে অনেকেই পারি অন্যকে দোষারোপ করতে। এখনকার অনেক অভিভাবক সন্তানকে সময় দিতে পারেন না বা দেননা, সেটা বলার সময় কিন্তু অনেক ছিল বা আছে। তাই দায় না এড়িয়ে আসুন না আগামী প্রজন্মের জন্যে একটা সুন্দর পরিবেশ গড়ে তুলি।
শিক্ষক ও ডা. মো: রিপন বিশ্বাস ফার্মগেটে অবস্থিত একটা কোচিংয়ে বায়োলজি পড়ান। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা নিয়ে তিনি একটা ভিডিও দেন৷ নবম শ্রেনীর মেয়েটিকে যখন ভ্যানে করে হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হয় তখন তিনি রাস্তায় ছিলেন। তিনি শিক্ষা ব্যবস্থার অব্যস্থাপনাকে দায়ী করছেন এমন তাজা প্রান নিভে যাওয়ার কারণ হিসাবে। তিনি আরো বলেব, যে একবার ১০০ তে ১০০ পায় সে আর কখনও ৯৮ পেতে পারবে না। অভিভাবকদের এমন মানসিকতার জন্যে অনেক শিক্ষার্থী নিজের বোধবুদ্ধি হারায়। আর প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টি ভঙ্গিও এর জন্যে অনেক দায়ী।
গণমাধ্যমকর্মী ফারাবী হাফিজ নিজের অনলাইনে একটা ভিডিও দেন নবম শ্রেনীর শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা নিয়ে। সেখানে তিনি বলেন, “পরপর দুইবার একই বিষয়ে খারাপ করায় তার অভিভাবককে ডাকা হবে। এটা সে মেনে নিতে পারেনি। স্কুলে ভর্তির পর থেকে বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার প্রস্তুতির মতো সব সব শিখতে হবে বাচ্চাকে। প্রথম দ্বিতীয় তৃতীয় তাকে হতেই হবে, থাকতেই হবে। এই মানসিকতায় কেড়ে নিল মেয়েটিকে।” ফারাবী অন্যদেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে বলেন,”বাহিরের দেশের প্রথম দ্বিতীয় তৃতীয় ক্লাসে অক্ষর জ্ঞ্যান দেয়া হয়না। শারীরিক ও মানসিক ভাবে তৈরী করে বাচ্চাদের, আর আমাদের দেশে চলে প্রথম দ্বিতীয় তৃতীয় হওয়ার না থাকার লড়াই।”
২৫ আগষ্ট ২০২২ দুপুর দুইটায় সময় নিউজে ছাত্রী আত্মহত্যা নিয়ে নিউজ করা হয়। সেখানে বলা হয় নবম শ্রেনীর শিক্ষার্থী উচ্চতর গনিতে খারাপ করে। স্কুলের শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট না পড়ার কারণও তুলে ধরা হয়, যা ছাত্রীর অভিভাবক ও অন্য শিক্ষার্থীদের তথ্য মতে। একই সময়ে দেশের অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ও এমন অভিযোগের কথা বলা হয়। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, একই প্রতিষ্ঠানে পড়ে সেই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়া নিষেধ বলার পর ও এমন অভিযোগ সত্যি মেনে নেয়ার নয়।
লেখক: সাহিত্যিক, কলামিস্ট ও প্রাবন্ধিক
ই ডাক: rbabygolpo710@gmail.com