নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ ০৩ আগস্ট শনিবার ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশেষ বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদানকালে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মোঃ আব্দুর রহমান এসব কথা বলেন।
কোনো অবস্থাতেই কোনো সহিংস শক্তি তোমাদেরকে যেন ব্যবহার করতে না পারে, সেদিকে তোমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে। তোমাদের সমস্ত অভাব অভিযোগ, সমস্ত দাবী দাওয়া নিশ্চয়ই সরকারপ্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা শুনবেন ও ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তোমাদের দাবী মেনে নেয়া হয়েছে। এখন কারো শিখিয়ে দেয়া দাবী নিয়ে তোমরা রাস্তায় বিশৃঙ্খল করতে এসো না। প্রতিটি মৃত্যুর বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে বিচার করা হবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুর রহমান বলেছেন, পূর্বে ছাত্র আন্দোলনে কখনোই কোনো স্থাপনার উপর আঘাত করা হয়নি। তিনি বলেন, ২০১৮ সালেই ছাত্রদের দাবীর প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারি চাকুরিতে কোটা বাতিল করে দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে হাইকোর্ট সে আদেশ বাতিল করলে সরকারই আপীল বিভাগে আপীল করে। এরপর সরকার শুনানির তারিখ এগিয়ে আনার উদ্যোগ নিলে আপীল বিভাগ শুনানির তারিখ এগিয়ে এনে ছাত্রদের দাবী অনুযায়ী কোটা সংস্কার করে। এটা তাদের বড় অর্জন। যারা আন্দোলন করছিল এ রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে রাস্তায় না নেমে তাদের বরং উৎসব করা উচিৎ, আনন্দ করা উচিৎ। কারণ তাদের দাবীর চেয়েও তারা বেশি পেয়েছে। তবে এরপরেও যদি ভাংচুর হয়, আন্দোলনের নামে অস্থিরতা তৈরি করা হয়, যদি পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়, বোমা নিক্ষেপ করা হয়, বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিসংযোগ করা হয়, তাহলে অবশ্যই আমরা বলবো এই ঘটনার সঙ্গে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা এর সাথে কোনোভাবেই জড়িত নয়। ছাত্রদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা মেধায়, মননে আজকে জাতির কাছে অনেক বড় সম্মান অর্জন করেছেন। আপনাদের অর্জনের গভীরতা যদি এই দেশের মানুষের কাছে স্থায়ী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হয়, মানুষের হৃদয়কে যদি জয় করতে হয়, মানুষের অন্তরে আপনাদের অবস্থানকে যদি সুসংহত করতে হয় তাহলে অবশ্যই এই ধ্বংসযজ্ঞ কর্মকান্ডের সাথে আপনাদের কোন সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে না।
মন্ত্রী বলেন, কয়েকদিনের সহিংস ঘটনায় অনেক প্রাণহানি হয়েছে। সেই প্রাণহানির তালিকা সরকার প্রনয়ণ করছে। সরকার প্রধান প্রতিটি হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে আহতদের দেখতে গেছেন। তিনি বলেছেন, প্রতিটি মৃত্যুর বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে বিচার করা হবে। সেই তদন্তের সহযোগিতার জন্য বিদেশিদের কাছে সরকার প্রধান সাহায্য পর্যন্ত চেয়েছেন। হত্যার সংগে জড়িত প্রত্যেককে বিচারের আওতায় আনা হবে। এই ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।
মন্ত্রী বলেন, একাত্তরের পুরাতন জঙ্গিরা, পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা আজকে এই বাংলাদেশটাতে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটাতে চাই। কিন্তু ওরা জানে না বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একটা নেতাকর্মী বেঁচে থাকতে তা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষকে যে শেখ হাসিনা পাহাড়সম উন্নয়ন উপহার দিয়েছেন; মেট্রোরেল, পদ্মাসেতু, গ্রামেগঞ্জে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, গ্রামকে শহরে রুপান্তর করেছেন। বাংলাদেশের অর্থনীতির সূচক সারা বিশ্বের মানুষের কাছে প্রশংসিত হয়েছে। শেখ হাসিনা নিরন্তর পরিশ্রম করে বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য বিরামহীন কাজ করে যাচ্ছেন। সেই বাংলার মানুষ বেঁচে থাকতে শেখ হাসিনার পতন ঘটনো সম্ভব হবে না।
মন্ত্রী বলেন, রাজনৈতিকভাবে বিরোধী অবস্থান থাকার কারণে বিনা কারণে মধুখালী, বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গায় কাউকে কোনো ধরণের হয়রানি করা হয়েছে একথা কেউ বলতে পারবে না। আমাদের রাজনৈতিক অংগীকার আমরা এখানে রাজনৈতিক সহঅবস্থান করবো। যার যার রাজনীতি সে সে করবে। কারো জন্য কেউ প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়াবে না। এটাই বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আদর্শ। কিন্তু আজ কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে একটা নৈরাজ্যকর, অস্থিতিশীল, সহিংসতা পরিবেশ তৈরি করে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর টোল প্লাজা, মেট্রোরেল, দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অফিস, সেতু ভবন, গাড়ি ভাঙচুরসহ সরকারি সম্পদ বিনষ্ট করা হয়েছে। ছাত্রদের আন্দোলনের বহিঃপ্রকাশ কেন এই স্থাপনাগুলোতে হবে তা বোধগম্য নয়। ৭১ সালে যেভাবে নৃসংস ঘটনা ঘটানো হয়েছিল, এই কয়েকদিনে একইভাবে বাংলাদেশে নৃসংস ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
দলীয় নেতা কর্মীদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, আপনাদের আজ প্রতিজ্ঞা নিতে হবে মরতে হলে বীরের মত মরবো, বীরের জাতির সন্তান হিসেবে মরবো। আপনাদের উন্নয়নের দায়িত্ব আমার। ইতোমধ্যে দেড়শ কোটি টাকার প্রকল্প আমি হাতে নিয়েছি। কিন্তু এই সমস্ত সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কারণে হয়তো তা বাধাগ্রস্ত হবে। কিন্তু এই মেঘ থাকবে না। এই মেঘ কেটে যাবে। তিনি নেতাকর্মীদের সমস্ত ভুল বোঝাবুঝি ও দূরত্ব ভুলে গিয়ে একই পরিবারের সদস্যের মত একই মায়ের সন্তান হয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়ানোর আহবান জানান। আপনারা যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়াতে পারেন কোনো শক্তিই এই দুরভিসন্ধি চরিতার্থ করতে পারবে না বলেও তিনি এসময় মন্তব্য করেন।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, কেউ যদি ভাবেন, বিপদ হলে অন্যের হবে। আমার কিছু হবে না। কিন্তু বিপদ আসলে কেউ ভালো থাকতে পারবেন না। সুতরাং এই বিপদ থামানোর জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। শুধু নির্বাচনকালীন সময়েই নয় বরং সকল সংকটে আপনাদেরকে জাগ্রত থাকতে হবে।
ফরিদপুরের ছাত্রদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, আমি তোমাদের পড়াশোনার মান উন্নয়নের জন্য স্কুলে কম্পিউটার, ল্যাব, বিজ্ঞান ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গড়ার পরিকল্পনা করেছি। তোমরা পড়াশোনার টেবিলে যাও, পড়াশোনার জন্য নিজেদেরকে তৈরি করো, এই জাতির ভবিষ্যত হিসেবে নিজেদের নিয়ে গর্ব করার জন্য তোমরা কাজ করো। লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করো। কোনো অবস্থাতেই ওই সহিংস শক্তি তোমাদেরকে যেন ব্যবহার করতে না পারে, সে দিকে তোমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে। তোমাদের সমস্ত অভাব অভিযোগ, সমস্ত দাবী দাওয়া নিশ্চয়ই সরকার প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা শুনবেন ও ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তোমাদের পুরো দাবী মেনে নেয়া হয়েছে। এখন কারো শিখিয়ে দেয়া দাবী নিয়ে তোমরা রাস্তায় বিশৃঙ্খল করতে এসো না।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ধৈর্যের শেষ সীমায় গিয়েও মানুষকে ভালোবেসে বুকে টেনে নেয়। তারপরেও যদি কোনো কোনো দুষ্কৃতিকারী আমাদের ভাইদের বুকে আঘাত করতে চাই, নিশ্চয়ই আমাদের আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা তা প্রতিরোধ করবে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা যদি থাকে তাহলে বাংলাদেশ টিকবে। শেখ হাসিনা না থাকলে বাংলাদেশ থাকবে না। সুতরাং এই বাংলাদেশের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য আপনাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নাই।
বিশেষ বর্ধিত সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হক বকু ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রতন কুমার বিশ্বাসসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।