ঢাকা , বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
গণভোটের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে ইসি, কার্যক্রম জোরদার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক নয়, তবে ভোটের আগে উন্নতি হবে: সিইসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের গ্রুপ ও সূচি প্রকাশ ভয়াবহ আগুনে পুড়ছে কড়াইল বস্তি, নিয়ন্ত্রণে ১৯ ইউনিট সিনহা হত্যা মামলায় বিভ্রান্তি ছড়ানো ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন সিদ্ধিরগঞ্জে মসজিদ ভাঙার অভিযোগ মিথ্যা: প্রতিবাদ জানালেন শহীদুল ইসলাম কুমিল্লা বুড়িচং সীমান্তে অজ্ঞাত ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার রামগঞ্জে ভাতিজার ছুরিঘাতে চাচার মর্মান্তিক মৃত্যু গাজা যুদ্ধে মৃত্যুর সংখ্যা এক লাখের বেশি: রিপোর্ট রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসের মান্যবর রাষ্ট্রদূতের সাথে বাংলাদেশ প্রবাসী সাংবাদিক ফোরামের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

গণভোটের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে ইসি, কার্যক্রম জোরদার

সাংবাদিক

গণভোট অধ্যাদেশ (আইন) হওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি গণভোটেরও পূর্ণ প্রস্তুতি শুরু করেছে তারা। যদিও ইসির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, একই দিনে দুই ভোট আয়োজনের মতো দেশের নির্বাচনী ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ‘চ্যালেঞ্জ’ মোকাবিলায় আগেভাগেই জোরেশোরে নেমে পড়েছেন তারা।

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, আগে থেকেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ইসি। নতুন দায়িত্ব হিসেবে গণভোট করতে হবে। সেটাতেও খুব বেশি সমস্যা হবে না। কেননা জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির সঙ্গে অল্প কিছু বিষয় যোগ করলেই সেটি হয়ে যাবে।

জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি ও গণভোট নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতবিরোধের মধ্যে গত ১৩ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের ঘোষণা দেন। সে অনুযায়ী একই দিনে দুই ভোটের প্রস্তুতি নিতে ইসিকে চিঠি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ থেকে এই চিঠি পাঠানো হয়। মঙ্গলবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘গণভোট অধ্যাদেশ-২০২৫’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদনের পর রাতেই গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার।

এর আগে শনিবার এক অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনও বলেছেন, একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট করা চ্যালেঞ্জিং। এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি পূর্ববর্তী নির্বাচন কমিশন কখনও হয়নি।

আগে থেকে নেওয়া জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুই নির্বাচন করতে হবে একই রিসোর্স ব্যবহার করে। এটার জন্য অনেকগুলো অতিরিক্ত কাজও করতে হবে। কিন্তু আইন মেনে একইদিনে নির্বাচন ও গণভোট করতে হবে। এটা ছাড়া দ্বিতীয় কোনো অপশন নেই।

গত কয়েকদিনে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, গণভোট আয়োজনের চ্যালেঞ্জিংয়ের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যেও এক ধরনের উদ্দীপনা তৈরি করেছে। বিশেষ করে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা শাখার কর্মকর্তারা নতুন করে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। অনেক কর্মকর্তাই সমকালকে বলেন, ‘অধ্যাদেশ হওয়ায় গণভোট নিয়ে আর কোনো সংশয় নেই। এখন পূর্ণোদ্যমে প্রস্তুতি নিতে হবে তাদের।’

গত বছরের ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গঠিত এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছিল। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ও দাবির মুখে অন্তর্বর্তী সরকার রোজার আগে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিলে ইসি’র এই প্রস্তুতি পর্ব জোরদার হয়। গত ২৮ আগষ্ট ২৪ দফা কর্মপরিকল্পনা নিয়ে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ বা পথনকশা ঘোষণা করে ইসি। এরই মধ্যে একই দিনে গণভোটের ইস্যু চলে আসায় আরেক দফা রোডম্যাপ ঘোষণা করা হতে পারে বলেও জানান ইসি’র কয়েকজন কর্মকর্তা। সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) এবং নির্বাচনী আচরণবিধিতেও কিছু নতুন বিষয় যুক্ত করা হবে। সবকিছু মিলিয়ে ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে ভোটের তপসিল ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা।

ইসি ঘোষিত জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপে বর্ণিত বেশিরভাগ কর্মপরিকল্পনা শেষ পর্যায়ে। অংশিজনের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ পর্ব শেষ হয়েছে। ২৭ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান এবং ২৯ নভেম্বর আন্ত:মন্ত্রণালয় বৈঠকের দ্বিতীয় পর্ব শেষ হবে। যেখানে ভোটের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, বাজেট বরাদ্দসহ খুটিনাটি সব প্রস্তুতি শেষ হবে।

ব্যয় বাড়বে ২০ শতাংশ
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আগেই প্রায় দুই হাজার আটশ’ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রাথমিক হিসেব কষে রেখেছিল ইসি। পরে আরও কিছু বিষয় যোগ হওয়ায় এই ব্যয়-বরাদ্দ শেষ পর্যন্ত তিন হাজার কোটি টাকায় দাঁড়াতে পারে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।

কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে একইদিনে গণভোট আয়োজন করায় আগের ব্যয়-বরাদ্দের সঙ্গে কিছুটা যোগ করলেই হবে। আর আলাদা দিনে দুই ভোট করতে হলে আলাদা আলাদা বাজেটে অনেক বেশি খরচ হবে। কেননা তখন দুই দফায় একই মাপের আয়োজন করতে হবে দুই ভোটের জন্য। আর এখন একই জনবল ও সরঞ্জামের সঙ্গে বাড়তি কিছু যোগ করে ভোট করলেই চলবে।

এক্ষেত্রে ব্যয় কতটা বাড়বে- এমন ধারণা নেওয়ার চেষ্টাও চলছে ইসি’র তরফে। কয়েকজন নির্বাচন বিশেষঞ্জের বরাতে ইসি কর্মকর্তারা জানান, গণভোট আয়োজনের জন্য আগের বাজেটের চেয়ে ২০ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ছয়শ’ কোটি টাকা বেশি প্রয়োজন হবে। সে অনুযায়ী বাজেট প্রস্তুতি চলছে। আগামী ২৭ নভেম্বর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে দ্বিতীয় দফার বৈঠকেও বাজেটের বিষয়টি আলোচনায় উঠবে।

সম্প্রতি ইসির সংলাপে অংশ নিয়ে নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও ইসি’র সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী বলেন, জাতীয় নির্বাচননের ভোটকেন্দ্র, ভোটকক্ষ এবং ভোট সরঞ্জাম দিয়েই গণভোট আয়োজন সম্ভব। তবে গণভোটের জন্য নতুন করে হ্যাঁ-না ভোটের ব্যালট পেপার ছাপাতে হবে। সচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণাও চালাতে হবে। এজন্য বাড়তি সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ ব্যয় হতে পারে।

নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ সমকালকে বলেন, সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে একসঙ্গে গণভোট করায় বড় ব্যয়সাশ্রয় হচ্ছে। দুই নির্বাচন একত্রে করায় অনেক টাকা বেঁচে যাচ্ছে।

প্রয়োজন নতুন বিধিমালার
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আরপিও সংশোধন ও আচারণ বিধিমালাসহ সব ধরনের আইন-বিধি তৈরির কাজ এরই মধ্যে হয়ে গেছে। এখন গণভোট অধ্যাদেশ অনুযায়ী নতুন একটি বিধিমালার প্রয়োজন হবে। গণভোট বিধিমালায় ব্যালট, ভোটগ্রহণ ও গণনা প্রক্রিয়ার বিস্তারিত উল্লেখ থাকবে।

ইসি’র জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ জানান, সংসদ নির্বাচনের জন্য আগের মতোই সাদা-কালো ব্যালট ছাপার প্রস্তুতি আছে ইসির। যেখানে সাদা কাগজের ওপর কালো কালির লেখা ও প্রতীক ছাপা হবে। আর গণভোট অধ্যাদেশ অনুযায়ী ভোটাররা যাতে বিভ্রান্তিতে না পড়েন, সেজন্য গণভোটের জন্য রঙিন ব্যালট পেপার ছাপাতে হবে। যেখানে রঙিন কাগজে দৃশ্যমান কালো কালির ব্যবহার থাকছে। এক্ষেত্রে সবুজ বা গোলাপি রঙের ব্যালট ছাপানোর চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। ব্যালট ছাপানোর জন্য এরই মধ্যে সরকারি ছাপাখানায় যোগাযোগ করা হচ্ছে বলেও জানান ইসি’র এই কর্মকর্তা।

এদিকে, জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের ব্যালটে একই সিল নাকি পৃথক সিল ব্যবহার করা হবে, সেই সিদ্ধান্ত ইসি এখনও নেয়নি। নির্বাচনে দু’টি সিল ব্যবহার করা হলে ভোটাররা বিভ্রান্ত হতে পারেন। এজন্য একটি সিল ব্যবহার করা হতে পারে। তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য যে সিল সংগ্রহ করা হয়েছে, সেখানে ‘১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন’ উল্লেখ রয়েছে। এটাতেও বিভ্রান্তি সৃষ্টির আশঙ্কা থেকে গণভোটের ব্যালটেও একই সিল ব্যবহার করা হবে কী-না, সেটা নিয়েও ভাবছে ইসি। তবে কোনো টেন্ডার ছাড়া সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে সিল সংগ্রহ করতে গেলেও কমপক্ষে এক মাস প্রয়োজন সময়ের হবে। এটিকেও বিবেচনায় রেখে এগুচ্ছেন কর্মকর্তারা।

ইসির কর্মকর্তারা আরও জানান, তপশিল ঘোষণার আগে মাঠের বাস্তব অভিজ্ঞতা নিতে আগামী শনিবার ‘মক ভোটিং’-এর আয়োজন করতে যাচ্ছে ইসি। রাজধানী ঢাকায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কাছাকাছি শেরেবাংলা নগর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে ওইদিন সকাল আটটা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত এই মক ভোটিংয়ের আয়োজন করা হবে। যেখানে ভোটগ্রহণের অন্যান্য বিষয় ছাড়াও একজন ভোটারের একত্রে দুই ভোট দেওয়ার সমস্যা এবং ভোট দিতে কত সময়ের প্রয়োজন হবে- সেসব বিষয় বাস্তব প্রত্যক্ষ করবেন নির্বাচন কমিশনাররা। ওই অভিজ্ঞতা থেকে কতজন ভোটারের জন্য একটি ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষ হওয়া উচিত সেটাও চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে।

বাড়তি ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষের ব্যবহার
ইসির রোডম্যাপ অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচনের প্রধান দুই অনুষঙ্গ- চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ এবং ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষের সংখ্যা চূড়ান্ত করা হয়েছে। যেহেতু একই ভোটার তালিকা ও ভোটকেন্দ্র দিয়েই গণভোটও নেওয়া হবে, সেজন্য এ বিষয়ে বাড়তি করণীয় নেই বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা। তবে জরুরি প্রয়োজন মেটাতে অতিরিক্ত ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষ ঠিক করে রাখার প্রস্তুতিও রয়েছে তাদের।

গত ১৮ নভেম্বর প্রকাশিত চূড়ান্ত ভোটার তালিকা অনুযায়ী দেশে মোট ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৭৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৮৩ জন। যার মধ্যে পুরুষ ৬ কোটি ৪৮ লাখ ১৪ হাজার ৯০৭ জন, নারী ৬ কোটি ২৮ লাখ ৭৯ হাজার ৪২ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) ভোটার ১ হাজার ২৩৪ জন। গত ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত যাদের বয়স ১৮ বছর হয়েছে, তাদের সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে এই ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে। এর সঙ্গে প্রবাসী ভোটার সংখ্যা, যারা ভোট দেওয়ার জন্য নিবন্ধন শেষ করবেন- সেটাও যোগ করা হবে। ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা ছাপার কাজ শেষ করা হবে। প্রবাসীরা পোষ্টাল ব্যালটে সংসদ নির্বাচন ছাড়াও গণভোটের ভোট দিতে পারবেন।

এই সংখ্যক ভোটারের জন্য ইসি সারাদেশে মোট ৪২ হাজার ৭৬১টি ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত করেছে। যেখানে মোট ভোটকক্ষ সংখ্যা ২ লাখ ৪৪ হাজার ৭৩৯টি। পুরুষদের জন্য ১ লাখ ১৫ হাজার ১৩৭ এবং মহিলাদের জন্য ১ লাখ ২৯ হাজার ৬০২ কক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছে। একটি ভোটকেন্দ্রে গড়ে ৩ হাজার ভোটারের ভোটগ্রহণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আর প্রতিটি কেন্দ্রে গড়ে ৬০০ পুরুষ ভোটারের জন্য একটি এবং ৫০০ মহিলা ভোটারের জন্য একটি করে ভোটকক্ষ নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া অস্থায়ী ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা প্রাথমিকভাবে ১৪টি, যেখানে ভোটকক্ষ থাকবে প্রায় ১২ হাজারের মত। একইদিনে গণভোটে আয়োজনের প্রয়োজনে ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষের সংখ্যা বাড়িয়ে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার প্রস্তুতিও রয়েছে বলে জানান কয়েকজন কর্মকর্তা। আর দুই ভোটের ফলাফল প্রস্তুতে ঝামেলা এড়াতে আলাদা আলাদা গণনা কক্ষ রাখা হতে পারে।

আরও যত প্রস্তুতি
জাতীয় নির্বাচনের জন্য ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষ ছাড়াও ব্যালটবাক্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সুঁই-সুতা থেকে শুরু করে অমোচনীয় কালি, প্যাডসহ ২৭ ধরনের  নির্বাচনী সরঞ্জাম কেনাকাটার কাজ গত সেপ্টেম্বরেই সেরে রেখেছে ইসি। নির্বাচন ভবনের গোডাউনে এগুলো মজুদ রয়েছে। এখন গণভোটের জন্য অতিরিক্ত ব্যালটবাক্স ও  সরঞ্জাম প্রয়োজন হলে সেটাও কেনার প্রস্তুতি আছে তাদের।

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রতিটি ভোটকক্ষের জন্য একটি করে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স প্রয়োজন হয়। আর প্রতি কেন্দ্রে একটি করে অতিরিক্ত স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স দেওয়া হয়। সে হিসাবে, আগামী জাতীয় নির্বাচনে তিন লাখের বেশি স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স প্রয়োজন হবে। এর সঙ্গে গণভোট আয়োজনে আরও ব্যালট বাক্সের প্রয়োজন হবে। তবে আগে থেকেই অতিরিক্ত দেড় লাখ ব্যালট বাক্স মজুদ আছে জানিয়ে ইসি’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এরপরও প্রয়োজন হলে নতুন করে স্বচ্ছ ব্যালটবাক্স তৈরি করা হবে।
চলবে সচেনতামূলক কার্যক্রম: ইসি সূত্র আরও বলছে, দুই ভোট একসঙ্গে নেওয়ায় ভোটগ্রহণের সময় বেশি লাগতে পারে- এমনটাও বিবেচেনায় রাখা হচ্ছে। তবে কয়েকজন কর্মকর্তা বলছেন, দুই ব্যালটে ভোটদানের অভিজ্ঞতা এটাই নতুন নয়। ইউনিয়ন পরিষদসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে দেশের ভোটাররা এমনকি তিনটি আলাদা ব্যালটেও ভোট দিয়ে আসছেন। ফলে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে নেওয়ায় সময় খুব বেশি লাগবে, এমনটা নয়।

তবে গণভোটের ইস্যুটি একেবারে নতুন হওয়ায় এবং বেশিরভাগ মানুষ এ বিষয়ে সচেতন না হওয়ায় বিষয়টাতে সচেতনতা সৃষ্টির প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি ইসিও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাবে। গণভোট আইন পাস ও গণভোটের প্রশ্নমালা পেলেই এই কার্যক্রম শুরু করবে সাংবিধানিক এই সংস্থাটি। মঙ্গলবার নির্বাচনী পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সংলাপে গণভোট বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার দাবি ওঠে। জবাবে সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন জানান, গণভোট ভোটারদের মধ্যে প্রচার-প্রচারণা চালাবে ইসি। এই প্রচারণা হবে জাতীয় নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার অতিরিক্ত।

কেমন হবে ব্যালট পেপারের ধরন
গণভোটের ব্যালট পেপারের ধরণও চূড়ান্ত করা হয়েছে অধ্যাদেশের মাধ্যমে। আগে থেকে বলা হচ্ছিল, ব্যালটে চারটি প্রশ্ন থাকবে এবং চারটি প্রশ্নের জন্যই একবার ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ এর ঘরে ভোট দিতে হবে। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা ও বিভ্রান্তির পর অধ্যাদেশ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত হয়েছে- গণভোটের ব্যালটে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও সাংবিধানিক সংস্কার সংক্রান্ত প্রস্তাবের ওপর একটি মাত্র প্রশ্ন থাকবে। যেখানে ‘হ্যাঁ-না’ এর মাধ্যমে জবাব দিতে হবে ভোটারদের।

ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ সমকালকে বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি একদিনে গণভোট আয়োজন নির্বাচন কমিশনের জন্য অতিরিক্ত দায়িত্ব হলেও প্রস্তুতি সুষ্ঠুভাবে এগোচ্ছে। দুই ভোট গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় সব সামগ্রীও প্রস্তুত রয়েছে। আশা করি, সব কিছু ভালোভাবেই শেষ করতে পারবো আমরা।

ট্যাগ :

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপডেটের সময় : ০৭:০৪:২৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫
৫০৫ Time View

গণভোটের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে ইসি, কার্যক্রম জোরদার

আপডেটের সময় : ০৭:০৪:২৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫

গণভোট অধ্যাদেশ (আইন) হওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি গণভোটেরও পূর্ণ প্রস্তুতি শুরু করেছে তারা। যদিও ইসির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, একই দিনে দুই ভোট আয়োজনের মতো দেশের নির্বাচনী ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ‘চ্যালেঞ্জ’ মোকাবিলায় আগেভাগেই জোরেশোরে নেমে পড়েছেন তারা।

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, আগে থেকেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ইসি। নতুন দায়িত্ব হিসেবে গণভোট করতে হবে। সেটাতেও খুব বেশি সমস্যা হবে না। কেননা জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির সঙ্গে অল্প কিছু বিষয় যোগ করলেই সেটি হয়ে যাবে।

জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি ও গণভোট নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতবিরোধের মধ্যে গত ১৩ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের ঘোষণা দেন। সে অনুযায়ী একই দিনে দুই ভোটের প্রস্তুতি নিতে ইসিকে চিঠি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ থেকে এই চিঠি পাঠানো হয়। মঙ্গলবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘গণভোট অধ্যাদেশ-২০২৫’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদনের পর রাতেই গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার।

এর আগে শনিবার এক অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনও বলেছেন, একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট করা চ্যালেঞ্জিং। এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি পূর্ববর্তী নির্বাচন কমিশন কখনও হয়নি।

আগে থেকে নেওয়া জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুই নির্বাচন করতে হবে একই রিসোর্স ব্যবহার করে। এটার জন্য অনেকগুলো অতিরিক্ত কাজও করতে হবে। কিন্তু আইন মেনে একইদিনে নির্বাচন ও গণভোট করতে হবে। এটা ছাড়া দ্বিতীয় কোনো অপশন নেই।

গত কয়েকদিনে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, গণভোট আয়োজনের চ্যালেঞ্জিংয়ের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যেও এক ধরনের উদ্দীপনা তৈরি করেছে। বিশেষ করে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা শাখার কর্মকর্তারা নতুন করে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। অনেক কর্মকর্তাই সমকালকে বলেন, ‘অধ্যাদেশ হওয়ায় গণভোট নিয়ে আর কোনো সংশয় নেই। এখন পূর্ণোদ্যমে প্রস্তুতি নিতে হবে তাদের।’

গত বছরের ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গঠিত এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছিল। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ও দাবির মুখে অন্তর্বর্তী সরকার রোজার আগে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিলে ইসি’র এই প্রস্তুতি পর্ব জোরদার হয়। গত ২৮ আগষ্ট ২৪ দফা কর্মপরিকল্পনা নিয়ে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ বা পথনকশা ঘোষণা করে ইসি। এরই মধ্যে একই দিনে গণভোটের ইস্যু চলে আসায় আরেক দফা রোডম্যাপ ঘোষণা করা হতে পারে বলেও জানান ইসি’র কয়েকজন কর্মকর্তা। সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) এবং নির্বাচনী আচরণবিধিতেও কিছু নতুন বিষয় যুক্ত করা হবে। সবকিছু মিলিয়ে ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে ভোটের তপসিল ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা।

ইসি ঘোষিত জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপে বর্ণিত বেশিরভাগ কর্মপরিকল্পনা শেষ পর্যায়ে। অংশিজনের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ পর্ব শেষ হয়েছে। ২৭ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান এবং ২৯ নভেম্বর আন্ত:মন্ত্রণালয় বৈঠকের দ্বিতীয় পর্ব শেষ হবে। যেখানে ভোটের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, বাজেট বরাদ্দসহ খুটিনাটি সব প্রস্তুতি শেষ হবে।

ব্যয় বাড়বে ২০ শতাংশ
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আগেই প্রায় দুই হাজার আটশ’ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রাথমিক হিসেব কষে রেখেছিল ইসি। পরে আরও কিছু বিষয় যোগ হওয়ায় এই ব্যয়-বরাদ্দ শেষ পর্যন্ত তিন হাজার কোটি টাকায় দাঁড়াতে পারে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।

কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে একইদিনে গণভোট আয়োজন করায় আগের ব্যয়-বরাদ্দের সঙ্গে কিছুটা যোগ করলেই হবে। আর আলাদা দিনে দুই ভোট করতে হলে আলাদা আলাদা বাজেটে অনেক বেশি খরচ হবে। কেননা তখন দুই দফায় একই মাপের আয়োজন করতে হবে দুই ভোটের জন্য। আর এখন একই জনবল ও সরঞ্জামের সঙ্গে বাড়তি কিছু যোগ করে ভোট করলেই চলবে।

এক্ষেত্রে ব্যয় কতটা বাড়বে- এমন ধারণা নেওয়ার চেষ্টাও চলছে ইসি’র তরফে। কয়েকজন নির্বাচন বিশেষঞ্জের বরাতে ইসি কর্মকর্তারা জানান, গণভোট আয়োজনের জন্য আগের বাজেটের চেয়ে ২০ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ছয়শ’ কোটি টাকা বেশি প্রয়োজন হবে। সে অনুযায়ী বাজেট প্রস্তুতি চলছে। আগামী ২৭ নভেম্বর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে দ্বিতীয় দফার বৈঠকেও বাজেটের বিষয়টি আলোচনায় উঠবে।

সম্প্রতি ইসির সংলাপে অংশ নিয়ে নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও ইসি’র সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী বলেন, জাতীয় নির্বাচননের ভোটকেন্দ্র, ভোটকক্ষ এবং ভোট সরঞ্জাম দিয়েই গণভোট আয়োজন সম্ভব। তবে গণভোটের জন্য নতুন করে হ্যাঁ-না ভোটের ব্যালট পেপার ছাপাতে হবে। সচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণাও চালাতে হবে। এজন্য বাড়তি সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ ব্যয় হতে পারে।

নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ সমকালকে বলেন, সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে একসঙ্গে গণভোট করায় বড় ব্যয়সাশ্রয় হচ্ছে। দুই নির্বাচন একত্রে করায় অনেক টাকা বেঁচে যাচ্ছে।

প্রয়োজন নতুন বিধিমালার
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আরপিও সংশোধন ও আচারণ বিধিমালাসহ সব ধরনের আইন-বিধি তৈরির কাজ এরই মধ্যে হয়ে গেছে। এখন গণভোট অধ্যাদেশ অনুযায়ী নতুন একটি বিধিমালার প্রয়োজন হবে। গণভোট বিধিমালায় ব্যালট, ভোটগ্রহণ ও গণনা প্রক্রিয়ার বিস্তারিত উল্লেখ থাকবে।

ইসি’র জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ জানান, সংসদ নির্বাচনের জন্য আগের মতোই সাদা-কালো ব্যালট ছাপার প্রস্তুতি আছে ইসির। যেখানে সাদা কাগজের ওপর কালো কালির লেখা ও প্রতীক ছাপা হবে। আর গণভোট অধ্যাদেশ অনুযায়ী ভোটাররা যাতে বিভ্রান্তিতে না পড়েন, সেজন্য গণভোটের জন্য রঙিন ব্যালট পেপার ছাপাতে হবে। যেখানে রঙিন কাগজে দৃশ্যমান কালো কালির ব্যবহার থাকছে। এক্ষেত্রে সবুজ বা গোলাপি রঙের ব্যালট ছাপানোর চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। ব্যালট ছাপানোর জন্য এরই মধ্যে সরকারি ছাপাখানায় যোগাযোগ করা হচ্ছে বলেও জানান ইসি’র এই কর্মকর্তা।

এদিকে, জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের ব্যালটে একই সিল নাকি পৃথক সিল ব্যবহার করা হবে, সেই সিদ্ধান্ত ইসি এখনও নেয়নি। নির্বাচনে দু’টি সিল ব্যবহার করা হলে ভোটাররা বিভ্রান্ত হতে পারেন। এজন্য একটি সিল ব্যবহার করা হতে পারে। তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য যে সিল সংগ্রহ করা হয়েছে, সেখানে ‘১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন’ উল্লেখ রয়েছে। এটাতেও বিভ্রান্তি সৃষ্টির আশঙ্কা থেকে গণভোটের ব্যালটেও একই সিল ব্যবহার করা হবে কী-না, সেটা নিয়েও ভাবছে ইসি। তবে কোনো টেন্ডার ছাড়া সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে সিল সংগ্রহ করতে গেলেও কমপক্ষে এক মাস প্রয়োজন সময়ের হবে। এটিকেও বিবেচনায় রেখে এগুচ্ছেন কর্মকর্তারা।

ইসির কর্মকর্তারা আরও জানান, তপশিল ঘোষণার আগে মাঠের বাস্তব অভিজ্ঞতা নিতে আগামী শনিবার ‘মক ভোটিং’-এর আয়োজন করতে যাচ্ছে ইসি। রাজধানী ঢাকায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কাছাকাছি শেরেবাংলা নগর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে ওইদিন সকাল আটটা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত এই মক ভোটিংয়ের আয়োজন করা হবে। যেখানে ভোটগ্রহণের অন্যান্য বিষয় ছাড়াও একজন ভোটারের একত্রে দুই ভোট দেওয়ার সমস্যা এবং ভোট দিতে কত সময়ের প্রয়োজন হবে- সেসব বিষয় বাস্তব প্রত্যক্ষ করবেন নির্বাচন কমিশনাররা। ওই অভিজ্ঞতা থেকে কতজন ভোটারের জন্য একটি ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষ হওয়া উচিত সেটাও চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে।

বাড়তি ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষের ব্যবহার
ইসির রোডম্যাপ অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচনের প্রধান দুই অনুষঙ্গ- চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ এবং ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষের সংখ্যা চূড়ান্ত করা হয়েছে। যেহেতু একই ভোটার তালিকা ও ভোটকেন্দ্র দিয়েই গণভোটও নেওয়া হবে, সেজন্য এ বিষয়ে বাড়তি করণীয় নেই বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা। তবে জরুরি প্রয়োজন মেটাতে অতিরিক্ত ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষ ঠিক করে রাখার প্রস্তুতিও রয়েছে তাদের।

গত ১৮ নভেম্বর প্রকাশিত চূড়ান্ত ভোটার তালিকা অনুযায়ী দেশে মোট ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৭৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৮৩ জন। যার মধ্যে পুরুষ ৬ কোটি ৪৮ লাখ ১৪ হাজার ৯০৭ জন, নারী ৬ কোটি ২৮ লাখ ৭৯ হাজার ৪২ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) ভোটার ১ হাজার ২৩৪ জন। গত ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত যাদের বয়স ১৮ বছর হয়েছে, তাদের সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে এই ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে। এর সঙ্গে প্রবাসী ভোটার সংখ্যা, যারা ভোট দেওয়ার জন্য নিবন্ধন শেষ করবেন- সেটাও যোগ করা হবে। ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা ছাপার কাজ শেষ করা হবে। প্রবাসীরা পোষ্টাল ব্যালটে সংসদ নির্বাচন ছাড়াও গণভোটের ভোট দিতে পারবেন।

এই সংখ্যক ভোটারের জন্য ইসি সারাদেশে মোট ৪২ হাজার ৭৬১টি ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত করেছে। যেখানে মোট ভোটকক্ষ সংখ্যা ২ লাখ ৪৪ হাজার ৭৩৯টি। পুরুষদের জন্য ১ লাখ ১৫ হাজার ১৩৭ এবং মহিলাদের জন্য ১ লাখ ২৯ হাজার ৬০২ কক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছে। একটি ভোটকেন্দ্রে গড়ে ৩ হাজার ভোটারের ভোটগ্রহণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আর প্রতিটি কেন্দ্রে গড়ে ৬০০ পুরুষ ভোটারের জন্য একটি এবং ৫০০ মহিলা ভোটারের জন্য একটি করে ভোটকক্ষ নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া অস্থায়ী ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা প্রাথমিকভাবে ১৪টি, যেখানে ভোটকক্ষ থাকবে প্রায় ১২ হাজারের মত। একইদিনে গণভোটে আয়োজনের প্রয়োজনে ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষের সংখ্যা বাড়িয়ে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার প্রস্তুতিও রয়েছে বলে জানান কয়েকজন কর্মকর্তা। আর দুই ভোটের ফলাফল প্রস্তুতে ঝামেলা এড়াতে আলাদা আলাদা গণনা কক্ষ রাখা হতে পারে।

আরও যত প্রস্তুতি
জাতীয় নির্বাচনের জন্য ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষ ছাড়াও ব্যালটবাক্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সুঁই-সুতা থেকে শুরু করে অমোচনীয় কালি, প্যাডসহ ২৭ ধরনের  নির্বাচনী সরঞ্জাম কেনাকাটার কাজ গত সেপ্টেম্বরেই সেরে রেখেছে ইসি। নির্বাচন ভবনের গোডাউনে এগুলো মজুদ রয়েছে। এখন গণভোটের জন্য অতিরিক্ত ব্যালটবাক্স ও  সরঞ্জাম প্রয়োজন হলে সেটাও কেনার প্রস্তুতি আছে তাদের।

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রতিটি ভোটকক্ষের জন্য একটি করে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স প্রয়োজন হয়। আর প্রতি কেন্দ্রে একটি করে অতিরিক্ত স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স দেওয়া হয়। সে হিসাবে, আগামী জাতীয় নির্বাচনে তিন লাখের বেশি স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স প্রয়োজন হবে। এর সঙ্গে গণভোট আয়োজনে আরও ব্যালট বাক্সের প্রয়োজন হবে। তবে আগে থেকেই অতিরিক্ত দেড় লাখ ব্যালট বাক্স মজুদ আছে জানিয়ে ইসি’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এরপরও প্রয়োজন হলে নতুন করে স্বচ্ছ ব্যালটবাক্স তৈরি করা হবে।
চলবে সচেনতামূলক কার্যক্রম: ইসি সূত্র আরও বলছে, দুই ভোট একসঙ্গে নেওয়ায় ভোটগ্রহণের সময় বেশি লাগতে পারে- এমনটাও বিবেচেনায় রাখা হচ্ছে। তবে কয়েকজন কর্মকর্তা বলছেন, দুই ব্যালটে ভোটদানের অভিজ্ঞতা এটাই নতুন নয়। ইউনিয়ন পরিষদসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে দেশের ভোটাররা এমনকি তিনটি আলাদা ব্যালটেও ভোট দিয়ে আসছেন। ফলে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে নেওয়ায় সময় খুব বেশি লাগবে, এমনটা নয়।

তবে গণভোটের ইস্যুটি একেবারে নতুন হওয়ায় এবং বেশিরভাগ মানুষ এ বিষয়ে সচেতন না হওয়ায় বিষয়টাতে সচেতনতা সৃষ্টির প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি ইসিও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাবে। গণভোট আইন পাস ও গণভোটের প্রশ্নমালা পেলেই এই কার্যক্রম শুরু করবে সাংবিধানিক এই সংস্থাটি। মঙ্গলবার নির্বাচনী পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সংলাপে গণভোট বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার দাবি ওঠে। জবাবে সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন জানান, গণভোট ভোটারদের মধ্যে প্রচার-প্রচারণা চালাবে ইসি। এই প্রচারণা হবে জাতীয় নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার অতিরিক্ত।

কেমন হবে ব্যালট পেপারের ধরন
গণভোটের ব্যালট পেপারের ধরণও চূড়ান্ত করা হয়েছে অধ্যাদেশের মাধ্যমে। আগে থেকে বলা হচ্ছিল, ব্যালটে চারটি প্রশ্ন থাকবে এবং চারটি প্রশ্নের জন্যই একবার ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ এর ঘরে ভোট দিতে হবে। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা ও বিভ্রান্তির পর অধ্যাদেশ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত হয়েছে- গণভোটের ব্যালটে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও সাংবিধানিক সংস্কার সংক্রান্ত প্রস্তাবের ওপর একটি মাত্র প্রশ্ন থাকবে। যেখানে ‘হ্যাঁ-না’ এর মাধ্যমে জবাব দিতে হবে ভোটারদের।

ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ সমকালকে বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি একদিনে গণভোট আয়োজন নির্বাচন কমিশনের জন্য অতিরিক্ত দায়িত্ব হলেও প্রস্তুতি সুষ্ঠুভাবে এগোচ্ছে। দুই ভোট গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় সব সামগ্রীও প্রস্তুত রয়েছে। আশা করি, সব কিছু ভালোভাবেই শেষ করতে পারবো আমরা।