ঢাকা , শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৫, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হাসিনার প্লট দুর্নীতি: বেআইনি-একাধিক প্লট ভোগকারীকে শনাক্তের নির্দেশ

সাংবাদিক

প্লট দুর্নীতির ৩ মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দায় দেখার পাশাপাশি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এবং গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ও অন্যায় করেছে বলে পর্যবেক্ষণে তুলে ধরে আদালত বেআইনি ও একাধিক প্লট ভোগকারীকে শনাক্তের নির্দেশ দিয়েছে।

অতীতের সব বরাদ্দ পর্যালোচনা করে রায়ে এমন পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন।

এর পরের করণীয় হিসেবে পুনরুদ্ধার হওয়া সব প্লট শুধু ভূমিহীন নাগরিক ও যোগ্য আবেদনকারীদের পুনরায় বরাদ্দ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) রায়ের পর্যবেক্ষণে তিনি সরকারি আবাসন ও জমি বরাদ্দ সংক্রান্ত অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও দীর্ঘদিনের ধারাবাহিক অসদাচরণের প্রেক্ষিতে রাজউক এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে বিশেষ সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনাও দেন।

উভয় প্রতিষ্ঠানের দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও ফৌজদারী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশও দেন বিচারক।

রায়ে ৩ মামলাতেই শেখ হাসিনাকে দোষী সাব্যস্ত করে ৭ বছর করে মোট ২১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনার পাশাপাশি তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে একটি মামলায় এবং মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে আরেক মামলায় পাঁচ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

দণ্ডের পাশাপাশি শেখ হাসিনাকে এক লাখ টাকা করে তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে তাকে ৬ মাস করে ১৮ মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং পুতুল ও জয়কে দণ্ডের পাশাপাশি এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড, অনাদায়ে ৬ মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।

এর আগে গত ১৭ নভেম্বর জুলাই গণঅভ্যুত্থান দমানোর চেষ্টায় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

এবার তাকে দুর্নীতি মামলায় কারাদণ্ড দেওয়া হল। তিনি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সাবেক রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান, যার দুর্নীতির দায়ে সাজার রায় এল।

হাসিনা পরিবারের তিন সদস্যের বিরুদ্ধে প্লট দুর্নীতির তিন মামলায় গ্রেপ্তার একমাত্র আসামি রাজউকের সাবেক সদস্য খুরশীদ আলমকে এদিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। রায় ঘোষণার আগে ১০টা ৫৫ মিনিটের দিকে এজলাসে তোলা হয়।

বিচারক ১১টা ২৩ মিনিটে এজলাসে ওঠেন। প্রথমে শেখ হাসিনাসহ ১২ জনের মামলার রায় পড়া শুরু হয়। পরে একে একে তিন মামলার রায় দেন তিনি। ১১টা ৫৬ মিনিটের দিকে বিচারক এজলাস থেকে নেমে যান।

ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আব্দুল্লাহ আল মামুন রায়ের আগে পর্যবেক্ষণে বলেন, রাজউক ও গৃহায়ন মন্ত্রণালয় আইন ও বিধি লঙ্ঘন করে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের স্বার্থে প্লট বরাদ্দ করেছে, যা সংবিধান ও রাষ্ট্রীয় নীতিমালার অবমাননা।

রায়ে সব অনিয়মে জড়িত কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব থেকে অবিলম্বে অপসারণের পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও ফৌজদারি মামলা করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপডেটের সময় : ০৪:৫৮:২৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫
৫০৫ Time View

হাসিনার প্লট দুর্নীতি: বেআইনি-একাধিক প্লট ভোগকারীকে শনাক্তের নির্দেশ

আপডেটের সময় : ০৪:৫৮:২৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫

প্লট দুর্নীতির ৩ মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দায় দেখার পাশাপাশি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এবং গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ও অন্যায় করেছে বলে পর্যবেক্ষণে তুলে ধরে আদালত বেআইনি ও একাধিক প্লট ভোগকারীকে শনাক্তের নির্দেশ দিয়েছে।

অতীতের সব বরাদ্দ পর্যালোচনা করে রায়ে এমন পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন।

এর পরের করণীয় হিসেবে পুনরুদ্ধার হওয়া সব প্লট শুধু ভূমিহীন নাগরিক ও যোগ্য আবেদনকারীদের পুনরায় বরাদ্দ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) রায়ের পর্যবেক্ষণে তিনি সরকারি আবাসন ও জমি বরাদ্দ সংক্রান্ত অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও দীর্ঘদিনের ধারাবাহিক অসদাচরণের প্রেক্ষিতে রাজউক এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে বিশেষ সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনাও দেন।

উভয় প্রতিষ্ঠানের দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও ফৌজদারী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশও দেন বিচারক।

রায়ে ৩ মামলাতেই শেখ হাসিনাকে দোষী সাব্যস্ত করে ৭ বছর করে মোট ২১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনার পাশাপাশি তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে একটি মামলায় এবং মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে আরেক মামলায় পাঁচ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

দণ্ডের পাশাপাশি শেখ হাসিনাকে এক লাখ টাকা করে তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে তাকে ৬ মাস করে ১৮ মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং পুতুল ও জয়কে দণ্ডের পাশাপাশি এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড, অনাদায়ে ৬ মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।

এর আগে গত ১৭ নভেম্বর জুলাই গণঅভ্যুত্থান দমানোর চেষ্টায় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

এবার তাকে দুর্নীতি মামলায় কারাদণ্ড দেওয়া হল। তিনি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সাবেক রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান, যার দুর্নীতির দায়ে সাজার রায় এল।

হাসিনা পরিবারের তিন সদস্যের বিরুদ্ধে প্লট দুর্নীতির তিন মামলায় গ্রেপ্তার একমাত্র আসামি রাজউকের সাবেক সদস্য খুরশীদ আলমকে এদিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। রায় ঘোষণার আগে ১০টা ৫৫ মিনিটের দিকে এজলাসে তোলা হয়।

বিচারক ১১টা ২৩ মিনিটে এজলাসে ওঠেন। প্রথমে শেখ হাসিনাসহ ১২ জনের মামলার রায় পড়া শুরু হয়। পরে একে একে তিন মামলার রায় দেন তিনি। ১১টা ৫৬ মিনিটের দিকে বিচারক এজলাস থেকে নেমে যান।

ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আব্দুল্লাহ আল মামুন রায়ের আগে পর্যবেক্ষণে বলেন, রাজউক ও গৃহায়ন মন্ত্রণালয় আইন ও বিধি লঙ্ঘন করে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের স্বার্থে প্লট বরাদ্দ করেছে, যা সংবিধান ও রাষ্ট্রীয় নীতিমালার অবমাননা।

রায়ে সব অনিয়মে জড়িত কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব থেকে অবিলম্বে অপসারণের পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও ফৌজদারি মামলা করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।