বায়ান্ন সালের মহান ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। বাংলা ভাষার দাবি প্রতিষ্ঠার জন্য আত্মোৎসর্গকারী জাতির বীর সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে প্রস্তুত করা হয়েছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। রাত পোহালেই শহীদদের স্মরণে ফুলে ফুলে ভরে ওঠবে মিনার বেদী।
প্রতি বছরের ন্যায় প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, প্রধান বিচারপতিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন, সাধারণ মানুষরা শ্রদ্ধা জানাবেন। শহীদ মিনারের মূল বেদিতে আঁকা হয়েছে আলপনা, আশপাশের রাস্তা ও রাস্তার পাশের দেয়ালে নতুন রঙ করা হয়েছে। লেখা হয়েছে ভাষা আন্দোলন ও আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রচিত কবিতার বিশেষ উক্তি, মনীষী-ভাষাবিদদের বাণী। দেয়ালে দেয়ালে রয়েছে ভাষা আন্দোলনের নানা গ্রাফিতি।
শহীদ মিনারে এলাকায় বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা। নেওয়া হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গণমাধ্যমকর্মী ছাড়া কাউকে শহীদ মিনারের আঙিনায় প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। রয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরাও। ইনটেলিজেন্স উইং থেকে সাদা পোশাকে দায়িত্বরত থাকবে কর্মকর্তারা। যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় র্যাব হেডকোয়ার্টারের স্পেশাল ফোর্স ও হেলিকপ্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সোশাল মিডিয়ায় সাইবার অপরাধ, গুজব ও মিথ্যা তথ্য রোধে র্যাবের সাইবার মনিটরিং টিম সার্বক্ষণিক কাজ করছে।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলার (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) ছাত্র ও যুবসমাজসহ সর্বস্তরের মানুষ সে সময়ের শাসকগোষ্ঠির চোখ-রাঙ্গানি ও প্রশাসনের ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজপথে নেমে আসে। মায়ের ভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে দুর্বার গতি পাকিস্তানি শাসকদের শংকিত করে তোলায় সেদিন ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিক গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন।
একুশে ফেব্রুয়ারি শোকাবহ হলেও এর যে গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় তা পৃথিবীর বুকে অনন্য। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা (ইউনেস্কো) ১৯৯৯ সালে মহান একুশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বছর ধরে দিবসটি পালিত হচ্ছে দিনটি।