মো:আলরাজী,স্টাফ রিপোর্টার: পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে পরিবারের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে শেকড়ের টানে এখন সবাই ছুটছেন যার যার গন্তব্যে। বাস, লঞ্চ এবং ট্রেনের পাশাপাশি এবার ব্যাপকহারে যুক্ত হয়েছে মোটরসাইকেল যাত্রা। এমন চিত্র পাওয়া যায় মহাসড়কে এবং ফেরিঘাটগুলোতে। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গে ঈদযাত্রায় মোটরসাইকেলের ব্যবহার বেশি বলে জানান বাইক চালকরা,চাঁদ দেখা সাপেক্ষে মঙ্গলবার ঈদ উদযাপন হবে। ঈদের পর অফিস খুলবে আগামী বৃহস্পতিবার। একদিনের ছুটি ম্যানেজ করলেই আরও তিন দিন বোনাস ছুটি পাওয়ার সুযোগ! সেই সুযোগে আরও বেশি করে মানুষ এবার ঢাকা ছেড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) থেকে যানবাহনের চাপ বেড়েছে মহাসড়কগুলোতে। তবে মোটরসাইকেলের চাপ দেখা গেছে শিমুলিয়া ও পাটুরিয়া ফেরিঘাট এবং যমুনা ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায়।
শনিবার (৩০ এপ্রিল) সকাল থেকেই শিমুলিয়া ঘাট এলাকায় হাজারের ওপর মোটরসাইকেলের জটলা দেখা যায়। এছাড়া পদ্মা পার হয়েছে হাজারেরও বেশি মোটরসাইকেল। এসব মোটরসাইকেল দখল করে রাখে ফেরিঘাটের রাস্তা। সংখ্যা বেশি হওয়ায় একটি ঘাটকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে শুধুমাত্র মোটরসাইকেল পারাপারের জন্য। জানা গেছে,রবিবার সকাল থেকে তিন হাজারেরও বেশি মোটরসাইকেল শিমুলিয়া ঘাট দিয়ে পারাপারের অপেক্ষায় ছিল।
বিআইডব্লিউটিসি’র শিমুলিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. ফয়সাল জানান, মোটরসাইকেলের সংখ্যা বেশি হওয়ায় নির্দিষ্ট একটি ফেরি দিয়ে সেগুলো পার করা হচ্ছে।
উত্তরবঙ্গে মোটরসাইকেলের চাপ সবচেয়ে বেশি বলে জানা গেছে। যমুনা সেতুতে মোটরসাইকেলের চাপ বেশি থাকায় যানজটের কবলেও পড়তে হয়েছে দীর্ঘসময়। চাপ কমাতে ব্রিজের টোলের জন্য মোটরসাইকেলের আলাদা দুটি লেন করা হয়েছে।
জানা যায়, রাজধানীতে মোটরসাইকেল অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিংয়ের জন্য ব্যবহার হলেও বর্তমানে ঈদের জন্য রাইডার কম পাওয়া যাচ্ছে। কাওরান বাজার মোড়ে মোটরসাইকেলের জন্য অপেক্ষারত রুবেল জানান, অ্যাপে রিকোয়েস্ট দিয়ে অনেকক্ষণ ধরে বাইক পাচ্ছিলাম না। তাই রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছি। রাস্তা আজকে বেশ ফাঁকা আছে। তাই রিকশা দিয়েই যাবো। নতুবা জ্যামের জন্য মোটরসাইকেল ব্যবহার করি।
ঢাকা থেকে শরীয়তপুর গামী রুহুল জানান, পথে যানজটের আশঙ্কায় আমার পরিচিত অনেকেই মোটরসাইকেল নিয়ে রওনা হয়েছেন। বাসে গেলে জ্যামে বসে থাকতে হয়। কিংবা ফেরিতে সিরিয়ালে থাকতে হয়। মোটরসাইকেল নিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়া যায়। তাই অনেকেই এবার মোটরসাইকেলে বাড়ি যাচ্ছেন।
রাইড শেয়ারিং অ্যাপ ব্যবহারকারী রাইডার দুলাল জানান, অনেক রাইডার এবারের ঈদে বাড়ি যাচ্ছেন। বাস ভাড়ার অর্ধেক টাকায় যাত্রী নিয়ে গেলেও তেলের খরচ উঠে যাওয়ার কথা। আর রেগুলার ভাড়ায় গেলেও কিছু বাড়তি আয় হচ্ছে। বরং ঈদের এই কয়দিন ঢাকায় থাকলে আয় কম হবে।
এবার ঈদযাত্রায় দেশের জাতীয় মহাসড়কে ২০ থেকে ২৫ লাখ মোটরসাইকেল চলাচল করবে বলে মনে করছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সমিতি বলছে, এসব মোটরসাইকেল দেশের বিভিন্ন জেলায় ৪০ থেকে ৪৫ লাখ ট্রিপ (রাইড শেয়ার) করবে।
মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘এবারের ঈদে গণপরিবহন সংকটককে কাজে লাগিয়ে ১২ লাখ ট্রিপ যাত্রী রাজধানী ঢাকা থেকে আশপাশের জেলাসহ বিভিন্ন গন্তব্যে মোটরসাইকেলে যাত্রা করতে পারেন। এসব মোটরসাইকেলে স্ত্রী-সন্তান লাগেজ-ব্যাগেজ নিয়ে ভারসাম্যহীন অবস্থায় বেপরোয়াভাবে বাস-কারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।’
তিনি বলেন, ‘এবারের ঈদে অতীতের যেকোনও সময়ের চেয়ে প্রায় তিনগুণ যাত্রী মোটরসাইকেলে যাত্রা করতে পারেন। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও তিনগুণ বেড়ে যেতে পারে।’