ঢাকা , বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ৯ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ দামে স্বর্ণ নোয়াখালীতে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ৫ বাংলাদেশ থেকে ভারতে ১ অবৈধ  মানবপাচারকারীসহ ৩ বাংলাদেশি আটক। রাণীশংকৈলে ডাব পাড়তে গিয়ে গাছকাটা শ্রমিকের মৃত্যু। ‘এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন মুক্তিযুদ্ধকে সব রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত স্বার্থের ওপরে রাখতে হবে’ মিরপুরে অনিয়মের ভিডিও করতে গিয়ে হামলার শিকার সাংবাদিক, প্রকাশ্য মাদকসেবীর দাপটে অস্থির গণমাধ্যম মালয়েশিয়ায় ১০ দলের ফুটসাল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি তুলে দেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া আইন সবার জন্য সমান, অপরাধীকে ছাড় দেওয়া হবে না: সিইসি একনেকে ইস্টার্ন রিফাইনারি সম্প্রসারণসহ ২২ প্রকল্প অনুমোদন ফরিদগঞ্জ গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট সম্পন্ন চ্যাম্পিয়ন ব্যাচ-১৯

‘এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন মুক্তিযুদ্ধকে সব রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত স্বার্থের ওপরে রাখতে হবে’

সাংবাদিক

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ কোনো দল, গোষ্ঠী কিংবা রাষ্ট্রীয় ব্যক্তির না, এটি দেশের সব স্তরের মানুষের ত্যাগ ও গৌরবের ইতিহাস। যারা মুক্তিযুদ্ধকে বিকৃত বা হালকাভাবে দেখার চেষ্টা করে, তারা জাতির সার্বভৌমত্ব ও ঐতিহ্যের শত্রু। তাই মহান মুক্তিযুদ্ধকে সব রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত স্বার্থের ওপরে রাখতে হবে।

মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর রাওয়া ক্লাবের এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ৫০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার সম্মাননা অনুষ্ঠানে এ সব কথা বলেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য মহান ত্যাগ ও বীরত্বের স্মৃতিতে মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদানকারী বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ৫০ জন সদস্যকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা তাদের জীবনের সংগ্রাম, ত্যাগ এবং মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস তুলে ধরেন। আয়োজকরা মনে করেন, এ স্মৃতিচারণা নতুন প্রজন্মের জন্য শিক্ষণীয় ও অনুপ্রেরণামূলক হয়ে থাকবে।

এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধকে হালকাভাবে দেখা বা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা অনুচিত। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান এই তিনটি আন্দোলনই আমাদের জাতির গৌরব ও অভিন্ন ঐতিহ্য। তাই কোনো বিভাজন, ব্যক্তিগত কিংবা রাজনৈতিক স্বার্থের কারণে এই ইতিহাসকে ক্ষুণ্ন করা যাবে না।

তারা বলেন, অনুষ্ঠান কেবল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান প্রদানের অনুষ্ঠান নয়; এটি জাতির আত্মসম্মান, ইতিহাসের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং নতুন প্রজন্মের শিক্ষণীয় বার্তার প্রতীক। এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অম্লান রাখবে, জাতির বীর সন্তানদের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা প্রদর্শনসহ নতুন প্রজন্মকে ইতিহাস সম্পর্কে সচেতন করবে।

অনুষ্ঠানে এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট লে. (অব.) সাইফুল্লাহ খান সাইফ বলেন, মহান মুক্তিযদ্ধের কারণে লাল-সবুজের পতাকা পেয়েছি, সেই পতাকা নিয়ে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারি। সবাইকে অনুরোধ করব, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে বিতর্ক করবেন না, যদি কোনো ভুল থাকে সেটা পরিমার্জিত হতে পারে। তাই বলে সবাইকে অসম্মান করা হবে? সেটা কিন্তু হতে পারে না।

তিনি আরো বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের কারণে সবচেয়ে লাভবান আমাদের দেশ, বাংলাদেশ। আর এই দেশের নাগরিক হয়ে আমরা যদি মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে সম্মান না করতে পারি এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কিছু হতে পারে না। তাই দল-মত-নির্বিশেষে সবার কাছে অনুরোধ ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধকে সম্মানের সহিত সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে রেখে আগামীর বাংলাদেশ গড়তে চাই।

সম্মাননা গ্রহণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা এয়ার কমোডর (অব.) কাজী দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমরা যদি দেশ স্বাধীন না করতাম, এ দেশ স্বাধীন হতো না। কিন্তু সম্প্রতি দেখছি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নানা সমালোচনা করা হচ্ছে, তা অত্যন্ত দুঃখের বিষয়। তাই অনুরোধ করব সঠিক ইতিহাস না জেনে সমালোচনা করে যেন আমরা বিভক্ত না হই। কারণ এ দেশ সবার, এখানে কোনো ভেদাভেদ নেই। বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মো. ইব্রাহীম (বীর প্রতীক) বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে বলেন, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অতীতেও ভুল বোঝাবোঝি হয়েছে, এখনো হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমরা যদি কথা না বলি অনেক কিছুই অব্যক্ত থেকে যাবে, তাই আমার আবেদন মুক্তিযুদ্ধ ও এর সঠিক ইতিহাস নিয়ে আপনারা কোনো না কোনো মাধ্যমে বলে যাবেন, লিখে যাবেন। তা রেকর্ড হয়ে থাকবে। এসব দেখে কয়েক বছর পর হলেও কেউ না কেউ আমলে নেবে, এ থেকে আগামী প্রজন্ম এই গৌরবময় ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার (অব.) মোতাহার হোসেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধ না হলে আজকের যারা সরকারে উচ্চপদস্থ পদে বসে আছেন, তাদের পাঁচ শতাংশ হতে পারতেন না। দেশের অন্যান্য মানুষও এভাবে চলাফেলা করতে পারতেন না। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তা, এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তি।

ট্যাগ :

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপডেটের সময় : ০৩:১৪:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫
৫১১ Time View

‘এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন মুক্তিযুদ্ধকে সব রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত স্বার্থের ওপরে রাখতে হবে’

আপডেটের সময় : ০৩:১৪:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ কোনো দল, গোষ্ঠী কিংবা রাষ্ট্রীয় ব্যক্তির না, এটি দেশের সব স্তরের মানুষের ত্যাগ ও গৌরবের ইতিহাস। যারা মুক্তিযুদ্ধকে বিকৃত বা হালকাভাবে দেখার চেষ্টা করে, তারা জাতির সার্বভৌমত্ব ও ঐতিহ্যের শত্রু। তাই মহান মুক্তিযুদ্ধকে সব রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত স্বার্থের ওপরে রাখতে হবে।

মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর রাওয়া ক্লাবের এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ৫০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার সম্মাননা অনুষ্ঠানে এ সব কথা বলেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য মহান ত্যাগ ও বীরত্বের স্মৃতিতে মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদানকারী বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ৫০ জন সদস্যকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা তাদের জীবনের সংগ্রাম, ত্যাগ এবং মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস তুলে ধরেন। আয়োজকরা মনে করেন, এ স্মৃতিচারণা নতুন প্রজন্মের জন্য শিক্ষণীয় ও অনুপ্রেরণামূলক হয়ে থাকবে।

এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধকে হালকাভাবে দেখা বা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা অনুচিত। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান এই তিনটি আন্দোলনই আমাদের জাতির গৌরব ও অভিন্ন ঐতিহ্য। তাই কোনো বিভাজন, ব্যক্তিগত কিংবা রাজনৈতিক স্বার্থের কারণে এই ইতিহাসকে ক্ষুণ্ন করা যাবে না।

তারা বলেন, অনুষ্ঠান কেবল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান প্রদানের অনুষ্ঠান নয়; এটি জাতির আত্মসম্মান, ইতিহাসের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং নতুন প্রজন্মের শিক্ষণীয় বার্তার প্রতীক। এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অম্লান রাখবে, জাতির বীর সন্তানদের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা প্রদর্শনসহ নতুন প্রজন্মকে ইতিহাস সম্পর্কে সচেতন করবে।

অনুষ্ঠানে এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট লে. (অব.) সাইফুল্লাহ খান সাইফ বলেন, মহান মুক্তিযদ্ধের কারণে লাল-সবুজের পতাকা পেয়েছি, সেই পতাকা নিয়ে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারি। সবাইকে অনুরোধ করব, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে বিতর্ক করবেন না, যদি কোনো ভুল থাকে সেটা পরিমার্জিত হতে পারে। তাই বলে সবাইকে অসম্মান করা হবে? সেটা কিন্তু হতে পারে না।

তিনি আরো বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের কারণে সবচেয়ে লাভবান আমাদের দেশ, বাংলাদেশ। আর এই দেশের নাগরিক হয়ে আমরা যদি মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে সম্মান না করতে পারি এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কিছু হতে পারে না। তাই দল-মত-নির্বিশেষে সবার কাছে অনুরোধ ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধকে সম্মানের সহিত সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে রেখে আগামীর বাংলাদেশ গড়তে চাই।

সম্মাননা গ্রহণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা এয়ার কমোডর (অব.) কাজী দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমরা যদি দেশ স্বাধীন না করতাম, এ দেশ স্বাধীন হতো না। কিন্তু সম্প্রতি দেখছি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নানা সমালোচনা করা হচ্ছে, তা অত্যন্ত দুঃখের বিষয়। তাই অনুরোধ করব সঠিক ইতিহাস না জেনে সমালোচনা করে যেন আমরা বিভক্ত না হই। কারণ এ দেশ সবার, এখানে কোনো ভেদাভেদ নেই। বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মো. ইব্রাহীম (বীর প্রতীক) বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে বলেন, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অতীতেও ভুল বোঝাবোঝি হয়েছে, এখনো হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমরা যদি কথা না বলি অনেক কিছুই অব্যক্ত থেকে যাবে, তাই আমার আবেদন মুক্তিযুদ্ধ ও এর সঠিক ইতিহাস নিয়ে আপনারা কোনো না কোনো মাধ্যমে বলে যাবেন, লিখে যাবেন। তা রেকর্ড হয়ে থাকবে। এসব দেখে কয়েক বছর পর হলেও কেউ না কেউ আমলে নেবে, এ থেকে আগামী প্রজন্ম এই গৌরবময় ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার (অব.) মোতাহার হোসেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধ না হলে আজকের যারা সরকারে উচ্চপদস্থ পদে বসে আছেন, তাদের পাঁচ শতাংশ হতে পারতেন না। দেশের অন্যান্য মানুষও এভাবে চলাফেলা করতে পারতেন না। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তা, এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তি।