বিপুল অর্থ লোপাটের পর পাচারের অভিযোগ মাথায় নিয়ে পলাতক আসামি প্রশান্ত কুমার হালদারকে (পি কে হালদার) বাংলাদেশে হস্তান্তর করা হবে। ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) কর্মকর্তারা এই ইঙ্গিত দিয়েছেন।
ভারতের ইংরেজি দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত ২০১৬ সালের প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় পি কে হালদারকে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে। ইডির একজন কর্মকর্তা দ্য টেলিগ্রাফকে বলেছেন, আমরা হালদারকে রবিবার আদালতে তুলবো। তবে শেষ পর্যন্ত তাকে বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়া হবে।
ইডি জানায়, পি কে হালদার রেশন কার্ড, ভারতীয় ভোটার আইডি কার্ড, আয়কর দপ্তরের পরিচয়পত্র পিএএন (প্যান) এবং আধার কার্ডের মতো বিভিন্ন ভারতীয় সরকারি পরিচয়পত্র জালিয়াতি করে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার অশোকনগরে অবস্থান করছিলেন। তিনি সেখানে পি কে শিব শংকর হালদার নামে নিজেকে পরিচয় দিতেন ও ভারতীয় নাগরিক হিসেবে দাবি করতেন।
উত্তর ২৪ পরগনা, কলকাতা এবং দক্ষিণ ২৪ পারগনার বিভিন্ন এলাকায় পি কে হালদার ও তার সহযোগীরা স্থাবর সম্পত্তি কিনেছেন। বর্তমানে সেগুলো সিলগালা করা হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেছেন, প্রশান্ত কুমার হালদারকে (পি কে হালদার) ফেরাতে বন্দি বিনিময় চুক্তি ও ইন্টারপোলের সহযোগিতাসহ সব ধরনের মাধ্যমে চেষ্টা করা হবে।
এর আগে শুক্রবার দিনভর কলকাতা ও উত্তর চব্বিশ পরগনার অন্তত ৯টি স্থানে অভিযান চালায় ইডি। সেসময় উত্তর চব্বিশ পরগনার অশোকনগর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার পোলেরহাটে দু’টি বাড়িসহ বিভিন্ন জায়গায় পি কে হালদারের ব্যক্তিগত আইনজীবী সুকুমার মৃধার অবৈধ সম্পত্তির খোঁজে অভিযান শুরু করে ভারতের এই সংস্থা। কর্মকর্তারা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে এই তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করেন।
পরে শনিবার পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগর থেকে গ্রেপ্তারের পর বাংলাদেশের হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ মামলার মূলহোতা পি কে হালদারকে ভারতের একটি আদালতে তোলা হয়। পরে আদালতের বিচারকরা তাকে মঙ্গলবার পর্যন্ত ইডি হেফাজতে পাঠিয়ে দেন।
পি কে হালদার এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এই দুই প্রতিষ্ঠান ছাড়াও আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত শুরু করার পর তিনি কানাডায় পালিয়ে যান।
দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দখলে পি কে হালদার ছিলেন সক্রিয় ভূমিকায়। একইভাবে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত অন্য প্রতিষ্ঠান দখলেও নেতৃত্ব দিয়েছে তিনি। চাকরিজীবনের শুরুতে একটি গ্রুপের হয়ে বেনামি ঋণ গ্রহণ ও অন্য প্রতিষ্ঠান দখল শুরু করেন। পরে বেনামি ঋণ নিয়ে নিজের ও আত্মীয়দের নামে দখল শুরু করেন পি কে হালদার। এটাই তাঁর জীবনের কাল হয়ে দাঁড়ায়। এর ফলে তাঁকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়। পি কে হালদার গ্রেপ্তার হলেও এখনো আড়ালেই রয়েছেন মূল দুষ্কৃতকারী ও আসল পৃষ্ঠপোষকেরা।