ভুয়া দুই হজ এজেন্সির প্রতারণার খপ্পরে পড়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ১৭১ হজযাত্রী। ২৬ জুলাই এসব যাত্রীর ফ্লাইট হওয়ার কথা থাকলেও সোমবার রাত পর্যন্ত তারা হজ ক্যাম্পে যেতে পারেননি। ভিসা হয়েছে কি না, তাও জানেন না। আর এরই মধ্যে লাপাত্তা হয়েছে প্রতারকরা।
ঢাকার মালিবাগের একই ঠিকানায় বিএসবি ট্রাভেলস ও আল হেলাল নামের দুটি এজেন্সির অফিস। এ দুই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ১৭১ জন হজযাত্রী হজ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে লেনদেন করেছেন। পরে তারা জানতে পারেন, প্রতিষ্ঠান দুটির কোনোটিই সরকার অনুমোদিত এজেন্সি নয়। তারা বিভিন্ন দালালের মাধ্যমে হজযাত্রী সংগ্রহ করে অনুমোদিত এজেন্সির মাধ্যমে কিছু যাত্রী সৌদি আরবে পাঠায়। অন্যদের সঙ্গে প্রতারণা করে।
রাজধানীর শাহজাহানপুর থানার ওসি মনির হোসেন মোল্লা সোমবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দেড়শর বেশি হজযাত্রী প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। এখন পর্যন্ত কোনো জিডি বা মামলা হয়নি। তারা বৈধ নাকি অবৈধ এজেন্সি, তাও জানি না।’
তিনি বলেন, ‘এজেন্সি মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভুক্তভোগীদের সৌদি আরব পাঠানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু প্রক্রিয়া কোন পর্যায়ে আছে, তা নিশ্চিত নই। এজেন্সি মালিক একেক সময় একেক কথা বলছেন।’
এজেন্সি মালিক হিসাবে হজযাত্রীদের কাছে পরিচয় দেওয়া মাজহারুল ইসলাম তালুকদারকে ফোন দিলে তার মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। রাত ৮টা পর্যন্ত চেষ্টা করেও মোবাইল খোলা পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ব্যাংক থেকে ৬৫ লাখ টাকা তোলার সময় পুলিশের একটি এজেন্সি মাজহারকে আটক করেছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ভুক্তভোগী একাধিক হজযাত্রী যুগান্তরকে তাদের ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন। তবে কেউই নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। হজ গমনেচ্ছুরা বলছেন, ১৭১ জনের মধ্যে ৫০ জনকে পাঠানোর প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে বলে তাদের জানানো হয়েছে। কিন্তু সেই তালিকায় কাদের নাম আছে, তা প্রকাশ করেনি। একই সঙ্গে গণমাধ্যমে কথা বলতে বারণ করেছে এজেন্সি সংশ্লিষ্টরা।
রাজশাহী, ময়মনসিংহ, নরসিংদী, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এসব হজযাত্রী দশদিন আগে ঢাকায় এসেছেন। উত্তরা, পল্টন, ধানমন্ডিসহ হজযাত্রীদের সুবিধা অনুযায়ী হোটেলে উঠতে বলে প্রতারকরা। পরে এজেন্সির পক্ষ থেকে সেসব হোটেল বিল পরিশোধ করারও আশ্বাস দেওয়া হয়। এসবের কোনো প্রতিশ্রুতিই রাখা হয়নি। ভোগান্তির শিকার হজযাত্রীরা জানান, হজে যাওয়ার জন্য স্থানীয় পরিচিতদের মাধ্যমে তারা টাকা, পাসপোর্টসহ প্রয়োজনীয় কাগজ দিয়েছেন।
সোমবার রাতে মিন্টু রোডের ডিবি অফিসের সামনে থাকা ভুক্তভোগী এক হজযাত্রী যুগান্তরকে বলেন, এমন প্রতারণায় পড়ব, স্বপ্নেও ভাবিনি। আমাদের যারা ভোগান্তিতে ফেলেছে, তাদের যেন সরকার কঠোর শাস্তি দেয়। তিনি বলেন, থানা আর ডিবি অফিসে দৌড়াদৌড়ি করে সময় পার করছি। এই ছিল কপালে।
এদিকে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর একাধিক জনের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, উল্লিখিত নামের কোনো এজেন্সি তাদের সংগঠনের সদস্য নয়। বর্তমানে হজ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবে থাকা হাবের সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম সোমবার বিকালে যুগান্তরকে বলেন, প্রতিবছরই হজের আগে অনুমোদিত হজ এজেন্সি ছাড়া অন্য কারও সঙ্গে কোনো লেনদেন না করতে আমরা অনুরোধ করি। সরকারের পক্ষ থেকেও প্রচার চালানো হয়। কিন্তু মানুষ সচেতন হয় না। তিনি বলেন, এসব নামের প্রতিষ্ঠান হাবের সদস্য আছেন বলে আমার জানা নেই। কেউ যদি নিজ থেকে প্রতারকদের জালে ধরা পড়েন, তাহলে তো কিছু করার থাকে না।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চেষ্টা করলেও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাউকে টেলিফোনে পাওয়া যায়নি। হজসংশ্লিষ্ট বেশির ভাগ কর্মকর্তা আগেই সৌদি আরব চলে গেছেন। এদিকে হজ অফিসের পরিচালক সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, এ সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ তাদের কাছে আসেনি।
ফ্লাইট সম্পন্ন করেছে বিমান : চলতি বছরের প্রি-হজ ফ্লাইট সম্পন্ন করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। বাংলাদেশ থেকে ৬০ হাজার জন হজ পালনের অনুমোতি পেয়েছেন। ৫ জুন বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রীদের সৌদিযাত্রা শুরু হয়। ১৪ জুলাই থেকে বিমানের মাধ্যমেই হজযাত্রীদের ফিরতি যাত্রা শুরু হবে।