রামবসাক, শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ
সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুর উপজেলার বেলতৈল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে টিআর, কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্পের কাজ না করেই টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। চেয়ারম্যান হয়েই কাগজপত্রে প্রকল্পের কাজ দেখিয়ে বরাদ্দের টাকা ও চাউল আত্মসাৎ এর অভিযোগ ওঠায় এলাকায় চলছে সমালোচনার ঝড়। ইউনিয়নবাসীর অনেকেই বলছে বরাদ্দের টাকা ও চাউল আত্মসাৎ জন্যই সব প্রকল্পই নিজ এলাকায় দিয়েছে। অপরদিকে সচেতন মহলের প্রশ্ন কাজ না করে কিভাবে বিল উঠলো। তবে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, এই অনিয়মের সঙ্গে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও দায়িত্বপ্রাপ্ত দেখভাল কর্মচারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতা রয়েছে বলে ।
প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ের সূত্রে জানা যায়, ২১-২২ অর্থ বছরের ২ম পর্যায়ের সাধারণ প্রকল্প কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) প্রকল্পে চর কাদাই ব্রীজ হতে হাতেম সরকারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পূর্ণ নির্মানের নামে ১ লক্ষ ২৩ হাজার টাকা। কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) প্রকল্পে চর কাদাই আমিনুলের বাড়ি হয়ে রফিকের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারের নামে ১.৬০০ মেঃ টন চাউল। টি আর প্রকল্পে বেলতৈল ইউনিয়ন পরিষদ ভবন উন্নয়নের নামে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ও কাদাই বাদলা পাকা রাস্তা হতে গোপিনাথপুর কাশেমের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামতের নামে ১ লক্ষ ৫ হাজার টাকা বরাদ্দ পায়। এবং ২১-২২ অর্থ বছরের ৩য় পর্যায়ের সাধারণ প্রকল্প টিআর চর কাদাই মোতালেবের বাড়ি হয়ে মুজাম্মেলের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারের নামে ৯৫ হাজার টাকা বরাদ্দ পায়।
বেলতৈল ইউনিয়ন পরিষদ ভবন উন্নয়ন(টিআর) প্রকল্পের সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান এবং অপর ৪টি প্রকল্পের সভাপতি সভাপতি ৭ ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম চান্নু । কিন্তু প্রকল্পের কাজের বিষয়ে ইউপি সদস্য কিছুই জানেন না। তিনি চেয়ারম্যান এর সাথে কথা বলতে বলেন প্রতিবেদককে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চর কাদাই ব্রীজ হতে হাতেম সরকারের বাড়ি, আমিনুলের বাড়ি হয়ে রফিকের বাড়ি, মোতালেবের বাড়ি হয়ে মুজাম্মেলের বাড়ি একই রাস্তায়। অত্রএলাকার আনোয়ার হোসেন, হান্নান মোল্লা আবুল, রাকিব হাসানসহ মুজাম্মেল এর সাথে কথা বলে জানা যায়, এখানে স্থানীয় সংসদ সদস্যের বিশেষ বরাদ্দে রাস্তা হয়েছে এখনে ইউপি চেয়ারম্যান কোন কাজ করে নাই। মুজাম্মেল বলেন, আমি অন্যের বাড়ী দিয়ে যাতায়াত করি বিগত ১৫ বছরেও কেউ এখানে রাস্তা বা মাটি ভরাট করে নাই।
স্থানীয় সংসদ সদস্যের বিশেষ বরাদ্দের সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবে ওয়াহিদ শেখ কাজল বলেন, এখানে আমি রাস্তা করার জন্য মাটি ভরাট করেছি। তবে শুনেছি ঐ জায়গায় পিআই অফিস প্রকল্প দিয়ে কাজ না করেই আমার কাজ দেখিয়ে টাকা তুলে নিয়েছে।
কাদাই বাদলা পাকা রাস্তা হতে গোপিনাথপুর কাশেমের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত তো দুরের কথা এখানেও বিগত ১০ বছরের কেউ কখনো রাস্তা মেরামত করেনি এমনি অভিযোগ করে বললেন সাইফুল ইসলাম(ফটিক), স্বপন মিয়া, মঞ্জিল প্রাং, আব্দুল মান্নান, আইয়ুব আলীসহ এলাকাবাসী। তারা ক্ষোপ প্রকাশ করে বলেন, একটু বৃষ্টি হলেই এই রাস্তা হাটা যায় না। যেন একরমক মরন ফাঁদ হয়ে যায়।
অপরদিকে ইউনিয়ন পরিষদ উন্নয়নের নামে একটি হাজার লিটারের ট্যাংক এবং পরিষদের পয়নিস্কাশন ব্যবস্থার কাজ করেই প্রকল্পের বিল তুলে নিয়েছেন উক্ত প্রকল্পের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম।
এ বিষয়ে অত্র ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম এর কাছে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন বিশেষ বরাদ্দের কাজের পর থেকে আমি কাজ করেছি। এবং গতকাল থেকে গোপিনাথপুর কাশেমের বাড়ি পর্যন্ত কাজ ধরেছি। রং এর কাজ বাদ আছে তা আমি করিয়ে নিচ্ছি। তাহলে কাজ না করেই বিল তুললেন কিভাবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা কতৃপক্ষ দিতে পারে। তিনি আরও বলেন, সংবাদ পরিবেশন করলে ভুল বোঝাবুঝি হবে সম্পর্ক নষ্ট হবে।
কাজ না করেই বিল উত্তলনের বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের কাছে প্রশ্ন করেন গিয়ে যান। চেয়ারম্যান আমাকে বলেছেন এগুলো নিয়ে যদি কোন ঝামেলা হয় তা আমি ম্যানেজ করবো। আপনি গিয়ে রফিকের কাছে ফোন ধরিয়ে আমাকে দেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ তরিকুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পগুলোর ব্যপারে অভিযোগ পেয়েছি। কাজ না করে যদি বিল তুলে থাকে তা তদন্ত করে প্রমানিত হলে এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকতা কিভাবে বিল দিলো সে বিষয়েও বিধি মোতাবেক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
সচেতন মহলের দাবি, সরকার যে উদ্দেশ্যে এই প্রকল্পগুলো হাতে নিয়েছে, সেটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না হলে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নসহ ছোটবড় দুর্নীতি দিনদিন বেড়েই চলবে। এই কাজের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে সচেতন মহলসহ অত্র ইউনিয়নবাসী।