মোঃ জাবেদুল ইসলাম,আনোয়ারাঃঃ আনোয়ারায় সমবায় সমিতির এবং ব্যক্তিগতভাবে ঋণের নামে চলছে রমরমা সুদের ব্যবসা। সাধারণ মানুষ এসব সুদের কারবারির কাছে জিম্মি। মাস শেষে সুদের টাকা দিতে না পারলে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ বৃদ্ধি পায়। প্রশাসনের নজরদারী না থাকায় সুদ ব্যবসায়ীদের বেড়াজালে জিম্মি হয়ে পড়েছেন শতশত গরিব পরিবার।
উপজেলা বিভিন্ন ইউনিয়নের হাট বাজারের সমবায় সমিতির বা ব্যক্তিগতভাবে ঋণের জমজমাট চলছে সুদের ব্যবসা। মানুষের কাছ থেকে অস্বাভাবিক চড়া সুদ আদায় করছে। এদের খপ্পরে পড়ে মানুষ সর্বস্বান্ত হচ্ছে। এছাড়াও এনজিওগুলো ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা। প্রত্যন্ত গ্রামেও এখন ব্যাংকের শাখা আছে।
সুদ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কেউ টাকা নিতে চাইলে জমির দলিল জমা রেখে সাদা স্ট্যাম্পে কথিত চুক্তিপত্রের নামে স্বাক্ষর অথবা টিপসই নেয়। অনেক সময় ঋণ গ্রহণকারীর কাছ থেকে ব্যাংকের খালি পাতার চেকে সই নিয়ে থাকে। এর পাশাপাশি সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে থাকে। টাকা পরিশোধ করতে না পারলে ব্ল্যাংক চেকের পাতায় ইচ্ছামত অংক বসিয়ে নেয়। তারপর মামলা মোকদ্দমার ভয় দেখিয়ে চাপ দিতে থাকে।
ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, সমবায় সমিতির বা ব্যক্তিগতভাবে ঋণের সুদ ব্যবসায়ীরা দিন, সাপ্তাহিক ও মাসিক এবং মৌসুমি ফসল বাবদ ভিত্তিতে আদায় করা আকাশছোঁয়া সুদের পরিমাণও। দিন সুদের বলতে সাধারণ মানুষ বিপদে পড়ে সুদ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সকাল বেলায় টাকা নিয়ে যাবে।সন্ধ্যা বা রাতে নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে সুূদসহ আসল মুনাফা দিতে হবে চুক্তিতে। যদি দিতে না পারে তাহলে ভুক্তভোগী বসে রেখে আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হয়। সাপ্তাহিক সুদ বলতে মানুষ চুক্তি ভিত্তিতে সুদের টাকা নিয়ে তা নিদিষ্ট সাপ্তাহে পরিশোধ করতে হবে।যদি নিদিষ্ট সাপ্তাহের সুদসহ আসল টাকা পরিশোধ করতে না পারে তাহলে সুূদের টাকা বৃদ্ধি পেতে থাকবে। মাসিক সুদ বলতে অসহায় মানুষ বিভিন্ন সমস্যা সম্মুখীন হয়ে মাসিক চুক্তিতে সুদের টাকা নেন।নিদিষ্ট মাসে সুদের টাকা পরিশোধ করতে হয়।কোন সমস্যা কারণে যদি সুূদের টাকা পাশাপাশি মূল টাকা পরিশোধ না করে ততোদিন পর্যন্ত সুদের টাকা বোঝা বহন করতে হয়। মৌসুমি সুদ বলতে গ্রামের কৃষকরা কৃষি ক্ষেতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে। নতুন করে ওঠে দাড়ানো জন্য মৌসুমে ধান বা বিভিন্ন ফসল চুক্তি ভিত্তিতে সুদের টাকা নেওয়া হয়।নিদিষ্ট মৌসুমে ধান বা ফসল সমপরিমাণ টাকা পরিশোধসহ মুল টাকা পরিশোধ করতে হয়।যদি মৌসুমে ফসল বা সমপরিমাণ টাকা পরিশোধ না করে তাহলে সুদের টাকা বৃদ্ধি পেতে থাকবে।
নাজিম নামে এক ভুক্তভোগী জানান, পারিবারিক সমস্যা কারণে এক আত্মীয় কাছে গিয়েছিল ১ লাখ টাকা ধার নেওয়া জন্য। ওনি আমাকে জানানো ৯০ হাজার টাকা নিতে ১ লাখ টাকা দিতে হবে।নাজিম বললো এটা কেমন কথা ১০ হাজার টাকা বাড়তি দিতে হবে কেনো।সুদ ব্যবসায়ী জানান, আমি সবার কাছে যেমন সুদের টাকা লাগায় আপনাকে তেমন সুদের টাকা দিতে হবে।
সোলাইমান নামে এক ভুক্তভোগী জানান, ১০ হাজার টাকায় প্রতি সপ্তাহের সুদ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, কারো ক্ষেত্রে এক হাজার টাকা, মাসে সুদ হিসেবে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করে তারা। অথচ তাদের এই কারবারে সরকারের কোনো অনুমোদন নেই, সমিতির নামের কোনো নিবন্ধন নেই। অনিবন্ধিতভাবে গজিয়ে ওঠা এসব সমবায় সমিতি ও সুদের কারবারি থেকে ঋণ নিয়ে বহু মানুষ সুদের বোঝা টানতে টানতে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে।
তিনি আরো জানান, প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে জমজমাটভাবে সুদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালী একটি চক্র।সুদের ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে বিভিন্ন হয়রানি শিকার হতে হচ্ছের তাদের।সচেতন মহলের দাবি ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা যদি ওয়ার্ড ভিত্তিতে সুূদের ব্যবসায়ীদের তালিকা করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে সুদ ব্যবসায়ীদের অত্যাচার থেকে ভুক্তভোগীদের রক্ষা করা সম্ভব।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ জোবারয় আহমেদ জানান, সমবায় সমিতির বা ব্যক্তিগতভাবে সুদের ব্যবসা কেউ করতেছে কিনা আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।