দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খুলেছে বাংলাদেশিদের জন্য। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি শুরু হওয়ার প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন।
মালয়েশিয়াসহ কয়েকটি দেশ সফর থেকে ফিরে বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে মন্ত্রী এ আশাবাদ প্রকাশ করেন।
মালয়েশিয়ায় সফরকালে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল সাবরি ইয়াকুবের সঙ্গে আলোচনার কথা তুলে ধরে ড. মোমেন বলেন, ‘উনি বললেন, আপনার ওয়ার্কার কবে নাগাদ আসবে? তো, আমার মিশনের সঙ্গে আলাপ করলাম। তারা জানাল, সপ্তাহ দুই-একের মধ্যে।উনি বললেন, এই মুহূর্তে আমাদের ওয়ার্কার খুব দরকার।’
বাংলাদেশ থেকে কর্মী পাঠানো নিয়ে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলাম। তিনি বললেন যে, তাদের ওয়ার্কার দরকার, বাংলাদেশি ওয়ার্কার তারা চান।আমি বললাম, আমরা এক পায়ে দাঁড়িয়ে আমরা দিতে চাই। তবে একটা বিষয়, আমাদের ওয়ার্কার যারা আসবে তারা যেন এক্সপ্লয়টেড না হয়, বৈষম্যের শিকার না হয়, তাদের যেন ওয়েলফেয়ার দেখা হয়।’
‘এর জবাবে শ্রমিকদের প্রতি বৈষম্য না করার আশ্বাস দিয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী। উনি বললেন, আমরা একটা আইন করেছি, এই আইনের অধীনে যারাই কাজ করবে মালয়েশিয়াতে, কেবল বাংলাদেশি না, যে কোনো ওয়ার্কার্স, তাদের আমরা ভালো আবাসন দেব, তাদের প্রতি কোনো ধরনের বৈষম্য করা হবে না। আমরা এটার নিশ্চয়তা দিচ্ছি।’
মালয়েশিয়া সরকার তাদের পাঁচটি খাতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে (জিটুজি প্লাস) পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে রাজি হওয়ার পর ২০১৬ সালে ঢাকায় দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। পাঁচ বছর মেয়াদী এই চুক্তির আওতায় লোক পাঠানোর অনুমতি দেওয়া হয় ১০টি জনশক্তি রপ্তানিকারক এজেন্সিকে।
কিন্তু প্রবাসী এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর নেতৃত্বে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগসাজশে একটি চক্র ওই ১০ এজেন্সিকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট’ করে শ্রমিকদের কাছ থেকে দুই বছরে ২০০ কোটি রিঙ্গিত হাতিয়ে নেয় বলে অভিযোগ ওঠে।এরপর ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নতুন করে বাংলাদেশি কর্মীদের আর ভিসা দেয়নি মালয়েশিয়া। তবে আগে যারা ভিসা পেয়েছিলেন, তারা পরে মালয়েশিয়া যাওয়ার সুযোগ পান।
সরকারের তরফে নানা দেন-দরবার আর করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে শ্রমিক সঙ্কটের প্রেক্ষাপটে গত ডিসেম্বর বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়ার সিদ্ধান্ত অনুমোদন দেয় মালয়েশিয়া। এরপর গত বছরের ডিসেম্বর মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে কর্মী পাঠানোর বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই করে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়।
গত জুনের শুরুতে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারাভানানের ঢাকা সফরের সময় প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেছিলেন, জুনের মধ্যেই কর্মী যাবে মালয়েশিয়ায়। তবে সেটি হয়নি। তিনি তখন বলেছিলেন, এমওইউতে পাঁচ বছরে ৫ লাখ কর্মী নেওয়ার কথা। এ বছরের মধ্যে ২ লাখ নেওয়ার কথা। আমাদের তো মনে হচ্ছে, এই বছরের মধ্যেই পাঁচ লাখ যাবে।