ঢাকা , শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
সাধারণ ক্ষমার সীমা নির্ধারণ ও বিভাগীয় শহরে হাইকোর্ট বেঞ্চ গঠনে একমত রাজনৈতিক দলগুলো ফরিদগঞ্জে যৌথবাহিনীর অভিযানে ৫১০ পিস ইয়াবাসহ দুই মাদক কারবারি গ্রেফতার তিতাসে রড দিয়ে পিটিয়ে রাজমিস্ত্রি মোস্তফা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুই তরুণ আটক কুষ্টিয়ার খোকসায় গুলি করার পর যুবককে কোপালো সন্ত্রাসীরা বগুড়া, খুলনা, বরিশালেও হতে পারে বিপিএল ‎বংশীনগর সূর্য্য তরুণ উচ্চ বিদ্যালয়ের নব সভাপতিকে সংবর্ধনা নির্দেশনা এলে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত সেনাবাহিনী মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন নিয়ে কঠোর নির্দেশনা বিআরটিএর ফরিদগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধাদের ঈদ পূর্ণমিলনী অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত রুপসা দঃ ইউনিয়ন বিএনপির উদ্যোগে নতুন সদস্য ফরম বিতরণ অনুষ্ঠিত

সাধারণ ক্ষমার সীমা নির্ধারণ ও বিভাগীয় শহরে হাইকোর্ট বেঞ্চ গঠনে একমত রাজনৈতিক দলগুলো

সাংবাদিক

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐক্যমত গঠিত হয়েছে। একটি হলো রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার বিষয়টি সীমিত করা এবং অন্যটি হাইকোর্টের বিচারিক কার্যক্রম বিভাগীয় শহরে বিস্তৃত করার বিষয়। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে এসব তথ্য জানান বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।

 

তিনি বলেন, ‘আজ সবাই দীর্ঘ আলোচনার পর আমরা একমত হয়েছি যে সংবিধান অনুযায়ী, একই ধরনের কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় সুপ্রিম কোর্ট থাকবে। তবে হাইকোর্টকে ডিসেন্ট্রালাইজ করে বিভাগীয় শহরেও স্থায়ী বেঞ্চ সম্প্রসারণ করা হবে।’

তাহের বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রায় ২০ কোটি মানুষ। এই নাগরিকদের পাশাপাশি তাদের সন্তানরা বিচারের আশায় ঢাকা আসেন। তাদের আসা-যাওয়া, থাকা-খাওয়া, অপেক্ষা করার মতো সুযোগ খুব কম মানুষের আছে। এ অবস্থায়, সময় ও জনদাবি অনুযায়ী এটা প্রতিষ্ঠিত যে, বিচার প্রক্রিয়াকে জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়া উচিত। এখানে সবাই একমত হয়েছেন।’

তবে এ প্রক্রিয়ায় কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে বলে জানান তাহের। যেমন, বিচার ব্যবস্থাকে ডিসেন্ট্রালাইজ করতে পর্যাপ্ত সংখ্যক বিচারপতি ও আইনজীবীর প্রয়োজন হবে। তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে বিচারপতি ও পটেনশিয়াল আইনজীবী হয়তো কম হবে। তবে এই সংখ্যা যদি পাঁচগুণ বাড়িয়ে দিই, তাহলে বিচারপতি রিক্রুট করতে হবে। মেধাবী তো আছেই। এখন আইনজীবীর সংখ্যা কিন্তু কম নয়। এক কক্সবাজারেই কিন্তু শতাধিক আইনজীবী আছেন, যাদের কেউ কেউ ঢাকায় সুপ্রিম কোর্টে ও হাইকোর্টে প্র্যাকটিস করেন।’

তাহের বলেন, ‘সরকার যদি কোর্ট পর্যাপ্ত বাড়িয়ে, পর্যাপ্ত বিচারপতি নিয়োগ করে, দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণ দেন, তাহলে এ সমস্যা থাকবে না। এজন্য আমরা বাজেট বাড়াতে বলছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেমন আগে ডাক্তাররা গ্রামে বা এলাকায় যেতে চাইতেন না, এখন তো যাচ্ছেন। রাষ্ট্র যদি সেই ব্যবস্থা করেন, তাহলে বিচারপতি ও আইনজীবীরাও যাবেন।’

এক প্রশ্নের জবাবে তাহের বলেন, ‘সার্কিট বেঞ্চ কোনো সমাধান না, আমরা স্থায়ী বেঞ্চের কথা বলেছি। সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করতে হবে। সেই সংশোধনীতে আজকের যে সিদ্ধান্ত সেটা বাস্তবায়ন করা হবে।’

রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার বিষয়ে একটি সীমাবদ্ধতা তৈরিতে একমত হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। ইনসাফ ও সুষ্ঠু ন্যায় বিচারের স্বার্থে এটি করা হচ্ছে, যেন ক্ষমার ফাঁকে কোনো দুর্বৃত্ত বা দাগি, কোনো খুনি বা আসামি ছাড়া পেয়ে না যায়।’

তাহের বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করতে পারবেন তবে সেটা ভুক্তভোগী পরিবারের সম্মতির ভিত্তিতে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি বা কমিটি ক্ষমা করতে পারবেন তা নির্ধারণ করা হয়েছে। এজন্য একটা বডি করা হয়েছে, যার সুপারিশক্রমে রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করতে পারবেন।

কোন কোন ক্রাইটেরিয়ায় ক্ষমা করতে পারবেন তার একটি বিস্তারিত তালিকা করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আজকে নতুন একটি কথা যুক্ত করা হয়েছে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে, যা অন্য দলগুলোও সমর্থন করেছে। তা হচ্ছে, রাষ্ট্রপতি বা কমিটি যেসব রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কিত বা সাধারণ অপরাধ আছে, সেসব ক্ষেত্রে ক্ষমার জন্য চাইলে সুপারিশ করতে পারবেন।’

তবে ব্যক্তিগত অপরাধের ক্ষেত্রে তিনি বলেন, ‘যেমন কারো বাবাকে হত্যা করা হয়েছে, এই হত্যার বিচার হয়েছে ফাঁসি। এ ক্ষেত্রে কমিটি বা রাষ্ট্রপতি এককভাবে চাইলে ক্ষমা করতে পারবেন না। সেখানে আমরা বলেছি, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে অবহিত করতে হবে। কারণ একজনের বাবা খুনের অপরাধে অপরাধীকে অন্য আরেকজন ক্ষমা করতে পারেন না।’

তাহের বলেন, ‘তবে ভুক্তভোগীর পরিবার ও প্রতিষ্ঠিত ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকারীদের সম্মতির ভিত্তিতে ক্ষমা করা যাবে। ন্যায় বিচার ও ইনসাফভিত্তিক বিচার নিশ্চিত করার জন্য এটি একটি নতুন ডাইমেনশন।’

এই আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান ও ড. হামিদুর রহমান আযাদ।

ট্যাগ :

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপডেটের সময় : ০৪:৪৩:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই ২০২৫
৫১১ Time View

সাধারণ ক্ষমার সীমা নির্ধারণ ও বিভাগীয় শহরে হাইকোর্ট বেঞ্চ গঠনে একমত রাজনৈতিক দলগুলো

আপডেটের সময় : ০৪:৪৩:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই ২০২৫

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐক্যমত গঠিত হয়েছে। একটি হলো রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার বিষয়টি সীমিত করা এবং অন্যটি হাইকোর্টের বিচারিক কার্যক্রম বিভাগীয় শহরে বিস্তৃত করার বিষয়। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে এসব তথ্য জানান বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।

 

তিনি বলেন, ‘আজ সবাই দীর্ঘ আলোচনার পর আমরা একমত হয়েছি যে সংবিধান অনুযায়ী, একই ধরনের কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় সুপ্রিম কোর্ট থাকবে। তবে হাইকোর্টকে ডিসেন্ট্রালাইজ করে বিভাগীয় শহরেও স্থায়ী বেঞ্চ সম্প্রসারণ করা হবে।’

তাহের বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রায় ২০ কোটি মানুষ। এই নাগরিকদের পাশাপাশি তাদের সন্তানরা বিচারের আশায় ঢাকা আসেন। তাদের আসা-যাওয়া, থাকা-খাওয়া, অপেক্ষা করার মতো সুযোগ খুব কম মানুষের আছে। এ অবস্থায়, সময় ও জনদাবি অনুযায়ী এটা প্রতিষ্ঠিত যে, বিচার প্রক্রিয়াকে জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়া উচিত। এখানে সবাই একমত হয়েছেন।’

তবে এ প্রক্রিয়ায় কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে বলে জানান তাহের। যেমন, বিচার ব্যবস্থাকে ডিসেন্ট্রালাইজ করতে পর্যাপ্ত সংখ্যক বিচারপতি ও আইনজীবীর প্রয়োজন হবে। তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে বিচারপতি ও পটেনশিয়াল আইনজীবী হয়তো কম হবে। তবে এই সংখ্যা যদি পাঁচগুণ বাড়িয়ে দিই, তাহলে বিচারপতি রিক্রুট করতে হবে। মেধাবী তো আছেই। এখন আইনজীবীর সংখ্যা কিন্তু কম নয়। এক কক্সবাজারেই কিন্তু শতাধিক আইনজীবী আছেন, যাদের কেউ কেউ ঢাকায় সুপ্রিম কোর্টে ও হাইকোর্টে প্র্যাকটিস করেন।’

তাহের বলেন, ‘সরকার যদি কোর্ট পর্যাপ্ত বাড়িয়ে, পর্যাপ্ত বিচারপতি নিয়োগ করে, দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণ দেন, তাহলে এ সমস্যা থাকবে না। এজন্য আমরা বাজেট বাড়াতে বলছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেমন আগে ডাক্তাররা গ্রামে বা এলাকায় যেতে চাইতেন না, এখন তো যাচ্ছেন। রাষ্ট্র যদি সেই ব্যবস্থা করেন, তাহলে বিচারপতি ও আইনজীবীরাও যাবেন।’

এক প্রশ্নের জবাবে তাহের বলেন, ‘সার্কিট বেঞ্চ কোনো সমাধান না, আমরা স্থায়ী বেঞ্চের কথা বলেছি। সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করতে হবে। সেই সংশোধনীতে আজকের যে সিদ্ধান্ত সেটা বাস্তবায়ন করা হবে।’

রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার বিষয়ে একটি সীমাবদ্ধতা তৈরিতে একমত হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। ইনসাফ ও সুষ্ঠু ন্যায় বিচারের স্বার্থে এটি করা হচ্ছে, যেন ক্ষমার ফাঁকে কোনো দুর্বৃত্ত বা দাগি, কোনো খুনি বা আসামি ছাড়া পেয়ে না যায়।’

তাহের বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করতে পারবেন তবে সেটা ভুক্তভোগী পরিবারের সম্মতির ভিত্তিতে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি বা কমিটি ক্ষমা করতে পারবেন তা নির্ধারণ করা হয়েছে। এজন্য একটা বডি করা হয়েছে, যার সুপারিশক্রমে রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করতে পারবেন।

কোন কোন ক্রাইটেরিয়ায় ক্ষমা করতে পারবেন তার একটি বিস্তারিত তালিকা করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আজকে নতুন একটি কথা যুক্ত করা হয়েছে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে, যা অন্য দলগুলোও সমর্থন করেছে। তা হচ্ছে, রাষ্ট্রপতি বা কমিটি যেসব রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কিত বা সাধারণ অপরাধ আছে, সেসব ক্ষেত্রে ক্ষমার জন্য চাইলে সুপারিশ করতে পারবেন।’

তবে ব্যক্তিগত অপরাধের ক্ষেত্রে তিনি বলেন, ‘যেমন কারো বাবাকে হত্যা করা হয়েছে, এই হত্যার বিচার হয়েছে ফাঁসি। এ ক্ষেত্রে কমিটি বা রাষ্ট্রপতি এককভাবে চাইলে ক্ষমা করতে পারবেন না। সেখানে আমরা বলেছি, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে অবহিত করতে হবে। কারণ একজনের বাবা খুনের অপরাধে অপরাধীকে অন্য আরেকজন ক্ষমা করতে পারেন না।’

তাহের বলেন, ‘তবে ভুক্তভোগীর পরিবার ও প্রতিষ্ঠিত ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকারীদের সম্মতির ভিত্তিতে ক্ষমা করা যাবে। ন্যায় বিচার ও ইনসাফভিত্তিক বিচার নিশ্চিত করার জন্য এটি একটি নতুন ডাইমেনশন।’

এই আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান ও ড. হামিদুর রহমান আযাদ।