পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ফরজ হওয়ার আগে তাহাজ্জুদ নামাজ ফরজ ছিল। রাতের গভীরে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভের এক অপার মাধ্যম তাহাজ্জুদ নামাজ। ভাগ্যবানরা এই নামাজ আদায় করার সৌভাগ্য অর্জন করে।
তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে পড়তে প্রিয় নবী (সা.)-এর পা মোবারক ফুলে যেত, তবু তিনি নামাজ ছাড়েননি। কারণ এ সময় আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার প্রতি বিশেষ অনুগ্রহ বর্ষিত হয়। আয়েশা (রা.) বলেন, আল্লাহর নবী (সা.) রাতে এত অধিক নামাজ আদায় করতেন যে তার পদযুগল ফেটে যেত। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪৮৩৭)
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাহাজ্জুদের কথা আলোচনা করেছেন এবং তা মুমিনের বৈশিষ্ট্য বলে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘এবং (রহমানের বান্দার বৈশিষ্ট্য) যারা রাত অতিবাহিত করে নিজ প্রতিপালকের সামনে (কখনো) সিজদারত অবস্থায় এবং (কখনো) দণ্ডায়মান অবস্থায়।’ (সুরা : ফোরকান, আয়াত : ৫৩)
যে দম্পতি একে অন্যকে তাহাজ্জুদের জন্য জাগিয়ে তোলে, তাদের ওপর আল্লাহ তাআলার বিশেষ রহমত বর্ষিত হয়। আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ এমন ব্যক্তির প্রতি দয়া করুন যে রাতে সজাগ হয়ে নিজে নামাজ আদায় করে এবং তার স্ত্রীকেও সজাগ করে। স্ত্রী উঠতে না চাইলে সে তার মুখমণ্ডলে পানি ছিটায়। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৩০৮)
তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ও রাকাআত
ইশার নামাজ আদায়ের পর থেকে সুবহে সাদেকের আগ পর্যন্ত সালাতুল লাইল বা তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া যায়। তবে অর্ধ রাতের পর থেকে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া ভালো। শেষ রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা সর্বোত্তম।
তাহাজ্জুদ নামাজ ২ থেকে ১২ রাকাআত পর্যন্ত পড়া বর্ণনা পাওযা যায়। সর্ব নিম্ন ২ রাকাআত আর সর্বোচ্চ ১২ রাকাআত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৮ রাকাআত তাহাজ্জুদ পড়তেন। তাই ৮ রাকাআত তাহাজ্জুদ পড়াই ভালো। তবে এটা পড়া আবশ্যক নয়।
সম্ভব হলে ১২ রাকাআত তাহাজ্জুদ আদায় করা। তবে ৮ রাকাআত আদায় করা উত্তম। সম্ভব না হলে ৪ রাকাআত আদায় করা। যদি তাও সম্ভব না হয় তবে ২ রাকাআত হলেও তাহাজ্জুদ আদায় করা ভালো। তবে তাহাজ্জুদ নামাজের কোনো কাজা নেই।
তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই দুই রাকাআত করে এ নামাজ আদায় করতেন। যে কোনো সুরা দিয়েই এ নামাজ পড়া যায়। তবে তিনি লম্বা কেরাতে নামাজ আদায় করতেন। তাই লম্বা কেরাতে তাহাজ্জুদ আদায় করা উত্তম।
শুরুতে মনে মনে নিয়ত করুন।
তাকবিরে তাহরিমা ‘আল্লাহু আকবার’ বলে নিয়ত বাঁধা।
অতঃপর ছানা পড়া।
সুরা ফাতেহা পড়া।
সুরা মিলানো তথা কেরাত পড়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনেক লম্বা কেরাত পড়তেন। অতঃপর অন্যান্য নামাজের ন্যায় রুকু, সেজদা আদায় করা। এভাবেই দ্বিতীয় রাকাআত আদায় করে তাশাহহুদ, দরূদ ও দোয়া মাছুরা পড়ে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে নামাজ সম্পন্ন করা।
এভাবে দুই দুই রাকাআত করে ৮ রাকাআত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা উত্তম।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যথাযথভাবে রাতের শেষ প্রহরে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।