জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সৃষ্ট দাবানলের বিরুদ্ধে লড়াই ও ইয়াংসি নদীর অববাহিকাজুড়ে তীব্র দাবদাহের কবল থেকে ফসল রক্ষায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে চীনা কতৃপক্ষ। পাশাপাশি জারি করা হয়েছে চলতি বছরের প্রথম জাতীয় খরা সতর্কতা।
শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্ত সংস্থা রয়টার্স।
কয়েক সপ্তাহ ধরে দক্ষিণপশ্চিমের সিচুয়ান প্রদেশ থেকে ইয়াংসি নদীর অববাহিকার সাংহাই পর্যন্ত তীব্র গরম অনুভূত হওয়ার পর বৃহস্পতিবার রাতে জাতীয় ‘ইয়েলো অ্যালার্ট’জারি করা হয়। বেইজিংয়ের স্কেল অনুযায়ী সতর্কতার এ মাত্রা তৃতীয় ধাপের।
বৃহস্পতিবার দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা শিনহুয়া জানায়, খরার কারণে মধ্য চীনের ইয়াংশি প্রদেশে ইয়াংসি নদীর গুরুত্বপূর্ণ বন্যা অববাহিকা পোইয়াং হ্রদ তার স্বাভাবিক আকারের চেয়ে হ্রাস পেয়ে এখন এক চতুর্থাংশ হয়ে গেছে।
এ দিকে স্থানীয় সরকারের বরাতে শুক্রবার দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সিসিটিভি জানায়, চলতি বছর দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় চংশিংয়ে স্বাভাবিকের চেয়ে ৬০ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে এবং বেশ কয়েকটি জেলায় মাটির আর্দ্রতা মারাত্মভাবে হ্রাস পেয়েছে। যার ফলে চংশিংয়ের ৩৪টি কাউন্টিজুড়ে বয়ে যাওয়া ৬৬টি নদী শুকিয়ে গেছে।
চীনের আবহাওয়া ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, চংশিংয়ের নগর কেন্দ্রের উত্তরের বেইবেই জেলায় বৃহস্পতিবার ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। শুক্রবার সকালে দেশটির সবচেয়ে উষ্ণতম ১০টি এলাকার মধ্যে ছয়টিই চংশিংয়ে ছিল। অঞ্চলটির বিশান জেলার তাপমাত্রা ইতোমধ্যে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি পৌঁছেছে। অন্যদিকে সাংহাই শহরের তাপমাত্রা ইতোমধ্যেই ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠে গেছে।
চংশিং অঞ্চলের পার্বত্য এলাকায় ও বনগুলোতে দাবানল দেখা দেওয়ায় দমকলকর্মীরা উচ্চ সতর্ক অবস্থায় আছেন। অঞ্চলটিতে হিটস্ট্রোকের সংখ্যাও বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছে সিসিটিভি।
তীব্র দাবদাহে ক্ষতির শঙ্কার মধ্যে থাকা ফসল রক্ষার জন্য চংশিং কৃষি ব্যুরো বিশেষজ্ঞদের টিম গঠন করেছে এবং শরতে ফসল কাটার আগে ক্ষতি পূরণের জন্য রোপণ সম্প্রসারিত করেছে।
চীনের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় খরা কবলিত কৃষি অঞ্চলগুলোতে পালা করে কে কখন পানি সরবরাহ পাবে তা নির্ধারণ করে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে চীনের জরুরি মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শুধু জুলাইয়ে উচ্চ তাপমাত্রার জন্য ২.৭৩ বিলিয়ন ইউয়ান বা ৪০ কোটি ডলারের প্রত্যক্ষ অর্থনৈতিক ক্ষতি এবং ৫৫ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
চীনের আবহাওয়া সংস্থা জানিয়েছে, গত মাসে দেশটির ৪৫ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার বা দেশটির মোট আয়তনের প্রায় অর্ধেক এলাকা জুড়ে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও তার বেশি তাপমাত্রা অনুভব করা গেছে।