সম্প্রতি দ্রব্যমূল্য লাগামহীনভাবে বেড়ে চলেছে। বিশেষ করে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি করা হচ্ছে বলে বিভিন্ন মহল বলছে। সরকারের দপ্তরগুলোর কয়েকটি অভিযানে ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মজুদদারদের কবল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণে ভোগ্যপণ্য। ফলে মজুদ করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির বিষয়টি হাতে-নাতে প্রমাণ হয়েছে।
একইসাথে সরকারের একাধিক সংস্থা এ ব্যাপারে অনুসন্ধান করে বেশকিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পেছনে একটি রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি আছে বলে সরকারি সংস্থাগুলো মনে করছে। সরকারকে বিতর্কিত করার উদ্দেশ্যে বিএনপি ও জামায়াতের বেশ কয়েকজন নেতা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
ইতিমধ্যে এই ষড়যন্ত্রকারীদেরকে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং তাদেরকে আইনের আওতায় আনার প্রস্তুতি চলছে বলেও সরকারের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে।
গত কিছুদিন ধরে সয়াবিন তেলের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। বাজার থেকে সয়াবিন তেল উধাও হয়ে যাচ্ছে। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়ানো হচ্ছে। সয়াবিন তেলের এই কৃত্রিম সংকট তৈরির পেছনে রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি আছে বলে জানা গেছে।
সরকারি সংস্থাগুলো বলছে, বাজারের পর্যাপ্ত সয়াবিন তেল থাকার পরও কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হচ্ছে। আর এই কৃত্রিম সংকট তৈরি পেছনে বিএনপি-জামায়াতের একটি মহল জড়িত বলে জানা গেছে। বিএনপির অন্তত দুজন নেতাকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যারা মজুতদারদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ করেছেন এবং এই সংকট সৃষ্টিতে উস্কানি দিচ্ছেন।
এদের মধ্যে আব্দুল আউয়াল মিন্টু এবং আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী অন্যতম বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রের দাবি। আবদুল আউয়াল মিন্টুর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান কৃষিখাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এছাড়া এফবিসিসিআই’র সাবেক প্রধান হিসেবে ব্যবসায়ী মহলে তার একটা ভূমিকা আছে। তাছাড়া মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তার যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। এসব কারণেই তিনি তেলের বাজার অস্থির করার ক্ষেত্রে এক ধরণের ভূমিকা রাখছেন বলেও সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।
বাংলাদেশের ভোজ্য তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ। আর এই খাতুনগঞ্জে যারা ব্যবসায়ী আছেন, তাদের সাথে নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং চট্টগ্রামকেন্দ্রিক বিএনপির রাজনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর। এর আগেও যখন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হয়েছিল তখনও আমীর খসরু মাহমুদের নাম সামনে এসেছিল।
এবার সয়াবিন তেলের সিন্ডিকেটেও আমীর খসরু মাহমুদের নাম আসছে। সরকারকে চাপে ফেলার জন্য খাতুনগঞ্জের ডিলারদেরকে মাল সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া এবং মাল গোডাউনে মজুদ রেখে বাজারের সংকট সৃষ্টির প্ররোচনা দিয়েছেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী- এমন তথ্য সরকারের একাধিক সংস্থার কাছে রয়েছে।
খাতুনগঞ্জের এই ব্যবসায়ী মহলটির মধ্যে আমীর খসরুর প্রভাব রয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এছাড়াও ভোজ্যতেল আমদানিকারকদের সঙ্গে আব্দুল আউয়াল মিন্টুর ব্যবসায়িক যোগাযোগ দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে। আর এভাবেই সয়াবিন তেলের সংকট তৈরি করা হচ্ছে বলে সরকারি সূত্রগুলোর দাবি।
পাশাপাশি রমজান মাসে যেন দ্রব্যমূল্য আরও বাড়ে, সেজন্য বিভিন্ন খাতগুলোকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে- পেঁয়াজ, মশুর ডাল, চানাবুট বা ছোলা, চিনি ইত্যাদি। এই পণ্যগুলোর আচমকা মূল্যবৃদ্ধির একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল বলে জানা যায়। তবে সরকার হঠাৎ করে এসব পণ্যের ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার করে নেওয়ায় জনমনে স্বস্তি ফিরেছে অনেকটাই।
তাছাড়া খাতুনগঞ্জে ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশ জামায়াতপন্থী। সবকিছু মিলিয়ে দ্রব্যমূল্যের একটি কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাজারকে অস্থির করে তোলা এবং জনগণকে খেপিয়ে দেওয়ার একটি নীলনকশার বাস্তবায়ন চলছে বলেও বিভিন্ন সূত্রগুলো মনে করছে।
কাজেই, এটি কেবলমাত্র বিশ্ববাজারের প্রভাবে নয় বরং এর পেছনে একটি রাজনৈতিক দুরভিসন্ধির রয়েছে বলেও কোনো কোনো মহল মনে করছে।