৫৫ বছর বয়সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে আলোচনায় আসা গাজীপুরের বেলায়েত শেখ বেসরকারি বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম, কমিউনিকেশন অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাজশাহীর বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জার্নালিজম বিভাগের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে। দুপুরে নিজের ফেসবুক পেজ থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার জানান বেলায়েত।
বিভাগের সমন্বয়ক শাতিল সিরাজ জানান, ৬০ নম্বরের এ পরীক্ষায় তিনি পেয়েছেন ৩২ নম্বর। ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
প্রতিক্রিয়ায় বেলায়েত শেখ বলেন, ‘পরীক্ষায় ফেল গেলে কত কষ্ট লাগে, তা যে ফেল করে সেই জানে। শেষ পর্যন্ত উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়েছি, এই আনন্দ বলে বোঝানো যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকতা বিভাগ আছে এমন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেই ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলাম। চান্স না পেয়ে খুব হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। এ অবস্থায় বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর পরামর্শে তাদের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিই।’
রাজশাহীতে গিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া কতটা সম্ভব হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমারে এখন আটকায় রাখার মতো কিছু নাই। করতোয়া কর্তৃপক্ষ যদি রাজশাহীতে একটা কাজের সুযোগ করে দেয় তাহলে খুব ভালো হয়। না হলে মায়ের অনুমতি নিয়ে যেভাবে হোক পড়াশোনা চালিয়ে যাব।’
প্রসঙ্গত, বর্তমানে দৈনিক করতোয়ার শ্রীপুর প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত বেলায়েত ১৯৮৩ সালে প্রথমবার এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিলেও টাকার অভাবে নিবন্ধন করতে পারেননি। ১৯৮৮ সালে ফের দেশব্যাপী প্রলয়ঙ্করী বন্যার কারণে তার পরীক্ষায় বসা হয়নি। কয়েক মাস পর আলোকচিত্রীর কাজ নেন। কর্মজীবনে ঢুকে আর পড়ালেখা করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নেন। এর মধ্যে দুই ছেলে আর এক মেয়ের বাবা হয়ে যান। নিজের স্বপ্ন সন্তানদের মাধ্যমে পূরণের ব্যাপারে ভাবেন। কিন্তু, তার মেয়ে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেলেও পড়ার আগ্রহ দেখাননি। বড় ছেলেও পড়ালেখা বিমুখ। ছেলেমেয়েরা তার স্বপ্ন পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েন তিনি।
অদম্য বেলায়েত হাল না ছেড়ে ২০১৯ সালে এসএসসি এবং ২০২১ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। আশপাশের মানুষের উপহাস আর বিদ্রুপ উপেক্ষা করে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার পর স্বপ্ন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়ার। সে অনুসারে চলতি বছরের ১১ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন। কিন্তু সুযোগ পাননি। পরে একে একে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তি পরীক্ষা দেন তিনি।