মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি :
মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরে মেলার নামে কয়েক লাখ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। চাঁদাবাজির অভিযোগের কারনে গত রবিবার সন্ধায় প্রশাসন অনুমোদনহীন মেলাটি বন্ধ করে দেওয়ার পরদিনই সোমবার বিকাল থেকে চাঁদাবাজরা আবার মেলাটি চালু করে। শ্রীনগর উপজেলার হাঁসাড়া ইউনিয়নের পালের বাড়ি এলাকার শত বছরের পুরনো হিন্দু সম্প্রদায়ের লক্ষী পূজার এই মেলাকে কেন্দ্র করে চাঁদাবাজির ঘটনায় বিব্রত ওই এলাকার সাধারণ মানুষ।
স্থানীয়রা জানায়, পালের বাড়ির লক্ষী পূজাকে কেন্দ্র করে প্রতিবছরই হাঁসাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের জায়গায় মেলা বসে। মেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশা পাশি বিভিন্ন ধর্মের লোকজন সমাগম হয়। এবারও মেলাকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন দোকানপাট আসতে শুরু করে। কিন্তু ওই এলাকার রফিক মাস্টার পূজা কমিটির সভাপতি কালিপদ রাজবংশী ও সাধারণ সম্পাদক শুভঙ্কর রাজবংশী সহ কয়েকজনকে নিয়ে সিন্ডিকেট তৈরি করে বিভিন্ন দোকান থেকে চাঁদা উঠানো শুরু করে।
রবিবার দুপুরে সরজমিনে গেলে দোকানীরা চাদাবাজির বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেন। তারা জানান, এক চটপটির দোকানীর কাছ থেকেই ৫ দিনের মেলা বাবদ আদায় করা হয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার টাকা।নিমকী ও পিয়াজুর দোকানীদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ৭১ হাজার ৫শ টাকা। দোলনা ও চরকী বসানো হয়েছে আরো বেশী টাকার বিনিময়ে। অপরদিকে লেইস ফিতার ২০ টি দোকান থেকে প্রতিদিন সাড়ে ১২শ টাকা আদায়ের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।তাছাড়া খেলনা, আখের রসের দোকান, বেলুন, রং ট্যাটুর দোকান সহ অন্তত ৫০ টি দোকান থেকে প্রতিদিন বাবদ ৩শ ৭০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, সিন্ডিকেটটি ৫ দিনের মেলা বাবদ প্রায় পৌনে ৫ লাখ টাকা আদায় করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পর্যায়ক্রমে তারা নিধার্রিত টাকার বাকী অংশ আদায় করে নিবে।
সোমবার সন্ধায় মেলায় গিয়ে কথা হয় সাথী রাজবংশী নামের এক নারীর সাথে। তিনি জানান, পার্শ্ববর্তী সিরাজদিখান উপজেলায় তার বিয়ে হয়েছে। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও মেলা উপলক্ষে সন্তানদের নিয়ে বাবার বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন। কিন্তু মেলায় আসার পর দোকানীরা বিভিন্ন পন্যের এমন দাম চাচ্ছেন যা কেনা সম্ভব নয়। পালের বাড়ী এলাকার আরেক দোকানী বলেন, বিদ্যুতের এই সংকটের সময়ে মেলায় প্রায় শতাধিক অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। এগুলো দেখার কেউ নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পূজা কমিটির এক সদস্য অক্ষেপ করে বলেন, কয়েক জনের স্বার্থের কারনে আমাদের মেলাটি ঐতিহ্য হারাচ্ছে। বাড়তি টাকা দিয়ে দোকান বসানোর কারনে আমাদের এলাবাসীদের কাছ থেকেই দোকানীরা সেই টাকা তুলে নিচ্ছে। এর প্রভাব পরবে আগামীতে। এই বিষয়ে পূজা কমিটির সভাপতি কালীপদ রাজবংশী কোন কথা বলতে রাজি হননি।
শ্রীনগর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম মদন গোপাল সাহা বলেন, সাইড বা অবৈধ সংযোগের কারনে বাড়তি লোড তৈরি হয়ে ক্ষতি হতে পারে। এই বিষয়ে এখনই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শ্রীনগর থানা পুলিশ মেলাটি বরিবার সন্ধায় বন্ধ করে দিয়ে শুধু পূজা উদযাপন করতে বলে। কিন্তু অজ্ঞাত কারনে সোমবার বিকাল থেকে আবার মেলাটি শুরু হয়।
শ্রীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আমিনুল ইসলাম সোমবার রাত ৮টার দিকে জানান, রবিবার অনুমোদনহীন মেলাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তা আবার কেউ চালু করে থাকলে এখনই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
শ্রীনগর উপজেলা নিবার্হী অফিসার মোহাম্মদ হোসেন পাটওয়ারী বলেন, মেলার জন্য কেউ অনুমুতি নেয়নি। দোকান বরাদ্দের নামে টাকা তোলার বিষয়ে তিনি বলেন, এই ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছি।