আনোয়ার সাদত জাহাঙ্গীর,ময়মনসিংহঃ
ত্রিশাল উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষকরা ত্রিশাল বাজারের মাদরাসা রোড এলাকায় সরকারি খাস জমিতে একটি ভবন নির্মাণ করে সেখানে মাধ্যমিক শিক্ষক কল্যাণ সমিতির কার্যালয় হিসেবে গত ৩০ বছর ধরে ব্যবহার করে আসছিলেন।ওই খাস জমির ভুয়া দলিল সৃজন করে স্থানীয় এক প্রভাবশালী লোকবল নিয়ে শুক্রবার রাতে দখলে নেয়।এনিয়ে সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গণে তীব্র সমালোচনার ঝড় উঠে। পরে মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা উপজেলা পরিষদ চত্তর থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সমিতির কার্যালয়ের সামনে সমাবেত হলে ১নং খাস খতিয়ানের সরকারি ওই সম্পত্তি দখলমুক্ত করেন উপজেলা প্রশাসন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ত্রিশাল মৌজার ত্রিশাল পৌর শহরের আব্বাছিয়া ফাজিল মাদরাসা সংলগ্ন ১নং খাস খতিয়ানের ২০৫৯ নং দাগে ১৯৭৮ সালে সাড়ে তিন শতাংশ জমি মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদ পরিবারের পক্ষে লীজ নেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এবিএম আব্দুর সবুরের ছেলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো.নজীব হাসান। এরপর দীর্ঘদিন ওই জায়গাটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়েছিল। নজীব হাসানের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে সেখানে স্থাপনা নির্মাণ করেন উপজেলার বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। পরে ওই ভবনে গত ৩০ বছর ধরে মাধ্যমিক শিক্ষক কল্যাণ সমিতির কার্যলয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
২০১৮ সালে ওই জমির একটি জাল দলিল সৃজন করে স্থানীয় এবিএম ইব্রাহিম খলিল রহিম নামে এক ব্যক্তি সিনিয়র সহকারী জজ, ত্রিশাল আদালতে সরকারের বিরুদ্ধে একটি মোকাদ্দমা দায়ের করেন। ডিগ্রিও পান তিনি। ওই রায়ের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতে আপিল করলে ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তার প্রতিবেদনে,এবিএম ইব্রাহিম খলিল রহিম মোকাদ্দমায় যেসকল তথ্যাদি উপস্থাপন করেছিলেন তা ভুয়া এবং মিথ্যা প্রমাণিত হয়।
পরে ৭ অক্টোবর শুক্রবার রাতে লোকজন নিয়ে তালা ভেঙে মাধ্যমিক শিক্ষক কল্যাণ সমিতির অফিস দখলে নেয় এবিএম ইব্রাহিম খলিল রহিম। শিক্ষকদের ব্যবহৃত ওই ভবন দখলে নেয়ার ঘটনায় উপজেলা জুড়ে সকল সামাজিক,সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অঙ্গণে তীব্র সমালোচনার ঝড় উঠে। পরে গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সমিতির কার্যলয়ের সামনে সমবেত হন। তাদের ঠেকাতে সেখানে অবস্থান নেয় রহিমের লোকজনও।
১নং খাস খতিয়ানের সরকারি ওই সম্পত্তি দখলমুক্ত করতে ঘটনাস্থলে যান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হাসান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ। বিজ্ঞ আদালতের সিদ্ধান্ত ঘোষনা পর্যন্ত উভয়পক্ষকে অপেক্ষা করতে বলে ওই ভবনে নতুন তালা ঝুলিয়ে দেন। এসময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসিল্যান্ড হাসান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, এসএ ও বিআরএস সূত্রে ওই জমি সরকারের ১নং খাস খতিয়ানভুক্ত সম্পত্তি। এটা কোনভাবেই ব্যক্তি মালিকানায় দলিল হতে পারেনা।
সরকারি নজরুল একাডেমীর প্রধান শিক্ষক মেজবাহ উদ্দিন বলেন,কোন দখলদার শিক্ষক সমিতির ঘর দখলে নিবে তা কোন মতেই কাম্য নয়। আমাদের কার্যালয় রাতের আধারে দখল নিলে আমাদের কে খোলা আকাশের নিচে বসাতে চাই। আমরা প্রশাসনের কাছে আমাদের কার্যালয় উদ্ধারের পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ জানায়।
শিক্ষক সমিতির অফিস দখলের ঘটনায় উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবুল কালাম তীব্র নিন্দা ও সমালোচনা করে বলেন, শিক্ষকরা জাতি গড়ার কারিগর। খাস জমিতে গড়ে উঠা তাদের অফিস দখলের বিষয়টি কোনভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। দখলদার যতই শক্তিশালী হোক, আমরা তাদের প্রতিহত করবো। দলের কেউ জড়িত থাকলে, তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে দখলদার রহিম বলেন,আমি আদালতের রায় অনুযায়ী আমার জায়গা আমি দখল করে বুঝে নিয়েছি। শিক্ষক সমিতি এই জমিতে ভাড়াটিয়া ছিলেন।