দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য সাহিত্যে আমির হামজার নাম ঘোষণার পর বিতর্ক ওঠায় তা পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জাতীয় পুরস্কার সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির আহ্বায়ক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকে এ কথা জানন।
তিনি বলেছেন, তারা অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হবে। পর্যালোচনার পর সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার সুযোগও রয়েছে।
আমির হামজাকে নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী বলেন, আমরা পত্রপত্রিকায় দেখেছি, লক্ষ্য করেছি বিভিন্ন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের মতামত। আমি খতিয়ে দেখি সেগুলো সঠিক অভিযোগ কি না।
তিনি আরও বলেন, যেমন- মার্ডার, এগুলোরর সাথে সম্পৃক্ত কি না? তার সাহিত্যকর্ম কী আছে, সেগুলো ভালো করে খতিয়ে দেখব।
আমির হামজার পুরস্কারপ্রাপ্তি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। ওইসব আলোচনায় আমির হামজার ছেলে উপসচিব আছাদুজ্জামান তার নিজের বাবাকে ক্যারিয়ারের সিঁড়ি বানাতে গিয়ে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার প্রক্রিয়াকে ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।
সেই সঙ্গে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে আসে, ১৯৭৮ সালে একটি খুনের মামলার প্রধান আসামি ছিলেন আমির হামজা। বিচারিক আদালতের রায়ে ওই মামলায় তার যাবজ্জীবন সাজা হলেও পরবর্তীতে ‘রাজনৈতিক বিবেচনায়’ সাধারণ ক্ষমা পান তিনি।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, সরকার যদি আমির হামজাকে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করতেই চায় তাহলে সাহিত্যে কেন করতে হবে। এ পুরস্কার তাকে খুব সহজেই স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ কোটায় দিতে পারত। মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান আছে, যা সাহিত্যে নেই। জাতীয় পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা না থাকায় পদকপ্রাপ্তির প্রস্তাবে নানা অপ্রাসঙ্গিক বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘৬ ফুট ৫ ইঞ্চি উচ্চতার এই কবি রণাঙ্গনের দুর্ধর্ষ গেরিলা’ এর মতো প্রশংসা বাক্যও রয়েছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেছেন, মন্ত্রিপরিষদের আবেদনে ৯ ধরনের তথ্য তুলে ধরতে হয়। অন্যদের তুলনায় কোনোটিতেই আমির হামজা এগিয়ে নেই। ইমদাদুল হক মিলন একটি জাতীয় দৈনিকের সম্পাদক ছিলেন। মাহবুবুল হক বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অধ্যাপনা করেছেন ৪০ বছর। খালেকদাদ চৌধুরী আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান রেডক্রসের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন পর পর দুবার। সেলিম আল দীন বাংলাদেশের শ্রমজীবী, পেশাজীবী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবন তার নাটকে মহাকাব্যিক রূপ দিয়েছেন, অধ্যাপনা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ে। আমির হামজার এ ধরনের কোনো ভূমিকাই নেই।
স্বাধীনতা পুরস্কারের মতো রাষ্ট্রীয় মর্যাদাপূর্ণ সম্মাননা নিয়ে বিভিন্ন সময় বিতর্ক হয়েছে। এর আগে ২০২০ সালে এস এম রইজ উদ্দিন আহম্মদ নামের এক ব্যক্তিকে সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়। এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হলে তালিকা থেকে রইজ উদ্দিনের নাম বাদ দেওয়া হয়।
গত মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ বছরের স্বাধীনতা পুরস্কার ঘোষণা করে। সাহিত্যে আমির হামজা ছাড়াও স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ, চিকিৎসাবিদ্যা, স্থাপত্য এবং গবেষণা ও প্রশিক্ষণে অবদানের জন্য মোট ১০ ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।