আলীকদম (বান্দরবান) প্রতিনিধিঃ আজ (রবিবার) আলীকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) অফিসার মেহরুবা ইসলাম স্থানীয় সাংবাদিকদের নিয়ে প্রেস ব্রিফিং করেছেন। আইন শৃঙ্খলা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো উন্নয়ন, পর্যটন, কৃষি ও পরিবেশ সুরক্ষা, ত্রাণ ও মানবিক সহায়তাসহ ১২টি বিষয়ের ওপর গত ছয়মাসে তিনি ‘অগ্রযাত্রায় আলীকদম’ মিশন বাস্তবায়ন করেছেন বলে জানান। উপজেলা প্রশাসনের জনকল্যাণমুখী কাজের সাথে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের সম্প্রীতির বন্ধন অটুট রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্বের জবাবে ইউএনও মেহরুবা ইসলাম বলেন, আমি চোরাচালান বিরোধী অভিযান পরিচালনা করায় হুমকী পেয়েছি। তাই আপাতত অভিযান করছিনা। বর্তমানে বিজিবি ও পুলিশ চোরাচালানবিরোধী অভিযান পরিচালনা করছেন। এতে আমি একমত রয়েছি। তবে কে বা কারা তাকে হুমকী দিয়েছেন সে প্রশ্নের উত্তরে তিনি প্রকাশ্যে কিছু বলতে রাজি হননি।
গরু চোরাচালান রোধে তার গৃহীত কর্মকান্ড উল্লেখ করে তিনি বলেন, মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ২৬টি এবং টাস্কফোর্সের অভিযানের মাধ্যমে মিয়ানমার হতে অবৈধভাবে আনা ৪শ’ গরু-মহিশ জব্দ করে নিলাম লব্ধ প্রায় ২ কোটি টাকা রাজস্ব সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান করা হয়।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ গোলাম ফারুক, উপজেলা প্রকৌশলী আসিফ মাহমুদ, সহকারি প্রোগ্রামার মৃন্ময় দাশ, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সৌভ্রাত দাশ, উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোঃ জহিরুল ইসলাম ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল মান্নান প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে ইউএনও আরো বলেন, আমি অন্যান্য কর্মসূচী বাস্তবায়নের পাশাপাশি নারী উন্নয়ন, এনজিও মনিটরিং, দিবস উদযাপন, সামাজিক সম্প্রীতি সভা আয়োজন, সচেতনতা প্রসার ছাড়াও আন্তঃদপ্তর যোগাযোগ স্থাপনে অভূতপূর্ব সক্ষমতা দেখিয়েছি।
তিনি বলেন, আমি গত এপ্রিলে আলীকদমে যোগদান করি। এরপর থেকে ২৪টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ৩৮টি মামলায় ২ লাখ ৬৮ হাজার ২ শত টাকা জরিমানা আদায় করেছি। এরমধ্যে অবৈধভাবে স্থাপিত পশুহাট অপসারণ, রেপারপাড়া টোল পয়েন্টে মূল্য তালিকা না টাঙানোয় জরিমানা, অবৈধভাবে পরিচালিত ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা, মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রির দায়ে বাজারগুলোতে জরিমানা প্রভৃতি তিনি উল্লেখ করেন।
এছাড়াও ভোক্তা অধিকার, সড়ক পরিবহন, ধূমপান এবং তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার, বাল্য বিবাহ নিরোধ প্রভৃতি আইন বাস্তবায়নে এবং জনসচেতনতায় উপজেলা প্রশাসনের গৃহীত কাজে বিবরণ তিনি তুলে ধরেন। তাছাড়াও কাঠ ও পাথর পাচার, মাদকসেবীদের আড্ডাস্থলে অভিযানসহ সামাজিক প্রচারণায় সফলতার কথা তিনি উল্লেখ করেন।
শিক্ষাক্ষেত্রে সচেতনতার প্রসারে উদ্ভাবনী পরিকল্পনা ‘অগ্রযাত্রায় আলীকদম’ নামে কার্যক্রমের মাধ্যমে ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবক-তরুণ সমাজে এবং সাধারণ মানুষের নিকট শিক্ষার জন্য অনুরণন সৃষ্টির কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে উল্লেখ করে ইউএনও মেহরুবা ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যে উপজেলার ৩৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আকস্মিক পরিদর্শন ও ১৯টিতে মা-সমাবেশ করা হয়েছে। এছাড়াও 5টি মাধ্যমিক স্কুল ও মাদরাসা পরিদর্শন ও ৩টিতে মা-সমাবেশ করা হয়।
অবকাঠামো ও পর্যটন উন্নয়নে উপজেলা প্রশাসনের গৃহীত কাজের বর্ণনা দিয়ে ইউএনও বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে ৩০২ টি ঘর নির্মিত হয়েছে। টি.আর, কাবিখা, কাবিটা, বিবিধ বরাদ্দে ইতোমধ্যে ৫৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। পর্যটন বিকাশে আলীকদম-থানচি সড়কের ১৩ কিলোমিটার এলাকায় তুইলিপ ভিউ পয়েন্ট, মায়ালেক, তুলি গার্ডেনের উন্নয়নে কাজ করা হয়েছে। উপজেলা পরিষদ এলাকায় ‘বঙ্গবন্ধু চত্বর’ করে সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, কৃষি ও পরিবেশ সুরক্ষায় সার যোগান মনিটরিং, তামাক মুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয়ে নদী তীরবর্তী জমিতে তামাক চাষ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়াও ত্রাণ এবং মানবিক সহায়তা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নারী উন্নয়নের তার গৃহীত কাজে বিবরণ তিনি তুলে ধরেন।
উপজেলা প্রশাসনের সাথে আন্তঃদপ্তর যোগাযোগ স্থাপন করে সেনা জোন ও বিজিবি একযোগে কাজ করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।