সাতকানিয়া প্রতিনিধি, মোহাম্মদ হোছাইন
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার শিমের রাজ্য হিসেবে পরিচিত পুরানগড় ইউনিয়ন। উপজেলার উৎপাদিত সবজির মধ্যে বিশাল একটি অংশ উৎপাদন হয় এই ইউনিয়নে। বেশ কয়েক ধরণের সবজি চাষ হলেও সুস্বাদু শিমের আবাদ রাজত্ব ধরে রেখেছে যুগের পর যুগ। স্থানীয় জাতের এই শিমের কদর রয়েছে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। বান্দরবান সড়কের বাজালিয়ার বাস স্টেশনের উত্তরে কিছুদূর গেলেই শঙ্খ নদীর পূর্ব পাড়ে পিচ ঢালা সড়ক দিয়ে যাওয়ার পথে বাড়িঘরের আঙিনায় দেখা মিলবে ছোট বড় শিম ক্ষেত। নয়াহাট বাজার পার হয়ে শিলঘাটার দিকে এগুতে থাকলে রাস্তার দু’পাশে যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই মাঠের পর মাঠ শিমের ক্ষেতের দেখা মিলবে। সুয়ালক খালের ব্রিজ পার হয়ে বৈতরণী গ্রামে শিমের লতা-পাতার সবুজ সমারোহের মাঝে গোলাপি সাদা ফুল যে কারো নজর কাড়বে। আর এই শিমের থোকাতেই স্বপ্ন বুনছেন পুরানগড় ইউনিয়নের শিমের চাষিরা।
স্বল্প পুঁজিতে শিম চাষ করে এখানকার অনেকেই নিজেদের ভাগ্য বদল করতে সক্ষম হয়েছেন। তাই প্রতিবছর সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে জমিতে ১২ থেকে ১৬ ইঞ্চি উঁচু বেড তৈরি করে বীজ বপন করেন চাষিরা। এক মাস পার হতেই এখন শিম গাছ ইতিমধ্যেই মাচায় উঠে ফুলে ফুলে ভরে গেছে। স্থানীয় জাতের শিম চাষে এখানকার কৃষকরা প্রতিবারই লাভবান হন।তাইতো শিমে’র পরিচর্যায় চাষিরা মহাব্যস্ত। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চাষিরা এখন শিমের ক্ষেতে পরিচর্যায় সময় পার করছেন। আর ২ সপ্তাহ পর বাজারে উঠবে পুরানগড়ের শিম। এমনটাই আশা করছেন কৃষকরা। গত রবিবার(১৮নভেম্বর) বিকালে সরেজমিনে পুরানগড় ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, ফুলে ফুলে ভরে গেছে শিমের ক্ষেত। পাতায় পঁচন রোধে ক্ষেতে কীটনাশক প্রয়োগ করছেন গ্রামের চাষি আমজাদ হোসেন। তিনি বলেন, ১ একর নিজস্ব জমিতে স্থানীয় জাতের শিম চাষ করেছি। এতে সর্বমোট খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকা।
থোকায় থোকায় ফুল দেখে আশা করছি প্রতি বছরের মতো এবারো শিমের বাম্পার ফলন হবে। ন্যায্য দাম পেলে আড়াই কানিতে শিম বিক্রি হবে ১ লাখ ২০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত। বৈতরণীর কৃষক আব্দুল খালেক জানান, গ্রামের শত শত চাষি স্থানীয় জাতের শিম চাষে ব্যাপক লাভবান হয়েছে। এখানকার কৃষকদের মাঝে শিম চাষে উৎসাহ বাড়ায় প্রতিবছর শিমের আবাদ বাড়ছে। বৈতরণীর আরেক কৃষক মোহাম্মদ হোছাইন জানান, লিজ নিয়ে ৪০ শতক জমিতে শিমের আবাদ করেছেন। খাজনা, সার ও কীটনাশকসহ ফসল বাজারে উঠা পর্যন্ত খরচ হবে ৫০ হাজার টাকা। আবহাওয়া অনুকূল পরিবেশ ভালো থাকলে ১ লাখ টাকার শিম বিক্রি হবে। এতে ৫০ হাজার টাকা আয় হবে তার। পুরানগড় বাজারে কথা হয় ইউ পি সদস্য মোহাম্মদ আমিনুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন পুরানগড় ইউনিয়নের উর্বর জমিতে চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেক কৃষক। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, সাতকানিয়ায় ৩৬০ হেক্টর জমিতে শিমের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র পুরানগড় ইউনিয়নে ৩০০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়েছে। সাতকানিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, শিম প্রোটিন সমৃদ্ধ একটি সবজি। এর বিচিও সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। তাই দেশে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এখানে জেলার সবচেয়ে বেশি শিমের চাষ হয়। প্রতিবছর শিমের আবাদ বাড়ছে। শিম চাষ করে লাভবান হচ্ছে কৃষকরা। তবে চাষিরা শিমে অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহার করেন, যা স্বাস্থ্যর জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ক্ষেতে কীটনাশক ব্যবহার কমিয়ে আনতে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।