নিজস্ব প্রতিবেদক: কুড়িগ্রামের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম মজিদা আদর্শ ডিগ্রি কলেজ। জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছয় জন শিক্ষকের শিক্ষক নিবন্ধন সনদ নিয়ে বিতর্ক ওঠার কয়েক মাস পর এবার জানা গেলো প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান গভর্নিং বডির সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলামের শিক্ষাগত যোগ্যতার ডিগ্রি পাস সনদটি ‘জাল’। এ নিয়ে কয়েকদিন ধরে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডিগ্রি পর্যায়ের এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সভাপতি হতে হলে শিক্ষাগত যোগ্যতা ডিগ্রি পাস হতে হবে। চলতি বছরের মে মাসে মজিদা আদর্শ ডিগ্রি কলেজের দুই বছর মেয়াদি গভর্নিং বডি গঠিত হয়। এতে সভাপতি নির্বাচিত হন সিরাজুল ইসলাম টুকু। এরপরই তার শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমালোচনা সৃষ্টি হয়। পরে একাধিক শিক্ষার্থী জেলা প্রশাসক ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগপত্রের প্রাপ্তি স্বীকারপত্রের কপি এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, গভর্নিং বডির সভাপতি নির্বাচিত হতে সিরাজুল ইসলাম নিজেকে ডিগ্রি পাস দাবি করে ১৯৭৫ সালের বিএসসি পাসের একটি সনদ দাখিল করেন। কিন্তু লিখিত অভিযোগকারীরা বলছেন, ওই সনদটি জাল। কারণ সিরাজুল ইসলাম টুকু ১৯৭৫ সালে কুড়িগ্রাম কলেজ থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বি.কম পরীক্ষায় অংশ নিয়ে অকৃতকার্য হয়েছিলেন। আর সেসময় কুড়িগ্রাম কলেজ সরকারি ঘোষণা হয়নি। অথচ সিরাজুল ইসলামের সনদে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে বিএসসি পাস করেছেন লেখা রয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিরাজুল ইসলাম বিএসসি পাসের সনদ দাখিল করলেও ১৯৭৫ সালে কুড়িগ্রাম কলেজ হতে বি.কম পরীক্ষায় অংশ নিয়ে অকৃতকার্য হয়েছেন। তার রোল নম্বর ১৪২৫০ এবং শিক্ষাবর্ষসহ নিবন্ধন নম্বর ১৫৬১৪/৭৪। বাবার নাম আব্দুল গফুর। এই রোল ও নিবন্ধন সংশ্লিষ্ট টেবুলেশন শিটের (নম্বরপত্র) একটি কপিও এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষ জানায়, কুড়িগ্রাম কলেজ ১৯৭৯ সালে সরকারি ঘোষণা হয়। ১৯৭৫ সালে কলেজ সরকারি ছিল না। অথচ সিরাজুল ইসলাম টুকুর দাখিলকৃত সনদে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে পাস করার কথা লেখা রয়েছে। কাজেই সনদটি জাল।
তবে নিজেকে বিএসসি উত্তীর্ণ দাবি করেছেন গভর্নিং বডির অভিযুক্ত সভাপতি সিরাজুল ইসলাম টুকু। সনদের স্বচ্ছতা নিয়ে তিনি বলেন, ‘সনদ সঠিক আছে।’
১৯৭৫ সালে কলেজ সরকারি না হলেও সনদে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ লেখা সম্পর্কে জানতে চাইলে সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে আপনার সঙ্গে সামনাসামনি কথা বলবো।’
কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুস সালাম বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে কোনও অভিযোগ পাইনি। গভর্নিং বডির সভাপতি হতে হলে ডিগ্রি পাস হতে হবে। আমি কিছুদিন আগে দায়িত্ব নিয়েছি। আগের অধ্যক্ষ কি করেছেন সেটা আমি জানি না।’
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কলেজ পরিদর্শক ফাহিমা সুলতানা বলেন, ‘সভাপতি হতে হলে শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যূনতম ডিগ্রি পাস হতে হবে। গভর্নিং বডির সভাপতির সনদ যদি জাল হয়ে থাকে তাহলে আমাদের অভিযোগ দিলে যাচাই করে দেখবো। সনদ জাল প্রমাণিত হলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো।’
প্রসঙ্গত, মাজিদা আদর্শ ডিগ্রি কলেজের ছয় শিক্ষকের শিক্ষক নিবন্ধন সদনের সঠিকতা নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে এক শিক্ষক চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। বাকি পাঁচ শিক্ষকের মধ্যে দুই শিক্ষক এমপিওভুক্ত। অপর তিন শিক্ষক অনার্স পর্যায়ে চাকরিরত এবং কলেজের অভ্যন্তরীণ আয় থেকে নিয়মিত মাসিক সম্মানী পান বলে কলেজ সূত্রে জানা গেছে।