যেকোনো যুদ্ধ-সংঘাত রাজনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হতে পারে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
সোমবার (২৮ নভেম্বর) সকালে ঢাকা সেনানিবাসের আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে ‘আন্তর্জাতিক ওমেন পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি সেমিনার ২০২২’ এ তিনি এ আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যুদ্ধ এবং সংঘাতের ক্ষতিটা বুঝি। সে জন্য আমি বিশ্ব নেতাদের আহ্বান জানাই, দয়া করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামান। যেকোনো দেশের যেকোনো সংঘাত সংলাপ, রাজনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হতে পারে। আমরা কোনো যুদ্ধ চাই না। আমরা চাই না কোনো মানুষ উদ্বাস্তু হোক। কারণ আমার সব অভিজ্ঞতা আছে।
এ সময় ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতির অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
নারীদের শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ক এ অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, যেকোনো সংঘাত ও দুর্যোগে তাদের দুর্দশা বহুগুণ বেড়ে যায়।
তিনি বলেন, এটা প্রশ্নাতীত, নারীরা সমাজের সবচেয়ে দুর্বল অংশ, বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে। তারা বিভিন্ন ধরনের সহিংসতা, অপুষ্টি, অশিক্ষা এবং অন্যান্য মৌলিক চাহিদার শিকার। যেকোনো সংঘাত ও দুর্যোগে তাদের দুর্দশা বহুগুণ বেড়ে যায়।
নারীদের শান্তি ও নিরাপত্তার সমস্যা সমাধানের জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে রেজুলেশন গ্রহণ করার প্রশংসা করে তিনি বলেন, জাতিসংঘ নারী শান্তি ও নিরাপত্তা অ্যাজেন্ডা প্রতিষ্ঠা করেছে। সেই রেজুলেশন প্রণয়নে অংশ নিতে পেরে বাংলাদেশ গর্বিত।
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে নারীদের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষমতায়ন না হলে সমাজে নারীর অবস্থার উন্নতি হতো না। আমার সরকার নারী নীতি ২০১১ প্রণয়ন করেছে। নীতির অধীনে, আমরা মূলধারার আর্থ-সামাজিক কর্মকাণ্ডে নারীদের সার্বিক উন্নয়ন এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এবং তাদের ক্ষমতায়নের সমস্ত প্রতিবন্ধকতা দূর করার ব্যবস্থা নিয়েছি।
তিনি বলেন, রাজনীতি, প্রশাসন, শিক্ষা, ব্যবসা, খেলাধুলা, সশস্ত্র বাহিনী ইত্যাদি খাতে নারীদের অংশগ্রহণ ও অবদান বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক দৃশ্যপটকে বদলে দিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীদের অধিকতর অংশগ্রহণের কারণে বাংলাদেশে জেন্ডার সমতা সব ক্ষেত্রেই উন্নত হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে লিঙ্গ সমতায় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।
নারীদের কল্যাণে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের রাষ্ট্র গঠনের শুরুতেই লিঙ্গ সমতার সারমর্মটি সঠিকভাবে চিহ্নিত করেছিলেন। সমান সুযোগ দানের মাধ্যমে নারীদের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা ছাড়া আমরা জাতীয় উন্নয়নের কাঙিক্ষত স্তরে নিয়ে যেতে পারব না।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় প্রণীত বাংলাদেশের সংবিধান নারীর সমঅধিকার নিশ্চিত করেছে। সংবিধানের ২৮(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে রাষ্ট্র শুধুমাত্র ধর্ম, জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ বা জন্মস্থানের ভিত্তিতে কোনো নাগরিকের প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করবে না। একই অনুচ্ছেদের (২) ধারায় বলা হয়েছে রাষ্ট্র ও জনজীবনের সর্বক্ষেত্রে নারীর পুরুষের সমান অধিকার থাকবে।