দেশে করোনা প্রাদুর্ভাবের সময় নানা বাধার সম্মুখীন হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, করোনকালে আমরা কেন আগাম প্রস্তুতি নেইনি সেটা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন করেছেন, সমালোচনা করেছেন। অথচ এটা ছিল সম্পূর্ণ নতুন, এ বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। আগাম প্রস্তুতি কি করে নেবো? করোনাকালে আমরা হাসপাতাল তৈরিতেও বাধা পেয়েছি। ভয়ে অনেক এলাকার লোকজন হাসপাতাল তৈরি করতে দিতে চায়নি।
মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) রাজধানীতে হোটেল রেডিসন ব্লুতে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সম্মুখযোদ্ধাদের সম্মানে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
বাংলাদেশ করোনাযুদ্ধে জয়লাভ করছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনাকালীন দিনগুলো আমরা ভুলিনি। আমাদের প্রস্তুতি ছিল না। আমরা ভেবেছিলাম করোনা আমাদের দেশে আসবে না। কিন্তু ২০২০ সালের মার্চ মাসে আমাদের দেশে প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। মৃত্যুর ঘটনাও একই মাসে ঘটে। আমরা মুক্তিযুদ্ধ অংশ নিতে পারিনি। কিন্তু করোনাকেই একটা যুদ্ধ হিসেবে নিয়েছি। এটাকে দেশের জন্য কিছু করার সুযোগ হিসেবে নিয়েছি। অনেকে আপনজন হারিয়েছেন। আমাদের সব থেকে আশার দিক ছিল চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট। তারা কেউ পিছপা হয়নি। সবাই তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেছে।
তিনি আরও বলেন, সরকারির পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা চালুর চেষ্টা করেছি। ভয় পেয়ে অনেকেই তখন চিকিৎসা দিতে রাজি ছিল না। কিন্তু সবশেষে সবাই এগিয়ে এসেছে।
করোনাকালে মন্ত্রণালয়ের কাজ তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা শূন্য হাতে করোনা মোকাবিলার কাজ শুরু করেছি। অল্প সময়ের মধ্যে করোনা চিকিৎসায় ২০ হাজার আলাদা বেড তৈরি করেছি, সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন স্থাপন করেছি। আমাদের মাত্র একটা ল্যাব ছিল, আর এখন পর্যায়ক্রমে সরকারি-বেসরকারি মিলে ৮০০ এর অধিক ল্যাব আছে। আমরা জনগণের জন্য ভ্যাকসিন নিশ্চিত করেছি। ফ্রন্টলাইনারদের আগে দিয়েছি, এরপর বয়স বিবেচনায় দিয়েছি। পর্যায়ক্রমে সবাই ভ্যাকসিনের আওতায় এনেছি। আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা নৌকা দিয়ে, পায়ে হেটে, পাহাড় চড়ে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে। আমরা একদিনে এক কোটি ২০ লাখ টিকা দিয়েছি।
নিজের নয় বছর দায়িত্ব পালনের তথ্য তুলে ধরে জাহিদ মালেক বলেন, এ সময়ের মধ্যে ১৫ হাজার চিকিৎসক, ২৫ হাজার নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আট বিভাগে হাসপাতাল তৈরির কাজ চলমান। অনেক হাসপাতালে ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করা হয়েছে। আমাদের চারটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ চলছে। আমাদের একটি ভ্যাকসিন প্লান্ট তৈরির কাজ চলমান আছে। ১০ বেড আইসিইউ ও ডায়ালাইসিস সেন্টার তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশিদ আলম বলেন, প্রতিটি কাজের সফলতায় একজন সফল নেতা প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষ হাতেই করোনাকালে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আগলে রেখেছেন। আর সব কাজেই প্রধানমন্ত্রীর ডান হাত হয়ে কাজ করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এমনও দিন গেছে ২০ বারের বেশি ফোনে কথা হয়েছে মন্ত্রীর সঙ্গে। তখন সবখানেই নাই আর নাই ছিল। সবকিছুর জন্য মন্ত্রীকে কল দিতাম। তিনি সব সময় সহযোগিতা করেছেন।