পরিবহন ও শ্রেণিকক্ষ সংকট এবং হল সংস্কারসহ ছয় দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা। সোমবার (২১ মার্চ ) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কলেজের মূল ফটকে বিক্ষোভ করেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, পরিবহন খাতে প্রত্যেক বছর আমরা পরিবহন ফি দেওয়া সত্ত্বেও কেন আমরা পরিবহন সেবা পাচ্ছি না তার জবাব চাই। পরিবহন ফি’র নামে কোটি টাকা কোথায় উধাও হলো, এর সুষ্ঠু তদন্ত চাই। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের একমাত্র আবাসিক হল জীর্ণশীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে, অথচ প্রশাসন এর কোনও সুষ্ঠু সমাধান করছেন না। তারা হলের দায়িত্ব নিতে নারাজ। হল মেরামত বাবদ এক লাখ টাকা বাজেট হলেও কোনও কাজই হয়নি। উল্টো আমাদের কাছে মেরামতের জন্য টাকা চেয়েছে কলেজ প্রশাসন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী মাহমুদ খান বলেন, গত ১০ বছরে আমাদের পরিবহন খাতে প্রায় ৯ কোটি টাকা জমা হওয়ার কথা। অথচ আমাদের বাস নেই। এসব টাকা যায় কোথায়? আমাদের ছাত্রাবাস সংস্কারে কলেজ প্রশাসনের কোনও উদ্যোগ নেই। মেয়েদের জন্য নেই কোনো আলাদা ওয়াশরুমের ব্যবস্থা। ক্যান্টিন বন্ধ। কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার কলেজে নানা উন্নয়নমূলক কাজ শুরু করেন। কিন্তু নতুন অধ্যক্ষ আসার পর তা বন্ধ হয়ে গেছে।
আরেক শিক্ষার্থী রাফি জানান, আমাদের হিসাববিজ্ঞান বিভাগে দেড় হাজার শিক্ষার্থী শিক্ষা সফর ফি দেয় ৭৫ হাজার টাকা। দুই বছরে প্রায় দেড় লাখ টাকা দেওয়া হয়। অথচ আমরা শিক্ষা সফরে যেতে চাইলে তারা আমাদের টাকা দিতে চায় না। হিসাব চাইলে অন্য কথা বলে। আমাদের জন্য তারা বরাদ্দ দেয় ২০০ টাকা। তাহলে বাকি টাকা যায় কোথায়?
জানা গেছে, কলেজের ওয়েবসাইটের তথ্যমতে ১৭ হাজার শিক্ষার্থীর কাছ থেকে পরিবহন ফি ৪০০ টাকা করে বছরে ৬৮ লাখ, ছাত্র সংসদ ফি ২৫ টাকা করে বছরে চার লাখ ২৫ হাজার, রেঞ্জার ফি ১০ টাকা করে এক লাখ ৭০ হাজার, রেড ক্রিসেন্ট ২০ টাকা করে তিন লাখ ৪০ হাজার টাকা আদায় করে কলেজ প্রশাসন। অথচ কলেজে নেই কোনও পরিবহন, রেড ক্রিসেন্ট, ছাত্র সংসদ। রেঞ্জার ইউনিট তো চালুই হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়ার আগে শিক্ষার্থী ছিল প্রায় ৩৩ হাজার। এক যুগেরও বেশি সময় কলেজে ছাত্র সংসদ নেই। সর্বশেষ ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছিল ২০০৮ সালে। ২০১৯ সালে ভাড়ায় দুটি বিআরটিসি বাস চালু হলেও ১০ মাস পর তা বন্ধ হয়ে যায়। রেঞ্জার ইউনিট তো কলেজে নেই। রেড ক্রিসেন্টের কার্যক্রমও বন্ধ। তাহলে এসব টাকা কোথায় যায়? গত ১০ বছর ধরে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া এসব টাকা দিয়ে কী করা হয়?
কলেজ বিএনসিসি’র এক সদস্য জানান, আমাদের কলেজে রেঞ্জার নেই। রেড ক্রিসেন্ট একবার চালু করার জন্য কলেজের ইসলাম শিক্ষা বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আকবর হোসাইনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি কাগজে-কলমে দায়িত্ব নিলেও কাজে তা এগোয়নি। কয়েক দিন পরেই রেড ক্রিসেন্টের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো—অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণ করতে হবে; শহীদ শামসুল আলম হল সংস্কার করতে হবে; ডাফরিন হলের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে হবে; প্রতিটি ভবনে মেয়েদের জন্য কমন রুমের ব্যবস্থা করতে হবে; কয়েকটি রুটে নিজস্ব পরিবহন চালু করতে হবে, ন্যূনতম পাঁচটি বাস দিতে হবে, ৯ কোটি টাকার বাস সার্ভিস চাই; শিগগিরই ক্যান্টিন চালু করতে হবে।
কবে কখন শিক্ষার্থীদের এমন যৌক্তিক দাবি গুলো মেনে নেওয়া হবে এমন প্রশ্নে কিছু বলতে রাজি হননি কবি নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আমেনা বেগম। ক্ষিপ্ত হয়ে দারোয়ান ডেকে সাংবাদিকদের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে রুম থেকে বের করে দিতে বলেন অধ্যক্ষ অধ্যাপক আমেনা বেগম।