যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বৃহস্পতিবার বলেছেন, সাংবাদিকদের প্রতি মিডিয়া মালিকদের দৃশ্যমান উদাসীনতা পেশাগত সাংবাদিকতায় অস্থিরতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইতোমধ্যে এসব সংবাদমাধ্যমের একটি নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশের গণমাধ্যম বিষয়ে একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকদের সংবেদনশীল হতে হবে কারণ তাদের জনগণের নাড়ি বোঝা দরকার, কিন্তু (মূলধারার) মিডিয়া আউটলেটের মালিকদের সংবাদকর্মীদের জন্য খুব বেশি সংবেদনশীল হতে দেখা যায় না।’
যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা অনুষদের শিক্ষক আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বাংলাদেশে মহামারি করোনাভাইরাস চলাকালে অনেক সাংবাদিককে ছাঁটাই করা হয়। এটা তাদের জীবনযাপনকে বিপদগ্রস্ত করে তোলে এবং দেখা যায় এমন অস্বাভাবিক পরিস্থিতি একটি পেশা হিসেবে সাংবাদিকতাকে অস্থির করে তুলবে।
তিনি বলেন, ডিজিটাল প্লাটফর্মে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মূলধারার সাংবাদিকতার জন্য আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। তিনি মিডিয়া অপারেটর এবং সাংবাদিকদের তাদের উদ্ভাবনী ও উপযোগীকরণ শক্তি দিয়ে এ বাস্তবতা মোকাবেলা করার পরমর্শ দেন।
সিনিয়র সাংবাদিক নাদিম কাদির ‘মিডিয়া: এ সাইলেন্ট ক্রাইসিস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই বই লিখেছেন। বইটিতে তার ও সহকর্মী সাংবাদিক এবং মিডিয়া বিশেষজ্ঞদের লেখা বিভিন্ন অধ্যায়ের পাশাপাশি এতে উদ্বোধনী অধ্যায় হিসেবে সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি নিবন্ধ রয়েছে।
সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক এম গোলাম রহমান, বিবিসি’র সাবেক সাংবাদিক ও গবেষক আফসান চৌধুরী, বার্তা সংস্থা ইউএনবি’র উপদেষ্টা সম্পাদক ফরিদ হোসেন, প্রবাসী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওমার সেলিম শের, মিডিয়া বিশ্লেষক ও সাবেক মেজর জেনারেল একেএম হুমায়ন কবির এবং বাসস’র ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুর রহমান এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
এ বইয়ের লেখকের পাশাপাশি সাবেক সাংবাদিক সায়েদ-উল-আলম অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন। তিনি বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের বিভিন্ন ইস্যু ও সমস্যা নিয়ে বিষয় ভিত্তিক প্রায় ৪০টি নিবন্ধ সংবলিত ২৩২ পৃষ্টার এ বই সম্পাদনা করেন।
অনুষ্ঠানে বেশির ভাগ বক্তরা বলেন, মহৎ পেশাদারি সাংবাদিকতা বজায় রাখার জন্য পাঠক ও দর্শকদের চাহিদা উপলব্ধি করে ডিজিটাল প্লাটফর্মে শক্তিশালী ও সক্রিয় উপস্থিতির মাধ্যমে মূলধারার সংবাদমাধ্যমকে অবশ্যই তাদের উপযোগিতার প্রমাণ দিতে হবে।
বক্তারা বলেন, মিডিয়ার মালিকরা সংঘবদ্ধভাবে তাদের গ্রুপের স্বার্থে পেশাদারি সাংবাদিকতার ক্ষতি করে মিডিয়াকে ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে। এদিকে নতুন প্রজন্ম মূলধারার সংবাদমাধ্যমের ব্যাপারে তাদের সার্বিক আগ্রহ হারাচ্ছে। ফলে এসব সংবাদমাধ্যমের উপযোগিতা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে পড়ছে।
কাদির বলেন, সাংবাদিকরা তাদের যুগান্তকারী প্রতিবেদনের জন্য প্রায় প্রশংসিত হলেও কখনো তারা ঝামেলায় পড়লে ‘আমরা আমাদের পাশে কাউকে খুঁজে পাই না।’
তিনি বলেন, ‘মিডিয়া পেশাদারিত্ব বজায় রাখতে সহায়তায় ক্ষেত্রে সাংবাদিক ইউনিয়ন কি করছে তা হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’
পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড এ বই প্রকাশ করে।বাসস