ঢাকায় স্বপ্নের মেট্রোরেলের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই মেট্রোরেল শেখ হাসিনা সরকারের ভাবমূর্তি বাড়াবে। বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল উদ্বোধনের পর এমনটাই বলছে প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ।
‘বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ শহর পেলো প্রথম মেট্রোরেল’ শিরোনামে ব্লুমবার্গ লিখেছে, বাংলাদেশের রাজধানীর এখন আছে মেট্রোরেলের প্রথম লাইন। জাপানের অর্থায়নে, বিশ্বের অন্যতম জনবহুল শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করার লক্ষ্যে এটি তৈরি করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোর একটি অংশ বুধবার উদ্বোধন করেন, যা লাইন ৬ নামে পরিচিত। এই লাইনটি ঢাকার উত্তর অংশের সঙ্গে মধ্যাংশের সরকারি অফিস ও এবং হাসপাতালগুলোর সঙ্গে সংযোগ তৈরি করেছে। পরবর্তীতে এটি শহরের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ দিকের বাণিজ্যিক বিভাগ মতিঝিলে যাবে।
এই প্রজেক্টটি ঢাকায় বসবাসরত মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থায় অনেক পরিবর্তন আনবে। সঙ্গে হাসিনার সরকারকে প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক ভাবমূর্তি বৃদ্ধি করবে। দেশটিতে ২০২৪ সালে সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। বর্তমানে হাসিনা ও তার দল রিজার্ভ কমে যাওয়া, মুদ্রাস্ফীতি এবং জ্বালানি সংকটের কারণে চাপে আছে।
ঢাকাবাসীর আকাঙ্খা মেট্রোরেলের উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এটি বাংলাদেশের উন্নয়নের নতুন মাইলফলক। এরপর ঢাকায় মেট্রোরেলের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেছে ব্লুমবার্গ।
বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনের তথ্য উল্লেখ করে ব্লমবার্গ লিখেছে, ৩০৫ স্কয়ার কিলোমিটারের শহর ঢাকায় ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষের বসবাস। ১০ বছর আগে ঢাকায় যানবাহনের গতি ছিলো ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার। সেখান থেকে এটি কমে এসেছে ৭ কিলোমিটারে। কমতে কমতে এটি ৪ কিলোমিটারে নেমে যেতে পারে। যা হাঁটার চেয়েও ধীরগতি।
ঢাকার মেট্রোরেল নিয়ে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়ার সাবেক প্রধান অর্থনীতিবীদ মার্টিন রমার দেওয়া একটি বক্তব্যের কথা উল্লেখ করেছে ব্লুমবার্গ।
মার্টিন রমা মেট্রোরেল নিয়ে বলেছিলেন, ঢাকার মতো একটি শহরের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উন্নয়ন। যদি আপনি ভারতের বিভিন্ন শহরের দিকে তাকান দেখবেন মানুষের কাজে যাওয়ার যোগাযোগ পথে অনেক পরিবর্তন এসেছে। মেট্রোরেল যোগাযোগের নিরাপদ একটি বাহন। বিশেষ করে নারীদের জন্য। দক্ষিণ এশিয়ায় যা গতানুগতিক না।
তবে রমা বলেছিলেন, মেট্রোরেলের কারণে ঢাকার যানজট এ মুহূর্তেই চলে যাবে এমনটি চিন্তা করলে এটি বোকামি হবে। কারণ কোনো যোগাযোগ স্থাপনা তৈরির পর রাস্তায় যানবাহন ও মানুষের যে চাপ কমে সেটি নতুন বাহনে আবারো ফিরে আসে।
এরপর বাংলাদেশে ট্রাফিক জ্যামের কথা উল্লেখ করেছে ব্লুমবার্গ। তারা জানিয়েছে, জ্যামের কারণে ঢাকায় প্রতিদিন নষ্ট হয় ৩২ লাখ ঘণ্টা (ওয়ার্কিং আওয়ার)। যার কারণে প্রতিদিন বাংলাদেশের কয়েক বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়। এছাড়া বিশ্বের অবসবাসযোগ্য শহরের মধ্যে ঢাকা যে সপ্তম শহর এটিও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।