আজ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ১০৯তম জন্মদিন। ১৯১৪ সালের এই দিনে ময়মনসিংহে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে তার শিল্পীমানস গড়ে ওঠে। তিনি বাঙালির শিল্পকলার ঐতিহ্য নির্মাণ ও আধুনিক চিত্রকলার পথিকৃৎ ব্যক্তিত্ব। তার অসাধারণ নেতৃত্ব গুণে ১৯৪৮ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে গড়ে তুলেছিলেন চারুকলা ইনস্টিটিউট। তিনি ছিলেন চারুকলা ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ, যা এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। সে সময় তার যুগান্তকারী পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশ আজ চিত্রকলায় এক অনন্য অবস্থান তৈরি করতে পেরেছে। শিল্পাচার্যের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পৃষ্ঠপোষকতায় ১৯৭৫ সালে ঐতিহাসিক সোনারগাঁওয়ে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা লাভ করে।১৯৩৩ সালে তিনি কলকাতা সরকারি আর্ট স্কুলে ভর্তি হন। এখানেই তার ইউরোপীয় ও আধুনিক চিত্রকলার সঙ্গে পরিচয় ঘটে। ১৯৩৮ সালে তিনি সর্বভারতীয় চিত্র প্রদর্শনীতে স্বর্ণপদক লাভ করেন। তার চিত্রকর্মে ফুটে উঠে বুভুক্ষু মানুষের আর্তনাদ এবং একই সঙ্গে প্রতিবাদী ভঙ্গি মূর্ত হয়ে উঠে। তার ‘সংগ্রাম’ ও দুর্ভিক্ষ সিরিজের চিত্রগুলো আজও মানুষকে শক্তি দেয়। দেয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবার সাহস। বাংলাদেশে চিত্রকলার আধুনিকতা ও প্রসারে, সাংস্কৃতিক অচলায়তন ভাঙতে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের সৃষ্টিকর্ম ও তার ব্যক্তিগত কর্মতৎপরতা যুগান্তকারী ভূমিকা রেখেছে।
এক বিরল শিল্পপ্রতিভার অধিকারী এই মানুষটি নিজস্ব শৈল্পিক দক্ষতার গুণে ছাত্রজীবনেই সর্বভারতীয় পর্যায়ে শিল্পী হিসেবে সুনাম অর্জন করেন এবং পরবর্তী কয়েক বছরে (১৯৩৯-৪৭) মুষ্টিমেয় আধুনিক ভারতীয় শিল্পীর নামের তালিকায় স্থান করে নেন। দেশবিভাগের পর ঢাকায় এসে তিনি এ অঞ্চলে শিল্প-শিক্ষালয়ের অভাব অনুভব করেন। তিনি আগ্রহী হয়ে ওঠেন আমাদের সমাজ থেকে রুচির দুর্ভিক্ষ দূর করতে, মানুষের মধ্যে সৌন্দর্যবোধ জাগ্রত করতে তা তার একার ছবি আঁকার মাধ্যমে সম্ভব ছিল না। এ কারণেই প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ব্যাপারে তিনি মনোনিবেশ করেন। আজ সারা বাংলাদেশে শিল্পচর্চার বিপুল কর্মযজ্ঞ প্রত্যক্ষ করে আমরা তার স্বপ্ন কীভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে তা উপলব্ধি করতে পারি। তার ছাত্রদের কিংবা পরবর্তী প্রজন্মের হাতে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বগুড়া ও নারায়ণগঞ্জে গড়ে উঠেছে শিল্পশিক্ষার প্রতিষ্ঠান। ঢাকার চারুকলা ইনস্টিটিউটেই তিনি গড়ে তুলেছিলেন শিশুদের জন্য চিত্রাঙ্কনের একটি বিদ্যালয়। আজ সারা দেশের শিশুদের মধ্যে চিত্রাঙ্কনের যে আগ্রহ ও সমারোহ আমরা লক্ষ করি, তার উত্সমূলে ঐ খুদে প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকার অনস্বীকার্য। এভাবেই সমগ্র জাতির মধ্যে তিনি শিল্পশিক্ষার যে বীজ বুনেছিলেন তা আজ মহিরুহে পরিণত হয়েছে।
তার জন্মদিন উপলক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নানা আয়োজন গ্রহণ করেছে।