মোঃ সুমন স্টাফ :
রিপোর্টার আদালতের নির্দেশে বান্দরবানে থানচি ও রুমা উপজেলার দুর্গম পাহাড়ে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কিয়ার এক জঙ্গির কবরস্থানে তার মরদেহ উত্তোলন করতে গিয়ে সেখানে তার মরদেহ পাওয়া যায়নি। তবে কবর দেওয়ার জায়গা থেকে সামান্য কিছু আলামত পাওয়া গেছেন, সেসব আলামত নিয়ে আসা হয়েছে বলে জানিয়েছেন, জেলার রুমা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মামুন শিবলী। ঘটনাস্থল থেকে ফিরে সোমবার (১৬জানুয়ারি) রুমা’র ইউএনও মামুন শিবলী বলেন, আদালতের স্পষ্ট আদেশ ছিল মরদেহ উঠাতে হবে। গ্রেফতারকৃত জঙ্গিরা কবরস্থান দেখিয়ে দেবে, তারা দেখিয়ে দিয়েছে। কবর খোড়া হয়েছে কিন্তু মরদেহ পাওয়া যায়নি। সেখানে সামান্য কিছু আলামত ছিল, এগুলো নিয়ে আসা হয়েছে। র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত ১১ জানুয়ারি (বুধবার) থানচি ও রোয়াংছড়ি থেকে র্যাবের অভিযানে আটক ৫ জঙ্গি তথ্য দিয়েছে, থানচির মিয়ানমার সীমান্তবর্তী রেমাক্রী প্রাংশা ইউনিয়নে একটি পাহাড়ি ঝিরির কাছে কুমিল্লার নুরুল ইসলামের ছেলে আল আমিন নামের এক জঙ্গিকে কবর দেওয়া হয়েছে। গত ২৫ নভেম্বর অসুস্থ হয়ে ওই জঙ্গি কেএনএফ-এর জর্ডান ক্যাম্পে মারা গেলে তাকে পাহাড়ি ঝিরির পাশে কবর দেওয়া হয়, সে জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কিয়ার সদস্য।
রুমা থানার ওসি মো. আলমগীর হোসেন জানান, দিন কয়েক আগে রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলা থেকে গ্রেফতারকৃত পাঁচ জঙ্গির কাছ থেকে রিমান্ডে পাওয়া তথ্যের সূত্র ধরে ‘খুনের’ এ তথ্য পাওয়া গেলে গত শুক্রবার দুপুরে পুলিশ ও র্যাবের একটি দল দুই জঙ্গিসহ রেমাক্রী প্রাংসা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দুর্গম লুয়ংমুয়াল পাড়া এলাকার পাহাড়ে যান। তারা সেখানে নিহত জঙ্গির কবরও শনাক্ত করে। পরে পুলিশ বিষয়টি আদালতকে অবহিত করে। র্যাব জানায়, গত রবিবার (১৫ জানুয়ারি) হেলিকপ্টারযোগে সেখানে লাশ উদ্ধারে অভিযান চালানো হয়। কিন্তু র্যাবের সদস্যরা পৌঁছার আগেই কবর থেকে লাশটি তুলে নিয়ে গেছে। তবে ওই কবরের ভেতর ও পাশে কিছু পোষাক ও সন্ত্রাসীদের অস্থায়ী ক্যাম্পের সরঞ্জাম পাওয়া গেছে, ওই আস্তানা থেকে ৫ রাউন্ড গুলিও উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযানের সময় গ্রেফতার জঙ্গি কুমিল্লার সালেহ আহমদ ও শিথিলকে সঙ্গে নিয়ে কবরে লাশের সন্ধানে অভিযানে নামে র্যাব। কবর খোঁড়ার সময় উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, র্যাব ও সেনা সদস্যসহ মোট বিশজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন, লাশ না পেয়ে তারা ফিরে আসে। বান্দরবানের থানচিতে জঙ্গির কবরে লাশের সন্ধানে র্যাব ও অন্যরা।
এ বিষয়ে র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, এক জঙ্গির লাশ দুর্গম এলাকায় কবর দেওয়া হয়েছে এ তথ্যের ভিত্তিতেই সেখানে অভিযান চালানো হলেও কবর থেকে কে বা কারা লাশটি নিয়ে গেছে তা স্পষ্ট নয়। অভিযানের খবর পাওয়ার আগেই হয়তো লাশ কেউ নিয়ে গেছে। গত ২০ অক্টোবর বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সুরা সদস্যসহ ৭জন জঙ্গী এবং কুকি চিন এর ৩ জনসহ মোট ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। এসময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমান অস্ত্র ও সরাঞ্জম উদ্ধার করা হয়। গত ৭ ও ৮ জানুয়ারি নাইক্ষ্যংছড়ির দুর্গম এলাকা থেকে জামাআতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকীয়া’র গ্রুপের (জঙ্গি) কাছে অস্ত্র সরবরাহর অভিযোগে অস্ত্রসহ তাদের ৩ সহযোগিকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) এবং ১২ জানুয়ারি থানচি ও রোয়াংছড়ির দূর্গম এলাকায় অভিযান চালিয়ে জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার ৫জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। প্রসঙ্গত, বান্দরবানের সীমান্ত এলাকায় জঙ্গী সংগঠন ও কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এর বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর যৌথ অভিযানের কারনে গত ১৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া পর্যটক যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলেও এখনও জেলার থানচি, রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলায় অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা জারি আছে।